সামার ২০১০ বিশ্বকাপের সেটাই বড় একটা ইস্যু। দল জিতলে সবকিছু ঠিক হয়ে যায় সেটা ঠিক। জিতার জন্য লাকও লাগে। কিন্তু টিম গেইম ফুটবলে টিম হিসেবে খেলতে হবে। ইংল্যান্ডের মত টিম এতগুলো সুপারস্টার খেলোয়াড় নিয়েও তারা জার্মানির আনকোড়া একটি টিমের কাছে হেরে গেলো। আলজেরিয়ার সাথে গোল করতে পারে না। ফ্রান্স সেকেন্ড রাউন্ডেই যেতে পারলো না। আরজেন্টিনার এতগুলো ভাল খেলোয়াড় থাকার পরেও জার্মানির সাথে নিঃশর্ত আত্নসমর্পন। মেক্সোকোর সাথে সাদামাটা পারফোরমেন্স। যেসব ম্যচ জিতেছে সেসব ম্যাচেও একটা টিম মনে হয়নি তাদেরকে। আরজেন্টিনা মানে মনে হয়েছে সামনের তিন ফরোয়ার্ড - মেসি, টেভেজ, হিগুয়েন। না মাঝ মাঠ না ডিফেন্স। এদের তিন জনের সাথে বাকি টিমের কোন যোগাযোগ আছে বলেই মনে হয় নি গোল উদযাপন করা ছাড়া। যেন দল একটি কিন্তু দুটি ভিন্ন অংশ। জার্মানির পুরা টিম একসাথে সম্পূর্ন খেলা খেলেছে এবং সেটা তারা উপভোগ করেছে। এখন পর্যন্ত্য এ দিক দিয়ে টারা অতুলনীয় এজন্যই তারা এত সফল। স্পেন এখন পর্যন্ত্য পারে নি সেটা করতে। ইংল্যান্ড পারে নি, ফ্রান্সতো পুরা ডিসফাংশনাল একটা টিম এবার। আর ইতালির বয়স্ক খেলোয়াড়রা ছিল স্লো, তবে শেষ মুহুর্তে তারা যেভাবে জ্বলে উঠেছিল সেটা সেই টিম গেইমের জন্যই। আরা তারা বুফনকে অনেক বেশী মিস করেছে। তাদের গোলরক্ষক ৬ টি শটের মধ্যে ৫ টি গোল হজম করেছে। ইতালির গোল কিপারের কাছ থেকে আরও বেশী আশা করে ফুটবল বিশ্ব।
এবার আসি প্রিয় দল ব্রাজিলকে নিয়ে। জার্মানি যে ফুটবল খেলছে, আমার মনে হয় ডুংগা চেয়েছিল তার দল সেই ফুটবল খেলুক। হল্যান্ডের সাথে প্রথমার্ধ পরযন্ত্য সেই ফুটবলই খেলছিল। প্রথম গোলের পর কাকা ২য় গোল প্রায় দিয়েই ফেলেছিলেন, গোলকপিার অসাধারন সেভ না করলে। কিন্তু দ্বিতিয়ার্ধে গিয়ে রেফারীর ইনকনসিসটেন্ট খেলা পরিচালনায় তারা পুরোপুরি খেই হারিয়ে ফেলে। ফিলিপো মেলো বা বাস্টোসকে যেসব ট্যকলের জন্য ফ্রি কিক দিচ্ছিল কার্ড দেখাচ্ছিল, একই রকম ফাউলের জন্য ভ্যান বোমেলরা রেহাই পেয়ে যাচ্ছিল। আর রুবেন এদিন চরম অখেয়াড়োচিতভাবে যে কোন অযুহাতেই মাটিতে পড়ে গিয়ে জবাই করা মুরগির মত ছটফট করছিল, আর সেই ফাদে পা দিয়ে রেফারীও বারবার বুকিং করছিল। এতে করে ব্রাজিলের মাঝমাঠ ও ডিফেন্স পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। যার ফলস্বরূপ এরকম সহজ দুটি গোল হজম করে। দ্বিতীয় গোলটি দেখেন। লুসিওর মত অভিগ্গ ডেফেন্ডার ফারপোস্ট খালি রেখে দাড়িয়ে আছে। কর্নার করার আগ মুহুর্তেও মনে হচ্ছিল কি করছে এটা ব্রাজিল! এরপরও উচিৎ ছিল তাদের দলগতভাবে গোল পরিশোধের চেষ্টা করা। কিন্তু তারা সেটা করতে চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ডুংগার জন্য সহানুভুতি। সে জার্মানির আদর্শ অনুসরন করে খেলতে চেয়েছিল। কিন্তু এটা আবার প্রমানিত যতই ভাল হোক সব পলিসি সবাইকে দিয়ে হয় না। ২:১ গোলে পিছিয়ে থাকার পরেও তাদের খেলায় সেই ছন্দ ছিলনা। কখনই মনে হয়নি তারা গোল দিতে যাচ্ছে। ফাবিয়ানোকে উঠিয়ে নিলমারকে নামালো, কিন্তু কোন