somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিঘাত ও আতঙ্ক; বাগদাদে মার্কিন হামলা ২০০৩

২২ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




The people of the United States and our friends and allies will not live at the mercy of an outlaw regime that threatens the peace with weapons of mass murder. We will meet that threat now, with our Army, Air Force, Navy, Coast Guard and Marines, so that we do not have to meet it later with armies of fire fighters and police and doctors on the streets of our cities."

—President Bush, addressing the nation soon after the bombing of Baghdad had begun on March 19

দুইদিন পর মার্চ ২১ রাত, ২০০৩ সাল। ইরাকের বাগদাদ অন্যান্য দিনের পার করেছে। রাতের আঁধারে নিয়ন বাতি জ্বলে আছে রাজপথে। উজ্জ্বল আলোতে মানুষ যান চলাচল করছে। রাস্তাঘাট লোকে লোকারণ্য। হঠাৎ রাতের আলোর ঝিলিক বিকট শব্দে চারদিকে আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে যায়। আমেরিকার শক্তিশালী বোমারু বিমান বাগদাদের উপর হামলে পড়ে। মিশাইল ও বোমারু বিমানের হামলা চলে একই রাতে। কত মানুষ একরাতে মারা তার হিসাব পাওয়া যাবে না। শহরে সাইরেন বাজানো হয়। মানুষের চিৎকার, কান্নাকাটির আওয়াজ নেমে আসে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সরাসরি দেখানো হচ্ছে সেই হামলার খবর। রাতের উজ্জ্বল সড়ক বাতি নিবে যায়। শহর ব্ল্যাকআউট করা হয়। কিন্তু কোন প্রকার প্রতিরোধ ছাড়াই চলতে থাকে টার্গেট আক্রমণ। কিছুক্ষণ পর পর আসে হামলার খবর, ছবি, ফুটেজ। সারা বিশ্ব ব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে। তবু চলছে আক্রমণ। এইভাবে সারারাত ধরে চলে হামলা। মার্কিন বিমান হামলা মোকাবেলা করা সামর্থ্য সাদ্দামের নেই। মানুষ বুঝে সাদ্দামের পতন হবে। তবে এত ক্ষতি ইরাকের হবে তা কেউ অনুমান করেনি। বিগত ১৫ বছর ধরেই চলছে সেখানে যুদ্ধ। এই যুদ্ধ এক অন্তহীন যাত্রা। এক যুদ্ধে আরো হাজারো যুদ্ধের ফ্রন্ট খোলে গেছে। ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকার মানুষ যেভাবে এক ভয়াণক রাত পার করেছিল। ঠিক তেমনি ইরাকের বাগদাদের মানুষ ২০০৩ সালে ২১শে মার্চ পার করে। উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আর একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের উপর এইভাবে হামলা করার নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। মধ্য যুগের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে এই হামলা। নাম দেয়া হয়েছে অভিঘাত ও আতঙ্ক ( Shock and Awe). সত্যিইতো এক ভয়াণক খেলা। জীবন বিধ্বংসী আতঙ্ক। সাদ্দামকে সরাতে এই অভিঘাত আর আতঙ্কের অভিযান চালানো হলেও ইরাকের মানুষকে আজও তাড়া করছে ভয়। মৃত্যুর ভয়। ভবিষ্যতের ভয়। অজানা সব আতঙ্ক। কেননা ইরাকে বিগত ১৫ বছর ধরে চলছে নারকীয় যুদ্ধ হত্যা ভয়।

পত্রপত্রিকা, রেডিও,টিভিতে গরম সংবাদ চলছে। সারা বিশ্বের মানুষ দেখছে দুই দেশের বাগযুদ্ধ। সাদ্দাম ও সঙ্গিরা এক কথা বলেতো মার্কিনিরা বলে আরো বেশী। অনেকদিন ধরেই চলছে তল্লাসি যে সাদ্দামের কাছে গণ বিধ্বংসী অস্ত্র আছে। প্রমাণ পত্র চলে গেল নিউইয়র্ক। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ হল সাদ্দামের কাছে গণ বিধ্বংসী অস্ত্র আছে। জাতিসংঘে প্রতিবেদন পেশ করার আগেই তার কপি চলে যায় মার্কিন সরকারের কাছে। সেই প্রতিবেদনে কি ছিল কে জানে? আদৌ মানুষ তা জানতে পারবে কিনা তাও জানা নেই। যাহোক এতদিন ছিল আবোল তাবোল বলা। এখন কাজ করতে হবে। মার্কিন প্রশাসন এই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত ছিল সাদ্দামকে সরাতে হবে। সাদ্দাম এমনিতেই ক্ষমতা ছাড়বে না। তাকে সরাতে হলে শক্তি প্রয়োগ করা আবশ্যক। এই আবশ্যক কাজের জন্য মার্কিন সরকার তাদের তাবেদার দোস্ত কে পেয়ে যায়। যুক্তরাজ্য মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সাথে সম্মতি প্রকাশ। সাদ্দাম সরাতে তৈরি হয় আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন ফোর্স। সাদ্দাম কে সরানো অবৈধ, অনৈতিক অসম এক যুদ্ধের সূচনা হয় আজ রাতে ১৫ বছর আগে। মধ্যপ্রাচ্যের এক শক্তিশালী, ঐতিহাসিক রাষ্ট্রকে ধবংসের চুড়ান্ত সীমায় পৌছে দেয় এই যুদ্ধ। একবিংশ শতকের প্রারম্ভে ২০০৩ সালের এই যুদ্ধই এই শতকের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সাক্ষর রাখে। খলিফা আল মুনসুরের হাতে তৈরি এই নান্দনিক নগর অনেক যুদ্ধের সাক্ষ্য হয়ে আছে। তবে একবিংশ শতকের প্রারম্ভে মার্কিন বিমান হামলায় যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তার আঘাতে ভবন ভেঙ্গে মাটিতে লুটায়নি শুধু এখানকার মানুষের মনে যে আঘাত লেগেছে তার ঘা বয়ে বেড়াবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

সাদ্দাম ছিল মার্কিন মিত্র। ইরানের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধে মার্কিনীরা সাদ্দামকে সহায়তা করেছে। প্রশিক্ষণ দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে। সাদ্দাম তার মিত্রতা ধরে রাখতে পারেনি। বলা হয় আমেরিকা যাদের মিত্র তাদের শত্রুর দরকার নেই। বুশ প্রশাসন ইরাকে হামলা করেছে সেই কথারই সত্যতা রেখেছেন। সিনিয়র বুশের আমলে আরম্ভ হওয়া উপসাগরীয় যুদ্ধের মাধ্যমে মার্কিন নীতির যে পরিবর্তন হয়েছিল, জুনিয়র বুশ তা পূরণ করেছেন। হাজার হাজার মানুষের আহাজারিতে ইরাকের বাতাসে শুধু কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়। নিরীহ মানুষের আত্মা বিচারের প্রতিক্ষায়। কিন্তু কখন কবে হবে সেই বিচার। যেখানে প্রতিদিন মানুষ মরে। যেখানে প্রতিদিন অনিশ্চিত।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×