somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃদ্ধ হাবল স্পেস টেলিস্কোপের নতুন প্রজন্ম । একটি মেগা প্রকল্পের প্রযুক্তি বিশ্লেষণ (পর্বঃ ২)- জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ

১৩ ই জুন, ২০১৫ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাবল স্পেস টেলিস্কোপ । মহাকাশ বিজ্ঞানে হাবল টেলিস্কোপ এক বিস্ময়ের নাম। নাসা অথবা মহাকাশ গবেষণা নিয়ে যাঁরা ভাবেন, পড়েন অথবা খোঁজ রাখেন তাঁদের কাছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ নামটি খুবই পরিচিত। মহাকাশের প্রথম টেলিস্কোপ হাবল নয়, কিন্তু এর সংযোজনের মাধ্যমে মহাকাশ বিজ্ঞানের এক নতুন যুগের সূচনা হয়।



চিত্রঃ ১ - হাবল স্পেস টেলিস্কোপ

পৃথিবী থেকে সাধারন টেলিস্কোপেও মহাকাশ দেখা যায়। তবে সাধারন টেলিস্কোপের প্রধান সমস্যা হলো এতে মহাকাশের যে চিত্র দেখা যায় তা কিছুটা ঝাপসা। কারন টেলিস্কোপ আর মহাকাশের মাঝে থাকে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল। ঠিক এ কারনেই ১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাইরে ভূ-পৃষ্ট থেকে ৬০০কিলোমিটার উপরে বায়ুমন্ডলে মহাশূন্যে স্থাপন করা হয় ২.৪ মিটার দীর্ঘ হাবল টেলিস্কোপ। প্রথমদিকে এই টেলিস্কোপের সাহায্যে প্রাপ্ত ছবিও ঝাপসা দেখাত। ফলে তিন বছর পর ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে মেরামতের পর এই টেলিস্কোপটি পৃথিবী থেকে কয়েক বিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরের গ্যালাক্সিও স্পষ্ট হয়ে উঠে। মার্কিন জ্যোতিবির্দ এডুইন হাবলের নামানুসারে রাখা এই টেলিস্কোপটি স্থাপনের ফলে জানা যায় মহাকাশের অনেক অজানা তথ্য । তবে বিজ্ঞানীরা এখন অপেক্ষায় আছেন আরেক নতুন যুগে প্রবেশের।

হাবল স্পেস টেলিস্কোপের উত্তরসূরি হিসেবে নাসা ৮৮০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে ২০১৮ সালে চালু করতে যাচ্ছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। এটি অবলোহিত রশ্মির অনুকূলে কাজ করতে পারবে এবং ট্রানজিস্টিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আবিষ্কৃত কয়েকটি গ্রহের আবহমণ্ডল নিয়ে গবেষণা চালাবে। ওয়েবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো এর আয়নাগুলো, যেগুলো বসানো থাকবে এর শ্বৈত্যমুখে। এই আয়না, রকেটের ভিতর গুটিয়ে রাখা যাবে, এবং এর ঘূর্ণন-পথের কাছে গিয়ে নিজেকে খুলতে পারবে। আয়নাগুলো ১৮টি টুকরার সমন্বয়, যেগুলো প্রচলিত কাচ দিয়ে না বানিয়ে বেরিলিয়াম দিয়ে বানানো, কারণ প্রচন্ড ঠান্ডায় বেরিলিয়াম, কাচের চেয়ে কম সংকুচিত হয়, তাই ঐ আবহাওয়ায় এই আয়না যথেষ্টই স্থির। এছাড়া ওয়েবের আয়না বসাবার অংশটি খাঁটি ২৪-ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে বাঁধানো থাকবে, কারণ অবলোহিত (infrared) আলো প্রতিফলনে স্বর্ণ খুব বেশি উপযোগী— যেখানে সাধারণ আয়না ৮৫% প্রতিফলনক্ষম, সেখানে স্বর্ণের ব্যবহারে তা ৯৮% প্রতিফলনক্ষম হয়ে উঠে।



