৯১ এর সংসদ নির্বাচনে শহরের সবগুলো আসন সহ চট্টগ্রামের ১৫ টি আসনের বেশীরভাগে জয়লাভ করে। তখনও জ্বনাব আব্দুল্লাহ আল নোমান আর কর্নেল অলি আহমেদের নেতৃত্বে দুটি ধারা ছিল। ৯১ এ নির্বাচনে জয়লাভের পর মীর নাসির উদ্দীন চৌঃকে সরকার মেয়রের দায়িত্বে আনেন। তিনি তার স্বল্প মেয়াদকালে চট্টগ্রামকে হেলদি সিটি হিসেবে গড়ে তুলার পদক্ষেপ নেন। মূলত মেয়রের যেই কাজ শহরের সড়কের রক্ষনাবেক্ষন সেটাতে তার আমলে লক্ষনীয় উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। বিএনপি সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে মেয়র নির্বাচনের ঘোষনা দেয়ার পর সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে মীর নাসির স্বউদ্যোগে মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ও আওয়ামিলিগের মনোনিত এবিএম মহিউদ্দীন চৌঃ এর বিরুদ্ধে নির্বাচন যুদ্ধে অবতির্ন হন। মীর নাসিরের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিতে একটি ব্যতিক্রমধর্মি ঘটনা।
এই লিখার প্রধান উদ্দেশ্য হলো এই মেয়র নির্বাচন উপলক্ষ্যে অনেকে অনেক লিখা লিখছেন। আমি একজন চট্টগ্রামবাসী হিসেবে বিশ্লেষন করার চেষ্টা করবো। কারণ একই কথা বার বার বিভিন্ন পোস্টে কমেন্ট করাটা বিরক্তিকর।
আজকে মহিউদ্দিন চৌঃ নির্বাচনে হারার পর অনেকে অনেক কথা বলছে, বিশেষ করে আওয়ামিলীগের সমর্থকরা পরাজয়টিকে ব্যাক্তি মহিউদ্দীনের পরাজয় হিসেবে দেখাতে/দেখতে বেশী পছন্দ করছে। তাদের জন্য প্রথম দুটি প্যারাতে দেখিয়েছি বিএনপির চট্টগ্রামে অবস্হান কি। ৯৩/৯৪ (সালটা ঠিক মনে নাই) এর সেই মেয়র নির্বাচনে আব্দুল্লাহ আল নোমান মূলত বিরোধিতা করেন। কারণ তার আশংকা ছিল মীর নাসির মেয়র নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম মহানগরে তিনি বিএনপিতে যে একক নেতৃত্ব দিয়ে আসেন সেটা বাধাগ্রস্হ হবে। যাই হোক এর মধ্যে একসময়ে এরশাদের ঘনিষ্ট জন ও একে খান পরিবারের আত্নীয় মোর্শেদ খান বিএনপিতে যোগ দেন ও প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ দুত হিসেবে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় সরকারে অধিষ্টিত হম। এর মধ্যে অলি আহমেদের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে সরোয়ার জামাল নিজাম, জাফরুল ইসলাম চৌঃ, গাজি শাহজাহান জুয়েল প্রমুখ বিএনপির রাজনীতিতে একটি অবস্হান গড়ে তুলেন। আর আরেক প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান আমীর খসরু মাহমুদ চৌ খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেয়া আসনে নির্বাচন করে বিএনপির রাজনীতিতে হাতে খড়ি নিয়ে নেন। বিএনপির ৯১-৯৬ এ চট্টগ্রামে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে যার ফলশ্রুতিতে সারোদেশের অবস্হা যাই হোক ৯৬ এর নির্বাচনে বিএনপি একটি অনেক শক্তিশালী অবস্হা নিয়ে অবতীর্ন হয়, মেয়র নির্বাচনে মহিউদ্দীন চৌঃ এর বিজয় সত্ত্বেও। এর