somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ: “Jalal’s Story-জালালের গল্প”-একটি অসাধারণ সিনেমার অভিজ্ঞতা!!

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
শ্যামলী ডিজিটাল সিনেমা হলে দেখে আসলাম “Jalal’s Story-জালালের গল্প”, সত্যিকার অর্থে ট্রেইলার দেখার পর থেকেই সিনেমাটি নিয়ে খুব এক্সসাইটেড ছিলাম এবং পরিশেষে সিনেমাটি আমাকে হতাশ করেনি। দিনশেষে একটি অসাধারণ সিনেমার অভিজ্ঞতা হল।


সিনেমার মুল বিষয় গ্রাম বাংলার কুসংস্কার ও গ্রামের মানুষের বাস্তবিক জীবনের কিছু গল্প কে কেন্দ্র করে।
সিনেমাটিতে আমাদের গ্রাম-বাংলার চিরচারিত কিছু কুসংস্কার গুলো কে হিউমার এর মাধ্যমে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
“জালালের গল্প” সিনেমাতে তিনটি ভিন্ন গল্প কে একই সুতই গাঁথা হয়েছে অথবা বলা যায় তিনটি গল্প একই বৃত্তে সাজানো হয়েছে। তিনটি গল্প যথাক্রমেঃ
গল্প একঃ নদীর পাড়ে পরিবার নিয়ে বসবাসকারী মিরাজ মিয়া (নূরে আলম নয়ন) একদিন নদীতে গোসল করতে গিয়ে দেখে পাতিল ভেসে আছে। প্রথমে মিরাজ এটাকে ড্যাগ(পাতিল) ভাবে, এই “ড্যাগ” বিষয়টা যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি, গ্রামে এক প্রকার কুসংস্কার আছে যে অনেক বছর আগে রাজা-বাদশারা তাদের স্বর্ণ-অলংকার এই পাতিলে রেখে গেছেন যা প্রায় পুকুর অথবা নদীতে ভেসে ঊঠে এবং অনেক সময় প্রাননাশকও হয়, শুধু মাত্র ভাগ্যবান মানুষই এটার সুবিধা ভোগ করতে পারেন। তো যা বলছিলাম,মিরাজ প্রথমে ড্যাগ ভাবলেও পরে গ্রামবাসীকে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখে পাতিলের ভিতর একটি নবজাতক শিশু। মিরাজ মিয়া শিশুটিকে লালন পালন করতে থাকে এবং নাম রাখে জালাল। পরবর্তীতে এই শিশুকে নিয়েই গড়ে উঠে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা।


গল্প দুইঃ গ্রামের প্রভাবশালী করিম (তৌকীর আহমেদ) পরপর দুই বিয়ের পরও কোনো সন্তান হচ্ছেনা,এই নিয়ে গ্রামের মানুষ তাকে বিভিন্ন ভাবে বিরোধিতা করছে, তাই সে তৃতীয় বিবাহ করে কিন্তু তৃতীয় স্ত্রীরও যখন সন্তান হচ্ছিলো না তখন করীম এক কবিরাজ/উঝার শরণাপন্ন হয়। তারপর শুরু হয় এই কবিরাজের বিভিন্ন ভণ্ডামি ও অমানবিক কাজকর্ম। প্রসঙ্গক্রমে,করিমের নিজের সন্তান না থাকলেও জালাল নামে ১১/১২ বছরের লালিত সন্তান ছিলো।


গল্প তিনঃ সজীব (মোশাররফ করিম) এলাকার মাস্তান, সে বিভিন্ন ভাবে এলাকায় পাশবিক,হিংস্র ও ঘৃণিত কাজকর্ম করতে থাকে। তার সাথে বসবাস করে ২০/২১ বছরের যুবক জালাল যাকে কিনা সে নিজের সন্তানের চোখে দেখে। সজীব জালাল ও অন্যান্যদের সহকারীদের সহযোগিতায় “শীলা” নামে একটি মেয়েকে কিডনেপ করে আনে এবং তার উপর জোর-জবস্তি করতে থাকে। তারপর গল্প এগোতে থাকে।


এই তিনটি গল্পের মুল কেন্দ্রবিন্দু “জালাল” যাকে নিয়েই সিনেমার গল্প সাজানো হয়েছে। ব্যাক্তিগত ভাবে সিনেমাটি বেশি ভাল লাগার কারন হচ্ছে আমি গ্রামে বড় হয়েছি। তাই সিনেমার প্রতিটি ঘটনা ও দৃশ্য মনে হচ্ছিলো আমার চোখের সামনে ঘটছে। গ্রামাঞ্চলে ড্যাগ ভাসা,বহুবিবাহ,বন্ধ্যত্ব সমস্যার প্রভাব,কবিরাজি চিকিৎসা ইত্যাদি ঘটনা গুলো অহরহ ঘটছে। পরিচালক আবু শাহেদ ইমন তার প্রথম ছবিতেই বাজীমাত করেছেন। পুরো সিনেমাতে হাস্যরসাত্মক দৃশ্যর পাশাপাশি এমন কিছু দৃশ্য রয়েছে যা আপনাকে ভাবাবে ও আবেগপ্রবণ করবে। স্ক্রিপ্ট যেহেতু পরিচালকের নিজের, এই দিকে থেকে সে প্রশংসা পেতেই পারে, আশা করি তার কাছ থেকে ভবিষ্যতে আরো ভালো কাজ পাবো।

