somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হজ্জের বিধি-বিধান ও কার্যাবলী - শেষ

৩১ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্বের পর..............

৮ ই জ্বিলহজ্জের ( তারবিয়ার দিনের ) করনীয় কাজসমূহ:

১. সূর্য ঢলার পূর্বে গোসল করে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করা। (ইহরামের কাপড়ে সুগন্ধ ব্যবহার থেকে সাবধান থাকতে হবে।)
২. ইহরামের কাপড় পরিধান করা।
৩. লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা বলে হজ্জের নিয়্যত করা।
৪. তালবিয়া পাঠ করা "লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা লাব্বাইকা লা-শারীকা লাব্বাইকা, ইন্নাল হা'মদ অননি'য়ামতা লাকা অল মুলকা, লা-শারীকা লাকা।"
৫. মিনায় অবস্থান কালীন ( জামা ) একত্র করণ ব্যাতিরেকে ও যে যে ওয়াক্তের নামায সে সে ওয়াক্তে কছর করে পড়া। চার রাকাত বিশিষ্ট নামায কছর করে দু'রাকাত পড়া।
৬. ইহরাম বিনষ্টকারী নিষিব্ধ বিষয়াদী ( মাহজুরাতে ইহরাম ) থেকে বিরত থাকা ।
৭. সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পূর্বেই মিনার উদ্দেশ্যে যাওয়া সুন্নত।

৯ ই জ্বিলহজ্জের ( আ'রাফাতের দিনের ) করনীয় কাজসমূহ:

১. ফজর নামাজের পর আরাফাত ময়দানের উদ্দেশ্যে গমন এবং তথায় জোহরের পূর্বে অবস্থান গ্রহন করা।
২. তওবা- ইস্তেগফার, জিকর-আজকার এবং দোয়া ও প্রার্থনায় পূর্ণ বিনয়-নম্রতা, একাগ্রচিত্ততা, ভয়-ভীতি ও পরম ভালবাসা ও আকাঙ্খা নিয়ে দোয়ায় লিপ্ত থাকা।
৩. ( লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু অ'হদাহু লা-শারীকা লাহু লাহু লমুলকু অ লাহুল হা'মদু অহুয়া আ'লা কুল্লি শাই'য়িন কাদীর ) পবিত্র সাক্ষ্য বাক্যটির জিকর খুব বেশী বেশী করা।
৪. জোহর ওয়াক্তে এক আযান এবং দুই একামতে জোহর এবং আছরের নামায জমা তাকদীম করা এবং কছর পড়া, যাতে করে অবস্থান ও দোয়ায় জন্য দীর্ঘ সময় পাওয়া যায়।
৫. সূর্যাস্তের পর মুযদালিফার উদ্দেশ্যে পূর্ণ গাম্ভির্য, নিরবতা ও প্রশান্তির সাথে গমন করা।
৬. মুযদালিফায় পৌঁছে মাগরিব এবং এশার নামায এক আজান এবং দুই একামতে কছর করে পড়া।
৭. ফজর নামায বাদ হাজী সাহেবানগন মুযদালিফা হতে মিনা বা মক্কার দিকে গমন করবেন, প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দুর্বল ব্যক্তি এবং তাদের সাথীদের অর্ধ রাতের পর মুযদালিফা ত্যাগ করে মিনা বা মক্কার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যাওয়া জায়েজ এবং বৈধ।
৮. রামীর জন্য মুযদালিফা থেকে চানাবুট হতে বড় ৭ টি নুড়ি পাথর সংগ্রহ করা, রামীর জন্য কোন বীজ, বিচি বা আঁটি হতে পারবে না। ( পানি দ্বারা পাথর গুলো ধুয়ে সাফ করে নেওয়া নিঃসন্দেহে একটি বেদআতী কাজ )।

১০ ই জ্বিলহজ্জের ( ইয়াওমুন্নাহারে ) করণীয় কাজসমূহ:

জামরাতুল আকাবা পৌঁছা পর্যন্ত হাজী সাহেবাগন অনবরত: তালবিয়া পড়তে থাকবেন এবং প্রথম পাথরটি নিক্ষেপের সাথে তালবিয়া বন্ধ করবেন।
১. ১০ ই জ্বিল হজ্জ কোরবানীর দিন জামরাতুল আকাবাতে শুধু মাত্র সাতটি পাথর মারা। প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপের সময় আল্লাহ আকবার বলতে হবে।
২. হজ্জে তামাত্তু' এবং কারেনকারীদের কোরবানী দেওয়া ওয়াজিব।
৩. মাথা মুন্ডন অথবা চুল ছাঁটা।
৪. হজ্জে তামাত্তু'কারী ত্বাওয়াফে ইফাদার ( তাওয়াফে যিয়ারাহ বা ফরজ) সাথে সাফা এবং মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানে দৌঁড়াবেন, এমনি প্রকার হজ্জ কেরাণ এবং ইফরাদকারীদ্বয় যারা ত্বাওয়াফে ক্বুদুমে দৌঁড়াননি তাদেরকে এখন দৌঁড়াতে হবে।
৫. মিনায় রাত কাটানো বাধ্যতামূলক ( সব কাজ শেষে রাতের কিছু অংশ মিনাতে অবস্থান করলেও চলবে)।