মধ্যে চট্টগ্রামের আরেক প্রভাবশালী চৌঃ পরিবারের দুই সদস্য সালাহউদ্দীন কাদের চৌ ও তার ভাই গিয়াসউদ্দীন কাদের চৌঃ তাদের দল এনডিপি নিয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে দুটি আসনে মনোননয়ন লাভ করে ও দুটি আসনেই জয়ী হয়। সেই নির্বাচনে বিএনপি ১৫ টি আসনের মধ্যে ১২ টি আসনে জয়ী হয়। আখতারুজ্জামানর চৌঃ বাবু সহ অনেকে পরাজিত হন। চট্টগ্রাম ১ আসনে ইন্জিনিয়ার মোশারফ প্রথমে খালেদা জিয়ার কাছে পরাজিত হলেও পরে উপনির্বাচনে জয়ী হন। আর শহরে আব্দুল্লাহ আল নোমান পরাজিত হন এম এ মান্নানের কাছে, যিনি মূলত মহিউদ্দীন চৌঃ এর কাছের লোক। এই নির্বাচনের ফলাফল এই জন্যই উল্লেখ করলাম যদি দল হিসেবে বিএনপি পরাজিত হয়ে থাকতো ৯৪ এর মেয়র নির্বাচনে তাহলে ৯৬ এ তাদের অবস্হাতো আরও খারাপ হবার কথা ছিল, বিশেষ করে ১৫ ই ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনের পর। ব্যাক্তি হিসেবে যারা ৯৬ এর নির্বাচন করেছে তাদের মধ্যে আমির খসরু ছাড়া বাকিদের কেউতো অনন্য সাধারন নন। বরং আমাদের আসন চট্টগ্রাম ১০ আসনে নুরুল ইসলাম বিএসসি সমাজসেবক ব্যক্তি হিসেবে অনেক বেশী গ্রহনযোগ্য ছিলেন। নির্বাচনের অনেক দিন আগে থেকেই তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে অনেক সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। পক্ষান্তরে আমার জানামতে মোর্শেদ খান সাহেবের সমাজ সেবা মূলক তেমন কোন কর্মকান্ড নাই। আমাদের এলাকায় বিএসসি কতবার আসলো তারপরও ৯৬ এর নির্বাচনের পর দেখলাম আমাদের কেন্দ্রে (বহদ্দারহাট ওয়াপদা অফিস)বিপুল ভোটে জয়ি হন মোর্শেদ খান। চট্ট্গ্রাম ৯ আসনে নোমানের বিরুদ্ধে নোমানের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত রকমের অপপ্রচারের ফলে তাকে হারতে হয়। তাকে দেখানো হয় সন্ত্রাসী দূর্নীতিবাজ হিসেবে। সন্ত্রাস বাংলাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে যারা চেয়ারম্যান হয় তাদেরকেও কিছুটা পশ্রয় দিতে হয়। তবে দু্র্নীতির বদনাম একজান সাবেক বামপন্থি হিসেবে তিনি একজন যাকে স্পর্শ করে নি বলে আমার ব্যক্তিগত ধারনা। ৯১-৯৬ এ মন্ত্রী থাকা অবস্হায় মেহেদিবাগে একটি অতি সাধারন ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার পাশের বাসা ছিল খালার বাসা তাই বেশ কয়েকবার দেখেছি। বিপরীত দিকে আমির খসরুদের বিশাল বাড়ির বিপরীতে সেটা বড়ই বেমানান। ২০০১ এর নির্বাচনের আগেও দেখেছি প্রেসক্লাব থেকে শেরাটনে যাবার জন্য একটি লিফ্ট খুজছেন। যে দেশে মন্ত্রীর পিএসরাও কোটিপতি হয়ে যায় সে দেশের একজন সাবেক মন্ত্রী হিসেবে সার্বক্ষনিক একটি গাড়ি থাকাই স্বভাবিক। যআই হোক নোমান যেহেতু মন্ত্রী ছিলেন তার বিরুদ্ধে দুর্ণীতির অনেক অভিযোগ করা হয় আর তার বিরুদ্ধে যিনি প্রতিদ্বন্দিতা করেন সেই এম এ মান্নানকে বলা হয় একজন সৎ ব্যক্তি। শুনা যায় উনি নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের জন্য