নির্বাচন শেষ হলো, ফলাফল হলো, চট্রগ্রামের বিত্তশালী ব্যবসায়ী, সমাজসেবক মনজুরুল আলম একজন ওয়ার্ড কমিশনার থেকে রাতারাতি সারা দেশে পরিচিতি লাভ করলেন চট্রগ্রামের নবনির্বাচিত মেয়র হিসেবে। সরকার ও বিরোধি তরফ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। এর মধ্যে আমির খসরু সাহেব একটি অত্যন্ত প্রশংশনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন বিজয় মিছিল না করে। গত প্রায় সাড়ে তিন বছর জুড়ে তার দলের সর্ব পর্যায়ের সমর্থকরা যেভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাতে করে তাদের এমন একটি আনন্দের উপলক্ষে এমন পরিমিতবোধ আবারও এটাই বলে দেয়, হি শুড গো এ লং লং ওয়ে ইন বিএনপি পলিটিক্স ফর দ্যা বেটারমেন্ট অফ বাংলাদেশী পলিটিক্স।
বিএনপি'র এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন জয় অনেকটা তাদের ৯১ এর নির্বাচনে জয়লাভের মত মনে হয়েছে আমার কাছে। এই মেয়র নির্বাচনের আগে খুব কম বিএনপির সমর্থকই বলতে পেরেছিল যে তাদের কেউ জিতবে এখানে, ক্ষমতার বাহিরে থেকে এরকম প্রতিকুল অবস্হার মধ্যে। সেজন্য দেশনেত্রী এমন একজনকে প্রার্থী করেছেন যাকে মীর নাসির বা নোমান কেউই সম্ভবত তাদের ভবিষ্যত স্হানীয় বা জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দী মনে করেন নাই। আর ফলে সম্ভব হয়েছে বিএনপির কোন্দল অনেকাংশে কমানোর, যা তাদের পূর্ববর্তী পরাজয়গুলোর পিছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এ প্রসংগে অনেকে লীগের এবারের কোন্দলের কথা বলছে। কিন্তু তারা হয়ত এটা জানেন না চট্টগ্রাম মহানগরের আওয়ামিলীগের রাজনীতিতে জ্বনাব মহিউদ্দীন চৌঃ অনেকটাই অপ্রতিদ্বন্দী। সেখানে বাবু বা ইন্জিনীয়ার মোশারফ হোসেনের প্রভাব বা সুনির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক খুব সীমিত/নাই বলেই আমার ধারনা। নুরুল ইসলাম বিএসসিও মহানগরে অতটা শক্তিশালী নন ভোটের রাজনীতিতে। প্রধান ব্যাপার হলো মীর নাসির বিএনপি থেকে সমর্থন পেলেও বিএনপির যে ভোট ব্যংক, বাকলিয়া সেখান থেকে ভোট পেতেন না দলীয় নেতাদের অসহযোগিতা বা নিষ্ক্রিয়তার জন্য, সেরকম কোন ঘটনা মহিঃ চৌ নমিনেশন পাওয়াতে হয়েছে বলে মনে হয় নি। কারণ তার প্রতিদ্বন্দি কোন নেতারই সেই রকম নিজস্ব ভোট ব্যাংক নাই। মিডিয়াতে আজো গনহারে চলছে মহিঃ চৌঃ এর দোষারোপ, অথচ তিনি একজন প্রকৃত আওয়ামিলীগ নেতার প্রতিচ্ছবি যেরকম নেতা আরও অনেক এলাকাতেই আছে, সবচেয়ে বড় কথা হলো তার এসব খারাপ গুনের কথা চট্টগ্রামের মানুষ ২০১০ এ এসে শুনে নাই। আগেও এসব জানতো। তারপরেও সরকারের তল্পিবাহকরা একা তাকে সব দোষ দিয়ে যদি মানসিক শান্তি পায় তাহলে "ওম শান্তি"। তবে যারা বুঝার তারা ঠিকই বুঝে গেছে। কদিন আগেও যেসব মন্ত্রী বিরোধি দলকে স্বিকারই করতে চাইতেন না তাদের কন্ঠেও আজ নরম সুর।