জ্বিলহজ্জের ১১, ১২, ১৩ (তাশরীকের দিনগুলোতে ) করণীয় কাজসমূহ:

১. মিনায় ১৩ তারিখ পর্যন্ত অবস্থান করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু যারা দ্রুত নিস্ক্রান্ত হতে চান তাদেরকে ১২ তারিখ পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করতেই হবে এবং ১২ তারিখ তিনটি জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করে সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই মিনা পরিত্যাগ করতে হবে; অন্যথায় সূর্যাস্ত হয়ে গেলে মিনাতেই ১৩ তারিখ পর্যন্ত থাকতে হবে।
২. জোহর সামাজের পর ( সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পর ) কংকর নিক্ষেপ করা সুন্নত। সর্ব প্রথম (জামরাতু ছোগরা) ছোটটিতে তারপর ( জামরাতুল উস্তা) মধ্যমটিতে সর্বশেষ ( জামরাতুল কুববা) বড়টিতে কংকর নিক্ষেপ করতে হবে।
৩. মক্কা মোকাররমা ত্যাগ করার পূর্বে ত্বাওয়াফুল বিদা ( বিদায়ী ত্বাওয়াফ সাত চক্কর ) করা ওয়াজিব। তাওয়াফুল বিদা - বিদায়ী তাওয়াফে সায়ী নেই। আল্লাহুম্মা জায়াল লানা হাজ্জান মাবরুরান, ওয়া সায়ীআনমাশকূরান, ওয়া তিজারাতান লানতাবূর । আলহামদু লিল্লাহিল্লাজী বি নিমাতিহীতাতিস্মুস সালিহাত।

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ ( হারাম ) কাজসমূহ:

১. চুল, দাড়ি ও পশম ইত্যাদি কাটা অথবা উপড়ানো ও ছেড়া।
২. নখ কাটা অথবা ভাঙ্গা।
৩. ইহরামকারী পুরুষের কিছু দ্বারা মাথা ঢাকা।
৪. পুরুষের সিলাইকৃত কাপড় পরা।
৫. সুগন্ধি ব্যবহার করা, অথবা জেনে বুঝে ঘ্রান নেওয়া, সুগন্ধযুক্ত খাবার খাওয়া ও সুগন্ধি সাবান ইত্যাদি ব্যবহার।
৬. মহিলাদের হাত মোজা ব্যবহার এবং মুখমন্ডল নেকাব দ্বারা ঢেকে রাখা।
৭. শিকার হত্যা করা।
৮. স্ত্রী সহবাস করা।
৯. স্ত্রীকে আলিঙ্গন করা এবং চুমো খাওয়া।
১০. বিয়ে শাদী করা।
১১. ঝগড়া বিবাদ এবং অশ্লীল গালিগালাজ করা।

নিষিদ্ধ কাজসমূহের যে কোন একটি সংগঠিত হলে তার কাফফারা প্রাশ্চিত্য:

১. নিষিদ্ধ কাজসমূহের ( ১ হতে ৬ নং পর্যন্ত সংখ্যার মধ্য থেকে যে কেউ ভুলবশতঃ বা অজানাসত্বে করে বসবে তার উপর কোন কাফফারা বা শাস্তি নেই, কেউ ইচ্ছাকৃত করলে কাফফারা দিতেই হবে। ( তিন দিন রোজা রাখবে, ৬ জন মিসকিন খাওয়াবে অথবা ছাগল জবেহ করে তার গোস্ত হারাম এলাকার গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দিবে) এ তিন প্রকার কাফফারা প্রাশ্চিত্যের যে কোন এক প্রকার নির্বাচন করে কাফফারা আদায় করায় কাফফারাকারী স্বাধীন।
২. যে প্রকার পশু শিকার করে মারবে সেই প্রকার পশু কাফফারা দিতে হবে।
৩. স্ত্রীকে আলিঙ্গন এবং চুমো খেলে বীর্যপাত হলে একটি উট, বীর্যপাত না হলে একটি বকরী কাফফারা দিতে হবে।
৪. তাহাল্লাল আউয়ালের পূর্বে স্ত্রী সহবাস করলে হজ্জ ভঙ্গ ও নষ্ট হয়ে যাবে এর শাস্তি হিসাবে একটি উট কাফফারা দিতে হবে এবং পরবর্তীতে পূনঃরায় হজ্জ আদায় করে ফরযীয়ত মুক্ত হতে হবে।

অনুবাদ: আবু জাফর মুহাম্মাদ
ত্বোয়াহা। আল-খোবার, সৌদি আরব।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:৪৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×