অভিনয় প্রসঙ্গে বলতে গেলে প্রথমেই তিন ব্যাক্তির কথা বলবো, মোশাররফ করিম,তৌকীর আহমেদ এবং নূরে আলম নয়ন। মোশাররফ করিমের প্রতি যা এক্সপেকটেশন ছিল তা সে ভাল ভাবেই পূরন করেছেন। তার এক্সপ্রেশন,ডায়লগ ডেলিভারী দর্শকদের অনেক আনন্দ দিয়েছেন যার প্রমান পেয়েছি হলে দর্শকদের আচরনের মাধ্যমে। তৌকীর আহমেদ তার গম্ভীর চরিত্রে জাস্ট অসাধারন ছিলেন, এই চরিত্রে তাকে বেশ মানিয়েছে এবং শেষে নূরে আলম নয়ন, তার অভিনয় সম্পর্কে একটা কথায় বলবো, একজন খাঁটি গ্রামের সাধারন মানুষের চরিত্রে এতো ভালো অভিনয় করেছে যে তাকে আগে কোন নাটকে অথবা বিজ্ঞাপনে না দেখে থাকলে মনে হবে গ্রামের স্থানীয় কাও কে দিয়ে অভিনয় করানো হয়েছে। তাছাড়া মৌসুমী হামিদ, বালক ও যুবক জালাল চরিত্রে আরাফাত ও ইমন এবং মা চরিত্রে শর্মীমালাও দারুন অভিনয় করছেন। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলো চিরকুট,যার দরুণ বারবার “টেলিভিশন” সিনেমার কথা মনে পরছিল।
সিনেমার লোকেশন দারুন ছিল, একদম খাঁটি গ্রাম-বাংলার দৃশ্য বলতে যা বুঝায়। গ্রামের খুব সুন্দর দৃশ্যগুলো দেখানো হয়েছে সিনেমাতে। একদম চোখের আরাম যাকে বলে।


সিনেমার নেগেটিভ দিক বলতে,দ্বিতীয় গল্পে কবিরাজ/উঝার কাজকর্ম প্রথম দিকে একটু ভালো লাগলেও পরে লেইম ও বিরক্তিকর লাগছিলো। তাছাড়া সিনেমার কিছু সিকুয়েন্সে আঞ্চলিক ভাষার বদলে মার্জিত ভাষার ব্যাবহার দেখা গেছে যা সিনেমার গল্পের সাথে বেমানান লেগেছে। যাক দিনশেষে সিনেমা ভালো লাগাটায় মুখ্য।

সুতরাং হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখতে পারেন, আশা করি আপনার অর্থ ও সময়ের অপচয় হবেনা। আর এমনিতেই গতকাল হলে দর্শক পরিপূর্ণ ছিল এবং হলের পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে সবাই সিনেমাটি উপভোগ করেছেন। বাকিটা আপনার সিদ্ধান্ত।

ট্রিভিয়াঃ
◆‘জালালের পিতাগণ’ নামে সিনেমার শুটিং শুরু করলেও পরে গল্পের প্রয়োজনে সিনেমার নাম পরিবর্তন করে “জালালের গল্প” রাখেন।
◆জালালের গল্প ছবির জন্য মোট ৫৫ দিন শ্যুটিং করা হয়।
◆সিনেমাটির বাজেটঃ ৫৫ লক্ষ টাকা
◆সিনেমার পরিচালক আবু শাহেদ ইমন এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের জয়পুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা নবাগত পরিচালক হিসেবে পুরষ্কার পেয়েছেন।
◆সিনেমাটি পর্তুগালে আয়োজিত ১৯তম আভাঙ্কা চলচ্চিত্র উৎসবে “সেরা চলচ্চিত্র” ও মোশাররফ করিম ‘সেরা অভিনেতা’ ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার পেয়েছেন।
◆‘জালালের গল্প’ সিনেমাটিকে বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সালের এশিয়ান সিনেমা ফান্ডের পোস্ট প্রোডাকশন ক্যাটাগরিতে নির্বাচন করেছে। এশিয়ার ৫২টি দেশ থেকে ৫৬৫টি আবেদন করা হয়। যেখান থেকে মোট ২৯টি প্রকল্প নির্বাচিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি এশীয় এবং ১১টি কোরীয় প্রকল্প।
◆২০১৩ সালে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম তাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বুটিক সিনেমার কার্যক্রম শুরু করে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির প্রথম সিনেমা ‘জালালের গল্প"
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১২
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×