যাই হোক এখন বিএনপির করণিয় কি?প্রথমত দল হিসেবে বিএনপির এটা মনে রাখতে হবে এটা বিপুল জনগোষ্ঠির সরকারের অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতি যতটা অনাস্হা ততটা কিন্তু বিএনপির প্রতি সমর্থন বলা যায় না। বিএনপি সরকারের ব্যর্থতার ফলাফল পেয়েছে, বিএনপির প্রতি সামরিক সরকার ও লীগ সরকারের অন্যায় অত্যাচারের সহানুভুতি পেয়েছে, এটা সরকারের ফ্যাসিবাদি আচরনের প্রতি জনতার ইয়েলো সিগনাল। কিন্তু বিএনপির লেনে এখনও গ্রিন সিগনাল আসে নি। তাই আরও সচেতন হতে হবে তাদেরকে। বিএনপি বরাবর আওয়ামি বর্বরতার প্রতি জনসাধারনের প্রতিবাদের সুফল পায় নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে। কিন্তু বিএনপির চিন্তা করা উচিত তারা যে নতুন উদ্যম পেয়েছে এই নির্বাচন থেকে সেই উদ্যমকে কাজে লাগিয়ে সরকারের দেশের স্বার্থ বিরোধি সকল পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জনগনের দৃষ্টি আকর্ষন করা। দেশের স্বার্থে তাদেরকে রিএকটিভ থেকে প্রোএকটিভ হতে হবে। জাতিয়তাবাদের প্রথম ও প্রধান ভিত্তি হতে হবে ইকনমিক ন্যাশনালিজম। আর বর্তমান সরকার একের পর এক দেশের স্বার্থ জলান্জলি দিয়ে আসছে প্রতিবেশী ভারতের কাছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এ ব্যাপারে তথ্যউপাত্তসহ জাতির সামনে উপস্হাপন করতে হবে। আর স্হানীয়ভাবে চট্টগ্রাম বিএনপির নেতারা যে ঐক্য ও দক্ষতা দেখিয়েছে তা ধরে রাখতে হবে। আব্দুল্লাহ আল নোমান, সালাউদ্দীন কাদের চৌঃ, আমির খসরু মাহমুদ চৌঃ, এম মোর্শেদ খান, মীর নাসির সহ স্হানীয় পর্যায়ের সকল নেতার ভূমিকা নিতে হবে মনজু যাতে সফলভাবে দায়িত্ব পরিচালনা করতে পারে। আর নতুন সংসদিয় আসন বিন্যাসে উপরোল্লিখিত প্রত্যেকের নিজস্ব আসন আছে এখন, তাই তাদের নিজেদের মধ্যে কোন্দল বাড দিয়ে তাদের সংসদীয় আসনে জনগনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক তৈরীতে আরও মনোনিবেশ করতে হবে। বিশেষ করে মোর্শেদ খানে মীর নাসিরের মত নেতাদের আমজনতার সাথে সম্পৃক্ততা আরও বাড়াতে হবে। নোমানের এই গুন সব সময়ই ছিল। এটা সমস্যা না তর জন্য। আর আমীর খসরু চট্টগ্রামের সভাপতি হিসেবে এখন আরও একটিভ হবেন ও সাধারন মানুষের সাথে তার যোগাযোগ আরও দৃঢ হবে বলেই আমার বিশ্বাস। আগামি দিনের নেতা হিসেবে ডাঃ শাহাদাত হোসেন সেলিম নিজেকে আরও ভালোভাবে গড়ে নিবেন সামনের দিন গুলোতে এটাই প্রত্যাশা। আর মনজুরও, তাকে জাতিয়াতাবাদি শক্তি মনোনয়ন দিয়ে সে সম্মান দিয়েছে তার প্রতিদান তাকে দিতে হবে। আরেকটা ডাঃ আলাউদ্দীন যেন না হন তিনি।
আর সর্বোপরি স্হানীয়ভাবে মনজুরুল আলম সাহেবের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর ব্যাপারের চট্টগ্রামের সিনিয়র নেতা ও পেশাজীবিদের সমন্বয়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। যদি ইতি মধ্যে তিনি না করে থাকেন। বিনয়ী ব্যবহার দিয়ে হয়ত ভোটে জিতা যায় কিন্তু প্রশাসন দক্ষভাবে চালানোর জন্য আরও অনেক কিছুই লাগে। এ ব্যাপারে বর্তমান মন্ত্রীসভা সবচেয়ে বড় প্রমান। নেত্রীর সামনে তেলবাজী করে অনেক আপাত ভাবে অচেনা নতুন