নিজের বাসার ফ্যান খুলে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। যাই হোক ৯৯ এ তার কন্যা আমাদের সাথে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয় ও একটু নতুন গাড়িতে করে ক্যাম্পসে আসতে দেখেছি যেই কয়দিন আমি সেখানে গিয়েছি। তাহলে হয় আগে মিথ্যা কথা বলা হয়েছে অথবা ..... ৯৬ এ মন্ত্রী হওয়ার পর তার ও তার থেকে বেশী তার পুত্রের কর্মকান্ডের কারণে মানুষের ভুল ভাংগে ও ২০০১ সালে শহরের সবগুলো আসনেই বিএনপি জয়লাভ করে। চট্টগ্রামের আরেকটি আসন চট্টগ্রাম -৩ সন্দ্বীপ আসন নিয়েও একদম ভালভাবে জানি এখানে লীগ ভোট পেত না ভোট পেত মোস্টাফিজুর রাহমান। সন্দ্বিপের তার সাহায্য পায় নাই এমন ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠান খুব কমই আছে। আমার নানাদের ভাইরা মিলে সন্দ্বীপে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিল তাদের পিতার নামে সেই স্কুলে উনি ৫ লাখ টাকা দান করেন। ভোটের সময় তারা তাকেই সমর্থন করেন যদিও লীগকে কেউ পছন্দ করে না। এমন নজির শুধু একটি নয়। তার ব্যক্টিগত ইমেজেই লীগ ঐ আসন জিতে। সবাই বলতো এমপি চাই মোস্টাফিজ আর ক্ষমতায় চাই বিএনপি। তিনি মারা যান ২০০৫/০৬ এর দিকে তার পুত্রের প্রাপ্ত ভোটের কারণে লীগ পরাজিত হয় ও মোস্তফা কামাল পাশার মত একজন সন্ত্রাসী নির্বাচিত হয়। যাই হোক এতগুলো কথা বলার উদ্দেশ্য দল হিসেবে বিএনপির অবস্হান সমপর্কে একটি ধারনা দেয়া।
এবার আসি মেয়র নির্বাচন নিয়ে। মীর নাসীর একজন যোগ্য প্রশাসক মহিউদ্দীন চৌঃ এর তুলনায় এ কথা চট্টগ্রামের অনেক লোকই স্বিকার করবেন। কিন্তু রাজনৈতিক হিসেবে তিনি মহিউদ্দীন চৌঃ থেকে অনেক পিছনে। মহিউদ্দীন চৌ নিজেও বলেন, আমার শক্তি হলো দরিদ্র জনসাধারন। একথাটা একদমই সত্যি। চট্টগ্রামে তিনি যদি স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচন করেন তাহলেও একটা ভাল ভোট পাবেন। কারণ হলো তার একটি ক্ষমতা আছে গ্রাসরুট লেভেলে মিশে যাওয়া। সারাদেশে লীগের অবস্হান যআই হোক চট্টগ্রামের সকল সামাজিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাকে পাওয়া যেত, মীর নাসিরের সেই ক্ষমতা ছিল না। মহিউদ্দীন চৌ আব্বুর ক্লাসমেট ছিল বন্ধুর মতই ছিল সে সম্পর্ক। ক্ষমতার সিড়ি বেয়ে উনি অনেক উপরে উঠে গেলেও ভুলে যাননি। যোকোন সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা হলে সেই পরিচয়কে সম্মান করতেন। মহিউদ্দীন চৌঃ এর এই একটি গুনের জন্যই তিনি চট্টগ্রামের সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে অনেক জনপ্রিয়। যেসব লীগ সমর্থক আজকে মহিউদ্দীন চৌঃ এর অনেক দোষের কথা বলছেন তাদের জন্য একটা প্রশ্ন দিয়ে আজকের এই পর্ব শেষ করবো।
আপনারা বলছেন ব্যাক্তি মহিউদ্দীনের দোষে তিনি নির্বাচনে হেরেছেন। তার ব্যক্তিগত দোষগুলো কোনটি ২০০৫ এ বা ৯৪ আ ছিলনা বলে আপনারা মনে করেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




