জন্মদিনের ঠিক আগের দিন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ১২টা বাজে!
মা'র ঝাড়ি খাওয়ার আগেই ঝটপট মুখ ধুয়ে নাস্তা খেলাম!!
ভার্সিটি খোলা তবে আমার নতুন বছরের ক্লাস এখনও শুরু হয়নি বলেই এত রাজার হালে আছি। সে যাই হোক, অভ্যাসমত বাসা থেকে বের হলাম পত্রিকা কিনতে। পত্রিকা কিনে ফিরে আসার সময় হঠাৎ দেখি সামনে মুন্নী ম্যাডাম আসছেন!
সেই পুরোনো মুন্নী ম্যাডাম, সেই একই রকম কালো ছাতা মাথায় দিয়ে, সেই একই রকম সালোয়ার-কামিজ পরে,মাথায় ঘোমটা দেয়া মুন্নী ম্যাডাম!! মনে পড়ে সেই স্কুল জীবনের কথা, ক্লাস সেভেনে হঠাৎ একদিন এক সুন্দরী ইয়াং ম্যাডাম এসে Voice Change পড়ানো শুরু করলেন!! আমরা তো হাঁ করে ছিলাম....তা উনার রূপ দেখেই হোক আর আমাদের যম ইংরেজি গ্রামারে তার দখল দেখেই হোক!!
এক মাসের মধ্যে ক্লাসের ৮০ ভাগ ছেলের প্রিয় টিচারের তালিকায় মুন্নী ম্যাডাম সবার উপরে চলে আসলেন! আমরা যারা মোটামুটি মানের ছাত্র ছিলাম, তারাও রেজাল্ট ভালো করতে লাগলাম ইংরেজীতে ভালো করার কারণে!
সেই মুন্নী ম্যাডাম আজ এতো দিন পর আমার সামনে দাঁড়িয়ে!!! দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে সালাম দিলাম। কি আশ্চর্য...ম্যাডাম একবারেই আমাকে চিনতে পারলেন!!
কেমন আছি,কি করছি,বাসায় সবাই কেমন আছে ইত্যাদি বলার পর হঠাৎ ম্যাডামের চোখ পড়ে আমার গায়ে দেয়া টি-শার্টের উপর!!
সাথে সাথে ম্যাডাম আমার কাঁধে হাত রেখে উল্লসিত গলায় বলেন, "তুমি তো আমার ভার্সিটিতে পড়ো!! জানো,এই সময়টায় আমরা কত মজা করেছি!!" তারপর ম্যাডাম তার সাবজেক্ট বলেন, হল বলেন, ঐ সময়ে ক্যাম্পাসে কত কি ছিলো এখন সে সব আছে কিনা আমার কাছে খোঁজ নেন।
বিদায় নেয়ার সময় মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, "টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে পত্রিকা কেনার বদঅভ্যাস এখনও যায়নি, না?? আমি খুব খুশি হয়েছি, তুমি আমার ভার্সিটিতে পড়ো! ও মা, ছেলেটা কত্তো বড় হয়ে গেছে..!! আরো অনেক বড় হও বাবা।"
আমি কিছু বলতে পারিনা...গলাটা বুজে আসে!! সত্যি তো, এতো বড় হলাম যাদের জন্য..তাদের খোঁজ তো নিজে থেকে নেই না কোনোদিন!!
সালাম দিয়ে কোনোরকম পালিয়ে আসি..আর ভাবতে থাকি, বাসার কাছে নিজের স্কুল থাকা কত খারাপ!! গেলাম পত্রিকা কিনতে, এলাম কাঁদতে কাঁদতে!!
আমি আরো বড় হবো..আরো অনেক বড়! যারা আমাকে এতদূর নিয়ে আসলো, তাদের গর্ব করার একটা সুযোগ আমি দেবোই দেবো!!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৭:১৭