somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবর্তনবাদ - বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু তবুও বিতর্কের শেষ নেই!

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিবর্তনবাদ বর্তমান পৃথিবীর সবচাইতে প্রশ্নবিদ্ধ এবং আলোচিত একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। এখনও বেশির ভাগ মানুষই বিবর্তনবাদের ধারনা এককথায় নাকচ করে দেন এই বলে যে এটি শুধুই একটি ত্ত্ত্ব বা থিউরী, এর বেশি কিছু না। আর এই কথাটা বলার মাধ্যমে তারা সুচিন্তিতভাবে অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সাথে প্রতারণা করেন। কেউ যখন বলে যে বিবর্তনবাদ শুধুমাত্র একটি তত্ত্ব তখন তিনি তত্ত্ব শব্দটির ভুল ব্যবহার করেন। তিনি তখন তত্ত্ব শব্দটি খুবই সাধারণ এবং অবৈজ্ঞানিক অর্থে ব্যবহার করছেন যার মানে করলে হয়ত দাড়ায় বিবর্তনবাদ হচ্ছে বিজ্ঞানীদের একটি অনুমান বা ধারণা।

আবার অনেকেই বিবর্তনবাদকে নাস্তিকতার সাথে মিলিয়ে ফেলেন। কিন্তু, নাস্তিকতার সাথে বিবর্তনবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। বিবর্তনবাদ হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা লব্ধ আবিস্কৃত একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি। ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই সেটা বিবর্তনবাদের সংজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত না। মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী দার্শনিক এবং বিবর্তনবাদ বিজ্ঞানী রবার্ট টি. পেনক বলেন, "আমাদের জন্য ধর্ম এবং দর্শনের ধারনা (Concept) বিজ্ঞান থেকে আলাদা রাখা খুবই জরুরী।" তবে কেন বেশিরভাগ লোকই বিবর্তনবাদের কথা শুনলে আহত বোধ করেন? কারণটা হলো, বিবর্তনবাদ আমারা কে, এবং কোথা থেকে এসেছি এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেস্টা করে এবং তারা যে উত্তরটা শুনতে চান বিবর্তন বাদ ঠিক তার উল্টোটা বলে। মানুষ আহত বোধ করে কারণ এটা তাদের কাছে অনেকটা বাবা অথবা মাকে নিয়ে গালি দেয়ার মত অফেন্সিভ মনে হয়।

বিজ্ঞানে তত্ত্ব মানে হলো ব্যাখ্যা। তত্ত্ব বা থিউরী হলো বিশাল বড় একটা সিস্টেম যেটা কিনা অত্যন্ত কঠিন কঠিন অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারপর একটা সিস্টেম হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা গুলো করাই হয়েছে এই তত্ত্বটিকে ভুল প্রমানিত করার জন্য। বিজ্ঞান সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রচুর গবেষনা করে তারপর কোনো বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়। শুধুমাত্র কোনোকিছু শুনতে চমকপ্রদ লাগছে এই কারণে বিজ্ঞান কোনো তত্ত্বকে গ্রহণ করে না। বিজ্ঞানীদের কাছে তখনই একটা ধারণা গুরুত্ত্ব পায় যখন সেটা নিয়ে বাস্তবে অনেক পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালানো সম্ভব বা চালানো হয় ।

নীচের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের উধাহরণগুলোর দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখা যাবে এর কোনটি সম্পর্কেই আমাদের বিন্দুমাত্র কোনো সন্দেহ নেই। আবার কোনোটিই ১০০ ভাগ প্রমানিত কোনো তত্ত্বও না।

১) মহাকর্ষ বলের তত্ত্ব
২) কোষ তত্ত
৩) জীবাণু তত্ত্ব
৪) পরমাণু তত্ত্ব
৫) তড়িৎ-চৌম্বকীয় বলের তত্ত্ব
৬) প্লেট টেকটনিক্স তত্ত্ব

তাই যখন বিবর্তনবাদকে একটি তত্ত্ব হিসাবে উল্লেখ করা হয় তারমানে এটা তখন আর সাধারণ কোন বিষয় না থাকে না, অত্যন্ত শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক একটি বিষয় বলে পরিগণিত হয়।কোনোকিছুকে বৈজ্ঞানিকরা যখন তত্ত্ব হিসাবে আখ্যায়িত করেন তার মানে হচ্ছে তারা ইতিমধ্যেই বছরের পর বছর বা কখনও দশক ধরে এর উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। শুধু তাইনা, তাদের এই সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল পুরো বৈজ্ঞানিক সমাজের মূল্যায়নের জন্যও ব্যবস্হা নেয়া হয়েছে।
একজন সাধারন মানুষ এবং একজন বিজ্ঞানীর কাছে তত্ত্বের মানে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী। কারণ তত্ত্ব বিজ্ঞানের জগতে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি ধারণা। একটি তত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর গবেষণার পর কিছু বাদ দেন আবার কিছু যোগ করেন। এই প্রক্রিয়াটা ক্রমাগত চলতে থাকে। বিবর্তন বাদের তত্ত্বটা আজকে যেমন আছে আজ থেকে ১০০ বছর আগে সেরকম ছিলো না।