পরিবর্তন হলো না খেলায়। সবচেয়ে বেশী মিস করেছে মাঝমাঠে একজন এটাকিং মিডফিল্ডার। এখন আর বলে লাভ নাই। অথচ কতই না ভাল হতো সেই জায়গাটিতে যদি রোনাল্দিনহো থাকতো। এলানো, রামিরেসের সার্ভিস খুব মিস করেছে এদিন ব্রাজিল। যাই হোক সহানুভুতি ডুংগার জন্য। নিজের মত করে দল গড়ে সফল হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি ব্যর্থ, কারণ তার খেলোয়াড়দের সেই যোগ্যতা ছিল না। এবার আশাকরি ব্রাজিল পুরা টিম বদলে যাবে।
তবে ব্রাজিল আর নেদারল্যান্ডের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষনীয় ম্যচ আশা করেছিল ফুটবল বোদ্ধারা। আর তারা বিশ্বকাপের সবচেয়ে আগলিয়েস্ট ম্যাচ দেখেলো।
আর সবচেয়ে বড় তারকা হলো এ বিশ্বকাপের রেফারী। প্রত্যেক ম্যাচেই খুব গুরুত্বপূর্ন কিছু ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছে, যেগুলো ম্যাচে ডিসাইডিং ফ্যক্টর হিসেবে পরিগনিত হয়েছে পরে।
১। মার্কিনীদের শ্লোভানিয়ার সাথে একটি পরিষ্কার গোল অফসাইডের অযুহাতে বাতিল করে দেয়া।
২। জার্মানির সাথে ইংল্যান্ডের পরিষ্কার গোল বাতিল করে দেয়া
৩। মেক্সিকোর সাথে আর্জেন্টিনার অফসাইড গোল
৪। আইভেরিকোস্টের সাথে ফাবিয়ানোর হ্যন্ডবল গোল।
৫। রামিরেসকে যেমন ব্রাজিল মিস করেছে জার্মানিও পরের ম্যাচে ম্যারাডোনার বলবয় মুলারকে মিস করবে চরমভাবে। আর দলটি কিন্তু স্পেন।
এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে করুন বিদায় নিয়েছে ঘানা। ঘানার বিদায় ফুটবলের জন্যই লজ্জার। তাদের নিশ্চিত গোল সুয়েরেজ হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দিয়ে ঠেকিয়ে দিল ঘানার সেমিফাইনাল যাত্রা। নাহলে পুরা খেলায় ঘানা অনেক ভাল খেলেছে উরুগুয়ের থেকে। এজন্য আমরিকার ডোনাভান বলেছে, সকার মাঝে মাঝে খুব নির্মম একটি খেলা। এ প্রসংগে দুজন আমেরিকানের ফেইসবুক সংলাপ:
এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হবে এটাই। ৪ বছর পর যে বিশ্বকাপ আসে সেখানে একট ভুল একজন খেলোয়াড়, একটি টিম সর্বোপরি কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমির জন্য অনেক হতাশার। এধরনের ভুল অনেক ফুটবলপ্রেমিকে ফুটবল বিমুখ হয়ত করবে না তবে আমেরিকান, অস্ট্রেলিয়ান বা নতুন যারা ফুটবল নিয়ে উৎসাহিত হতে চাইছিল তারা অনেক হতাশ হবে। ঘানা যেভাবে ফুটবল থেকে বিদায় নিল, ফ্রান্স যেভাবে হেনরীর হ্যান্ডবল দিয়ে বিশ্বকাপে আসা এসব ফিফার জন্য লজ্জার। ফুটবল মাঠে খেলোয়াড়রা মাটিতে পরে যেভাবে অভিনয় করে সেটাও লজ্জাজনক। আর এটার একটাই সমাধান সেটা হলো ফুটবলে প্রযুক্তির আমদানি। আশাকরা যায় ২০১৪ এর বিশ্বকাপে এটলিস্ট ভুল কোন গোল হবে না। আর অভিনয় করলে সেই খেলোয়াড়টিকে বধ্যতামূলকভাবে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া উচিৎ ৫ মিনিটের জন্য।
এই বিশ্বকাপের পর ফুটবলের অনেক নিয়মের পরিবর্তন হবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে এটাই হবে এই বিশ্বকাপ থেকে ফুটবলের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




