প্রথম পর্ব Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব
Click This Link
ভালবাসা একটা বাগান আর চার পাশের দেওয়ালটার নাম বিয়ে।কিন্ত বাগান শুধু ফুলের হবে কেন? ঘাসেরও তো হতে পারে।দিগন্ত ছোঁয়া ঘাসের মাঠ,কোনো দেওয়াল নেই। এটা কেউ ভাবতে পারে না কেন? এস.এস.সি পরীক্ষার পূর্বেও এলাকার একটি প্রভাবশালী পরিবারের ছেলের প্রেমে পড়েছিল নুর নাহার। পারিবারিক বাধা,ছেলের পরিবারের সাথে জমি সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে বিরোধের কারনে শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল।শেষ পর্যন্ত ঐ ছেলেকে দেশ ছাড়াও করা হয়। তারপরও রেকর্ড পরিমান নম্বর পেয়ে এস.এস.সি পাশ করে।তার কথা বার্তা,আচার আচরন এ বিপুল আত্মনির্ভরতা দেখা দেয়। তাই তাকে প্রচুর টাকা খরচ করে উচ্চবিত্ত শ্রেনীর কলেজে ভর্তি করা হয়।কড়া নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ হযে কলেজের প্রথম বছর ভালই কাটে। প্রথম বর্ষের ফলাফলও আশানুরুপ। প্রবাসী বাবা ফলাফলে প্রচুর খুশী।সেই খুশিতে মেয়ের সমস্ত চাহিদা পূরনে সর্বদা ব্যস্ত বাবা।দ্বিতীয বর্ষে আসার পর নুরনাহারের ভিতর কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। বাড়ীতে আসলে সর্বক্ষন মোবাইলে কথা বলা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায়। এতে মায়ের সন্দেহ বাড়তে থাকে মেয়ের প্রতি। কিন্ত মেধাবী মেয়ে কিছুতেই বুঝতে দেয় না তার সুপ্ত মনের ভাবনা। পারিবারিক কারনে চাচারাও নুরনাহারের প্রতি ততটা যত্মশীল ছিল না। তাছাড়া নুরনাহারের মায়ের একঘুয়েমী আচরন অনেকটা আত্মীয় স্বজন থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। কিন্ত তিনি আগে এমন ছিলেন না। আগে তিনি তার নিজস্ব বলয়ের পরিচিত জনদের কাছে জিঞ্জেস না করে কোন কাজ করত না। যে কোন কাজ করার পূর্বে আমাদের কাছে জিঞ্জেস করত।বলতে গেলে আমাদের রাজনৈতিক অফিস ছিল তার বাড়ী।কিন্ত প্রবাসী স্বামীর পাঠানো অঢেল টাকা তাকে অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক আত্মঅহংকারী করে তুলে। নিজকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়ে তার এক সময়ের শুভাকাংখীদের এড়িযে চলতে থাকে। তারই সুয়োগ নেয় নুরনাহার। জুরাইনে বাড়ী করার সময় নুরনাহারের চাচাত মামাদের সাথে প্রায়ই জুরাইনের বাড়ীতে আসত ছেলেটি। সেখান থেকেই হয়তো পরিচয়।দ্বিতীয় বর্ষে এসে মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমেই তাদের সম্পর্কটা আরো গাঢ় হয। নুরনাহারের আচরনেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সেটা আরো ঘনিভূত হয় এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরও ঢাকায় অবস্থানের কারনে। পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলে সেটা আরো পরিস্কার হয় আশানুরুপ ফলাফল না হওয়ায়। তারপরও বাবার আদরের মেয়ে বলে কথা। মেয়ের ইচ্ছায় ছাত্রী হোস্টেলে রাখার শর্তে ভর্তি করা হয় মেডিক্যাল কোচিং এ । কিন্ত সুচতুর মেয়ে কিছু দিন যেতে না যেতেই বাবার কাছে বায়না ধরে হোষ্টেলে থাকতে তার অসুবিধা হয।