চিত্রঃ ২ - জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মিরর



চিত্রঃ ৩ - জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মিরর প্রোফাইল

জেম্‌স ওয়েব-এর বিশেষত্ব এখানেই শেষ নয়। হাবল যেখানে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ৩৮০ মাইল উঁচুতে ছিল, জেম্‌স ওয়েবকে স্থাপন করা হবে তারও চেয়ে উঁচুতে— এতোটাই উঁচুতে যে, তা চাঁদের চেয়েও দূরে থেকে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে। পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা হবে ৯,৪০,০০০ মাইল। এই ঘূর্ণন-পথকে [এর আবিষ্কর্তা জোসেফ লুই ল্যাগরেঞ্জের নামানুসারে] বলা হয় ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট। ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট হলো এমন পাঁচটি পয়েন্ট, যেখানে দুটো ঘূর্ণনশীল বস্তুর মাঝখানে তৃতীয় আরেকটি বস্তু তাদের মাধ্যাকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে মাঝামাঝি একটা নিরাপদ এবং স্থায়ী দূরত্ব ধরে চলতে পারে। জেম্‌স ওয়েবকে এই পাঁচটি ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টের মধ্যে দ্বিতীয় পয়েন্টে রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।



চিত্রঃ ৪ - জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের অবস্থান

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের ছবির রেযোল্যুশন হবে হাবলের ইনফ্রারেড ছবির ৩ গুণ আর স্পিটযার-এর ৮ গুণ শক্তিশালী। হাবল যেখানে মহাবিষ্ফোরণের ৮০০ মিলিয়ন বছর পরের দৃশ্য দেখতে পারে, সেখানে ওয়েব দেখতে পাবে ২০০ মিলিয়ন বছর পরের দৃশ্য।



চিত্রঃ ৫ - বিভিন্ন স্পেস টেলিস্কোপের দৃশ্যমান দূরতের তুলনা

জেম্‌স ওয়েবের যন্ত্রপাতি সব মিলিয়ে চারটা:
• প্রায়-অবলোহিত ক্যামেরা (Near Infrared Camera: NIRCam) : ০.৬ – ৫ মাইক্রোমিটার
• প্রায়-অবলোহিত বর্ণালিবীক্ষণ (Near Infrared Spectrograph: NIRSpec) : ০.৭ – ৫ মাইক্রোমিটার
• মাঝারি-অবলোহিত যন্ত্রপাতি (Mid Infrared Instrument: MIRI) : ৫ – ২৮.৫ মাইক্রোমিটার
• মসৃণ নির্দেশেক সেন্সর/ প্রায়-অবলোহিত ধারক ও ফাঁটলহীন বর্ণালিবীক্ষণ (Fine Guided Sensor/Near-Infrared Imager and Slitless Spectrograph: FGS/NIRISS) : ০.৬ – ৫ মাইক্রোমিটার



চিত্রঃ ৬ - ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের বিভিন্ন অংশ

জেম্‌স ওয়েব টেলিস্কোপকে মহাকাশে নিয়ে যাবার জন্য যে রকেট, তার নাম Ariane 5, এটি দিচ্ছে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি। চোখা লম্বাটে রকেটটির একেবারে মাথায়, সামনের অংশে (payload compartment) গুটিয়ে বসানো হবে ওয়েবকে। আর নিচের অংশে থাকবে ফুয়েল, এঞ্জিন ও বুস্টার। রকেট হলো একবার ব্যবহারযোগ্য মহাকাশ-বাহন। জায়গামতো (L2) যাওয়ার পথে ধাপে ধাপে এর বিভিন্ন অংশ, ব্যবহারের পরে ভেঙে আলাদা হয়ে মহাকাশে ছিটকে পড়বে, আর একেবারে সামনের ক্যাপসুলটা চলে যাবে L2-তে। সেখানে গিয়ে কিংবা কাছাকাছি গিয়ে ক্যাপসুল খুলে জেম্‌স নিজে উড়াল দিবে, তারপর বুস্টার দিয়ে একটু একটু করে পযিশন নিয়ে তারপর গুটানো ফুলের পাঁপড়ি মেলার মতো করে আয়নাগুলো খুলবে।




চিত্রঃ ৭ - দেখতে যেমন লাগবে

দেখতে যেমনই হোক এই টেলিস্কোপ উড্ডয়নের পর এই যন্ত্র যে মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন মাত্রা যোগ করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই । হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে আমরা জেনেছিলাম এই মহাবিশ্ব এবং সৌরজগৎ সৃষ্টির রহস্য , নক্ষত্র সৃষ্টির অজানা তথ্য , মহাবিশ্বের বয়স ছাড়াও আর অনেক কিছু । নতুন প্রজন্মের ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের কাছে প্রত্যাশা আরও অনেক বেশি হওয়াই স্বাভাবিক । তাই নতুন কিছু দেখার অপেক্ষায়..।। শেষ করলাম।
ধন্যবাদ ।

পর্ব ১ঃ একটি মেগা প্রকল্পের বিশ্লেষণঃ The Ocean Cleanup
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৫ রাত ৯:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×