"প্রেম মেয়েদের কাছে একটা প্রয়োজন, সেটা আটপৌরে শাড়ীর মতো নিতান্তই সাধারণ। তাতে না আছে উল্লাস, না আছে বিস্ময়, না আছে উচ্ছলতা"- কথাগুলো 'যাযাবর' ছদ্মনামে বিনয় মুখোপাধ্যায় লিখে গিযেছিলেন "দৃষ্টিপাত" উপন্যাসে। যদি তিনি বেঁচে থাকতেন এবং পরিচিত হতেন আজকের "নুর নাহারের" সাথে তাহলে এই লাইন দুটো কেটে দিতেন্। আজকের নুর নাহারের কাছে প্রেম এক অনিবার্য ঐশ্বর্য, যার জন্য সব কিছু ত্যাগ করেছিলেন। প্রেম আসলে অন্ধ। প্রেমে পড়লে মানুষ সত্যিই অন্ধ হয়ে যায়। প্রেমের কারনে মানুষ অতি সহজেই আপন জনকে ভুলে যায়। এমনকি জন্মদাতা পিতা মাতাকেও। প্রেম অনেক সময় মানুষকে হিতাহিত ঞ্জান শূন্য করে তুলে। প্রেমের কারনেই মানুষ বিবেক বুদ্ধিহীন আচরন করে। প্রেমের কারনে মুহুর্তে মা-বাবার গভীর সম্পর্ককে ভুলে যেতেও কুন্ঠাবোধ করে না। তারই বাস্তব উদাহরন আজকের নুর নাহার। স্বল্প শিক্ষিত একটি গ্রাম্য মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম । বাবা প্রবাসী ছোট বেলা থেকেই মায়ের আদর যত্মে বেড়ে উঠে। বাবার খুব আদরের ছিল। মেয়ের কোন চাহিদাই অপূর্ণ রাখেনি কখনো। বাবা মধ্যবিত্ত পরিবারের হলেও চাকুরীর সুবাদে তার উঠা বসা ছিল উচ্চবিত্ত সমাজে। মেয়েটিও ছিল মেধাবী। বাবা- মায়ের স্বপ্নছিল মেয়েকে ডাঃ বানানোর। সে লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌছেও গিয়েছিল।এস.এস.সি পাশ করার পর ভর্তি করা হয়েছিল উচ্চবিত্ত শ্রেনীর কলেজ উত্তরা উইমেন্স কলেজে।সেখান থেকে এইচ.এস.সি পাশ করার পর ভর্তি করা হয় মেডিক্যাল কোচিং এ কিন্ত আচমকা জড়ো হাওয়ার তার সমস্ত স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। দুঃসময় যখন আসে তখন ঝাঁক বেঁধে আসে। কিন্ত ঝাঁক বেঁধে আসতে থাকলেও তো সীমা থাকে সব কিছুরই। কিন্ত সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া দুঃসময় তার উপর ভারী ভারী পাথরের মত পড়তে থাকে। চুড়ান্ত দুঃসময়টি আসে যখন শোনে তার স্বপ্নের ফসল, আদরের ধন, নয়নের মনি হিন্দু ধর্মের একটি নেশাখোর সন্ত্রাসী ছেলের সাথে বাড়ী থেকে বেড়িয়ে গিয়ে তাকে বিয়ে করে ফেলেছে । যে মেয়ে শখ করে নিজের এমন সর্বনাশ করেছে, আমরা কি ই বা করতে পারি তার জন্য, কিছুই না। সেতো স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। ভালো মন্দ বিচার বোধ নিশ্চয়ই তার ছিল। তারপরও অনিশ্চিত জীবনের দিকেই সে পা বাড়িয়েছে।কিন্ত কি পেয়েছে এ অসম ঐশ্বর্য ময় প্রেম থেকে? বেদনা লাঞ্জনা গঞ্জনা সহ আরো অনেক কিছূ যা হয়তো তার জীবনে অবধারিত ছিল না। বাবা প্রায় সময়ই মেয়েকে বলতেন, তুমি যখন একা থাক, তখন তুমি যার তার সঙ্গে মিশো আমার অসুবিধা নেই। কিন্ত সে যেন তোমার সমবয়সী, সমশ্রেণীর হয়। তোমার সামাজিক অবস্থান তোমার চলার সঙ্গিটির সামাজিক অবস্থান যেন এক হয় তাতে আমার কোন আপত্তি থাকবে না। কিন্ত সে এখন যার হাত ধরে বেরিয়ে গেছে তাকে কি ভাবে মেনে নেব। তাই বারবার তাকে ফিরে আসতে বলা হয়। সে ফিরে না আসার ব্যাপারে অটল থাকে। খেয়ে না খেয়ে স্বামী নামক অপদার্থ মানুষটাকে নিয়েই কাটিয়ে দিতে চায় ভবিষ্যতের দিন গুলি কিন্ত সীমাহীন অর্থকষ্টে স্বামী নুরনাহারকে না বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায় এবং তার ব্যবহৃত মোবাইলটিও বন্ধ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত স্বপ্নভঙ্গের এক বুক বেদনা, না পাওয়ার সীমাহীন কষ্ট ও হতাশা সাথে কিছুটা ঘৃনা মিশ্রিত অভিমান নিয়ে বাড়ীতে ফিরতে মনস্থির করে বাড়ীতে ফিরে আসে। এখন সম্পূর্ণ পরিজনহীন অরস্থায় নিভৃতচারিনী হয়ে একা দিন কাটাচ্ছে। তারপর ও তাকে ভুলতে পারে না।
চলবে...............