খাওয়ার, পড়ার অসুবিধার কথ বলে আলাদা বাসা ভাড়া করে দিতে বলে। বাবা মেয়ের প্রতি অতি মাত্রায় অন্ধ আবেগ এবং ভালবাসায় আলাদা বাসা ভাড়া করে দেয়। আলাদা বাসার সুবাদে ঐ বাসায় ছেলের যাতায়েত বাড়তে থাকে। একা বাসায় থাকার কারনে হয়তো তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়।সে জন্যই হয়তো তাকে ভুলতে পারে না। শিমুলের সাথে তিন মাসের এক রুমের ছোট সংসারে প্রথম দেহ বিনিময়ের স্বাদ হয়তো নুরনাহারের ভালবাসা সিক্ত তপ্ত মনকে প্রেমের অনাবিল প্রশান্তিতে ভরিয়ে দিয়েছিল। শিমুলকে একান্তে কাছে পাওযার আকুলতা তার প্রতিটি স্পর্শ হয়তো নুর নাহারকে আন্দোলিত মনে ভালবাসার গভীরে শিহরন জাগিয়েছিল। ভালবাসার আনন্দ, প্রেমকে আরো গভীর ভাবে উপলদ্ধি করেছিল।বড় সুখ তখন শরীর এবং মনের।কিন্ত এর মাঝেই কি শুধু প্রকৃত ভালবাসা নিহিত? আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না। পেটের ক্ষুধার কাছে আবেগ সব সময়ই হার মানে।শারীরিক মনের পাশাপাশি বাস্তব যে মন আছে , কয়েক দিনের মধ্যে সে উশখুশ শুরু করল।প্রায়ই শিমুল নুরনাহারকে না বলে বেরিয়ে যায়। কোথায় যায় জিঞ্জেস করলে উত্তরটায় স্বাভাবিকতা থাকে না।নুরনাহার ভাবত প্রত্যেকের কিছু ব্যক্তিগত ব্যাপার আছে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক যত গাঢ়ই হোক বাথরুমে ঢুকে কে কি করছে তা নিশ্চয়ই অন্যকে জানানোর দরকার নেই, জানতে চাওয়াও বোকামী। একটা কথা আছে, "অভাব যখন দরজায় এসে দাড়ায়, ভালবাসা তখন জানলা দিয়ে পালায়।" ভালবাসার সুস্থতা, ভালবাসা টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে অর্থের ভূমিকাকে কখনোই ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।তাদের দুজনের আবেগময় ভালবাসার সাথে অর্থ কস্টও ছিল।তাই নুরনাহারের মাঝে মাঝে মনে হয় বিয়েটাকে বযে নিয়ে এভাবে জীবন যাপনের কোন মানে হয় না। এখন বার বার শুধু তার বাবার একটি কথা মনে পড়ে বাবা তাকে প্রায়ই বলত, তোমার জীবন একান্তই তোমার,জীবন যাপন করতে যাতে অসুবিধা না হয় তাই তোমার করা উচিত। শিমুলের বর্তমানের ব্যবহারে নুরনাহারের মনে দুঃখ পায়, দুঃখ থেকে অভিমান, অভিমান থেকে রাগ। একটা মানুষের অনেক জ্ঞান থাকতে পারে কিন্ত সেই সঙ্গে বিনয়ের মিশ্রন তাকে আরও বড় করে। কিন্ত শিমুলের মধ্যে সেই বিনয়ের অভাব লক্ষ্য করে নুরনাহার। তাই সে একা একা নিজকেই বলতে থাকে, " এ জীবন আমাকে অনেক দিয়েছে। কতটা দিয়েছে সে হিসাব করার বাসনা এখন আর আমার নেই"। ওর জীবন এত অল্প জায়গায় লেখা সম্ভব নয়। তবু ওর মুখ মনে পড়ে যাওয়াতে যতটুকু মনে এসেছে তুলে ধরলাম।
চলবে...........................