বেশ কয়েকদিন পর আজকে সকাল সাড়ে সাতটায় বাসা থেকে বের হলাম। গত কিছুদিন নয়টার আগে বের হওয়া হয়নি, তাই সকালটুকু একবোরে অন্যরকম লাগছিল। হাল্কা বৃষ্টির ছটা, ছাতার সঙ্গে লুকোচুরি খেলা আর গায়ে পানি পড়লে একটুপর পর হাচি দেয়া।তারপরও সবমিলিয়ে দারুন উপভোগ্য। বর্ষা যে সত্যি আমাদের ভাবুক করে তোলে সেটা আরও পরিষ্কার হলো যখন রিকশা নিয়ে নীলক্ষেত থেকে দোয়েল চত্বরের দিকে রওনা দিলাম।
যাওয়ার পথে সবুজ-সতেজ গাছগুলো দেখে নিজেকেও মনে হচ্ছিল তরতাজা ও ভারহীন। ছুটি থাকায় এখন সকালের দিকে স্বভাবতই ক্যাম্পাস আগের মত জমজমাট হয়না। এখানে সেখানে আড্ডাও বসতে দেখা যায়না। আর অতো ভোরবেলায় তো আরওই দেখতে পাওয়ার কথা নয়।
দোয়েল চত্বর আসতে আসতে আমার আবার কলোনির কথা মনে পড়ে গেলো।বৃষ্টি, আমার রুমের জানালা ও কৃষ্ণচূড়া গাছ!
কি অদ্ভুত! প্রায় সোয়া ছয় বছর হলো আমরা বাসা বদল করেছি। তাও এখনও আমি রাতের বেলায় তেরো বছর ধরে বাস করা কলোনির স্বপ্ন দেখি, মনে মনে ভাবি আবার যদি কোনোভাবে আমার প্রিয় সেই বাড়িতে ফিরে যাওয়া যেত। কিন্তু সঙ্গত কারনেই সেটা সম্ভব নয়।
সেখানকার বৃষ্টির দিনগুলো আরও অনেক বেশি সুন্দর ছিল।আমার ঘরের জানালা থেকে বাইরে তাকালে সুবজ মাঠ দেখতে পাওয়া যেত। ঝুম বৃষ্টি পড়ছে আর আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি---এই কাজটা ছিল বর্ষাকালে বা যেকোনো বৃষ্টির সময় আমার খুব প্রিয়। অন্তত সেসময় চোখের দৃষ্টি সীমানার আড়ালে ছিল শুধুই মেঘের কান্না, দেখলে স্বভাবতই মন অনেক উদাস হয়ে যেত।
একবার বৈশাখের শুরুতে দুপুর বেলায় হুট করে শিলা বৃষ্টি শুরু হলো। ছোট ছোট বরফখন্ড উপর থেকে পড়ামাত্রই গলে যায়,তারপরও মাঠের কিছু কিছু জায়গায় এক সঙ্গে কয়েকটা বরফ-খন্ড জমে সাদা আবহ তৈরি করছিল। অতি সামান্য সময়ের জন্য , তারপরও পাচতলার বারান্দায় দাড়িয়ে উপর থেকে আমার দেখতে খুবই ভাল লাগছিল।
আর মাঠের শেষ প্রান্তে ছিল একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ।ভরা ফুলের সময় লাল রঙ্গের আলোক ছটায় গাছের একটা পাতাও দেখা যেত না।দুপুর বেলা বহুদিন ওই আগুন রঙ্গা কৃষ্ণচূড়ার দিকে তাকিয়ে বিকালের জন্য অপেক্ষা করতাম।
কারন শেষ বিকালে সূর্যের মায়ময় আলো ফুলগুলোকে কেমন রহস্যময় করে তুলত।
এসব ভাবতে ভাবতে দেখি কার্জন হলের লাল দেয়াল।
সঙ্গে সঙ্গেই ভাবনায় ছেদ।
নাহ্ সামনে এখন কত কঠিন বাস্তব; শুধু বৃষ্টি দেখলে কি আর চলবে !মনে হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০০৮ রাত ১০:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