বিবর্তনবাদ নিয়ে প্রতিনিয়তই পরিক্ষাগারে বা বাইরের পরিবেশে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এটি সবচাইতে বিতর্কিত একটি তত্ত্ব। আর যখন কোনো তত্ত্ব বিতর্কিত হয় তখন সেটা নিয়ে আরো বেশি বেশি গবেষনা করা হয়। আর বিবর্তনবাদ নিয়ে গত ১৫০ বছর ধরে ক্রমাগতভাবে পরীক্ষিত হয়ে আসছে। আর এই ১৫০ বছরে একটি পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষার ফলাফলও বিবর্তনবাদের বিপক্ষে যায়নি। যে কোনো তত্ত্ব যখন ১৫০ বছর ধরে ক্রমাগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারে সেটাকে একটি অতি বিশেষ তত্ত্ব হিসাবে গুরুত্ত্ব দিতেই হবে।

বিজ্ঞানীরা প্রতিদিনই বিবর্তন তত্ত্ব ব্যবহার করে ওষুধ বানাচ্ছেন, প্রতিষেধক বানাচ্ছেন।এই তত্ত্ব ব্যবহার করে অভয়ারণ্য নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বিবর্তন তত্ত্ব ব্যবহার করে আমাদের জিনোমের তথ্য উদঘাটন করছেন। বর্তমান সময়ে গবেষনাকারীরা এক নতুন ধরনের জীনতত্ত্ব বা ইভো ডেভো টেকনিক ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অর্গানিজমের মধ্যে বিবর্তন প্রক্রিয়া ট্রেস করতে পারেন। এই প্রত্যেকটি ব্যবহারিক দিকই হলো বিবর্তনের জন্য এক একটি পরীক্ষা। কারণ, যদি ব্যবহারিক দিকগুলো অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হয় তবে বিবর্তনবাদই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।কিন্তু বিবর্তনবাদ একটি শক্তিশালী এবং কার্যকরী তত্ত্ব হিসাবে সময়ের পরীক্ষায় পাশ করে কালোত্তীর্ণ হতে পেরেছে।

বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা দ্ব্যর্থহীণ ভাবে বিবর্তনবাদকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্যালিওন্টোলজি, জিওলজি, মাইক্রো-বায়োলজি, জেনেটিকস, মলিকিউলার বায়োলজি, ইকোলজি,এবং অতি সাম্প্রতিককালের ইভ্যুলুশনারী ডেভেলপমেন্ট বায়োলজী (ইভো ডেভো) অন্তর্ভূক্ত। জীন তত্ত্ববিদ থিওডেসিয়াস ডবঝনস্কি বলেন " জীব বিজ্ঞানকে বিবর্তন বাদের আলোকে না দেখলে কোনো কিছুই আর কোনো অর্থ বহন করে না।

জীববিজ্ঞানের সবগুলি শাখার জন্য বিবর্তনবাদ হচ্ছে একটি মেলবন্ধন। বিবর্তনবাদ জেনেটিকস থেকে শুরু করে পরিবেশবিদ্যা পর্যন্ত সবকিছুর মধ্যে একটা সংযোগ সৃষ্টি করে। বিবর্তনবাদের বিভিন্ন কার্যসাধন পদ্ধতি সম্পর্কে মত পার্থক্য থাকতে পারে, এবং আছে, কিন্তু সেটাই একটা গুরুত্ত্বপূর্ণ এবং সফল তত্ত্বের জন্য অন্যতম একটা প্রমাণ। কিন্তু মত পার্থক্য থাকার মানে এই না যে তত্ত্বটাকেই বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে হবে।পরিশেষে, প্যালিওন্টোলজিস্ট নাইলস এলড্রেজের কথা দিয়ে শেষ করতে চাই। তিনি বলেছেন, " ডারউইনের যখন প্রথম বিবর্তনের কথা বলেছিলেন তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত গত ১৫০ বছরে আমরা যা কিছু জ্ঞান অর্জন করেছি তার কিছুই প্রাকৃতিক নির্বাচনের যে মূল কথা তার বিপক্ষে যায়নি।"

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৫৮
২১টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×