অনেকে মন্ত্রীসভায় দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও একদিকে মিডিয়াকে মামলায় বিপর্যস্ত করেন আর অন্য দিকে বলেন মিডিয়ায় কোন দুর্ণিটির অভিযোগ নাই। সচেতন মানুষ ঠিকই বুঝে কিসের জোড়ে ওয়ারিদ বিক্রি হয়। যাই হোক সেটা ব্যাপার না তবে অনেক আওয়ামিলীগেরও হয়ত একমত হবেন যে, এই মন্ত্রীসভা এখন পর্যন্ত্য পারফরমেন্সের বিচারের সর্বাধিক অসফল/অদক্ষ মন্ত্রীসভা। বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাকে মনজু সাহেবকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে হবে। জলাবদ্ধতা একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে চট্টগ্রাম শহরের বেশীর ভাগ এলাকার জন্য। আগ্রাবাদ, গোল পাহাড়, বহদ্দারহাট কোন এলাকাই বাদ যাচ্ছে না। আগে যেহেতু এত হতো না এখন বেশী হচ্ছে কারণ কি? বেশী বৃষ্টি হচ্ছে? না। তাহলে প্রধান কারণ খাল ও ড্রেনগুলোর যথাযত সংস্কার সাধন না করা। চাক্তাই খাল সহ প্রধান খালগুলো বর্ষার আগে খনন করতে হবে। এর মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্হানও হবে। আর ড্রেনগুলো পরিষ্কারের জন্য স্হানীয় ওয়ার্ড কমিশনার এর মাধ্যমে ঐ এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অফিসগুলোর থেকে বাধ্যতামূলক আর্থিক সহায়তায় অথবা তাদের সক্রিয় অংশগ্রহনের মাধ্যমে নিয়মিত পরিষ্কারের ব্যবস্হা করতে হবে। মহিউদ্দীন চৌঃ মুরাদপুরে শহরের ভিতরে আবার বাস টার্মিনাল করেছেন। শহরের ভিতরে দিনে সকল আন্ত জেলা বাস/ট্রাক প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে প্রশাসনের তত্ববধানে কিছু ট্রাককে প্রবেশ করতে দেয়া যেতে পারে। তার আরেকটি প্রতশ্রুতি আমার ভাল লেগেছে, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেলওয়ে চালু করা। কর্ণফুলির উপর তিনটি সেতু আছে তাই হয়ত অর্থনৈতিকভাবে এটা কতটা ওয়াইজ এ ব্যাপারে তর্ক হতে পারে তবে পর্যটনের দৃষ্টিকোন থেকে এটা খুব সম্ভাবনাময় হতো। আর ভবিষ্যতে যখন মহেশখালি/কুতুবদিয়াতে গভীর সমুদ্র বন্দর হবে তখনও এটা ভাল ভূমিকা রাখতে পারবে মালামাল পরিবহনে। জানিনা এরকম একটা কিছু কবে হবে। আর চট্টগ্রামকে দেশের সর্ববৃহত মহানগরী করার যে প্রতিশ্রুতির কথা শুনেছি তার বাস্তবায়নে কার্যকরী কর্মপরিকলপনা চাই। এটা শুধু চট্টগ্রামবাসীর জন্য নয় সারা দেশের জন্য দরকার কংক্রিকেট আবর্জনা ঢাকার বাইরে একটি মানসম্পন্ন নগর জীবন। মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের চট্টগ্রাম হতে পারে তেমন একটি বিকল্প।
চট্টগ্রাম শহরের নতুন মেয়র হিসেবে আশাকরি সরকারি দলের সকল বাধা উপেক্ষা করে তার আন্তরিকতা দিয়ে সকল সমস্যা দূরিকরণে পদক্ষেপ নিবেন। সাফল্যের পিছনে হয়ত অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করবে তবে আপনার কাছ থেকে মেয়র হিসেবে যেন আন্তরিকতার কোন ঘাটতি
না দেখতে পাই আমজনতার একজন হিসেবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




