তথাকথিত সুশীল সমাজ আমাদের শিশুদেরকে দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন।
উন্নতমানের শিশু আর পথশিশু।
আবার উন্নতমানের শিশুদের মধ্যে আরো তিনভাগ করেছেন।
১.সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশু।
২.রূপার চামুচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশু।
এবং ৩. ব্রোঞ্জের চামুচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশু।
অর্থাৎ সুশীল সমাজের মতে, যারা এই তিন চামুচের মধ্যে অন্তত একখানা চামুচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করে তাদেরকে উন্নতমানের শিশু বলে।
অপরদিক দিয়ে, যারা পথের মধ্যে কিংবা বাংলা কোন অনুন্নত সরকারী হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে এবং জীবনব্যাপী বাংলার কোন রাস্তার ফুটপাতে দিনাতিপাতি করে তাদেরকে, পথশিশু বলে।
শীতকালে সুশীল সমাজ স্বীকৃত উন্নত শিশুদের বস্ত্রের পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে অধিক হয়।যেমন ধরুন, মামা আমেরিকা থেকে নীল রঙয়ের একটা পাঠিয়েছে, খালা ইংল্যান্ড থেকে লাল রঙয়ের একটা পাঠিয়েছে। তার উপর, বাবা সবচেয়ে দামী Adidas কোম্পানীরটা কিনে দিয়েছে।
অপরদিকে, তথাকথিত পথশিশুদের অবস্থা,
“রাস্তায় রাস্তায় শীতে মরি রে,ভাই
পাছায় জোটে না ত্যানা।”
আজ বিজয় দিবস। এই উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের আয়োজন করা হয়েছে। শুধুমাত্র এই দিনটা উদযাপনের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা হচ্ছে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,বড় বড় সংস্থাগুলো শুধুমাত্র বিনোদনের জন্যে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কনসার্টের আয়োজন করেছে। এটাকেই কি বিজয় দিবস সঠিকভাবে পালন করা বুঝায়??
আজকের দিনেও কত পথশিশু, কত পরিবার অন্নাভাবে, ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে। কিংবা শীত সহ্য করতে না পেরে রৌদ্রতাপ গায়ে মাখছে।আর আমরা! আমরা আরাম কেদারায় বসে ওদের কষ্টটা উপভোগ করছি!!
বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কনসার্টের আয়োজন করতে হবে, এমন তো কোন কথা নেই!!
যদি এই টাকাগুলো ঐসকল অন্নাভাবী,ক্ষুধার্ত পথশিশুদের জন্য ব্যয় করা হত। তাহলে হয়ত দেশের জন্য প্রাণদানকারী ঐসকল মুক্তিযুদ্ধদের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পেত।
আমরা অর্থাৎ বাঙালীরা এখনো অবুঝ থেকে গেলাম। অবুঝ বললে ভুল হবে। আমরা মূর্খ!! আমরা বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কনসার্টের আয়োজন করতে পারি। কিন্তু চোখের সামনে স্বাধীন বাংলার অন্নাভাবী,ক্ষুধার্তের জন্য সামান্য অন্নের ব্যবস্থা করতে পারি না!!
আমরা নিজের শিশুদের জন্য প্রয়োজনের অধিক,উন্নতমানের শীতবস্ত্রের বন্দোবস্ত করতে পারি। কিন্তু চোখের সামনে স্বাধীন বাংলার শীতার্ত পথশিশুদের জন্য নিম্নমানের শীতবস্ত্রের বন্দোবস্ত করতে পারি না!! বাহ! বাহ!! বাহ!!!
আমাদের সুশীল সমাজ বলে, "ঐসকল ক্ষুধার্ত,শীতার্ত, অন্নাভাবীরা অনাহারে কিংবা ঠান্ডায় মরুক, তাতে আমার কি!!"
.
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