somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উৎসব সার্বজনীন হতেই পারে কেন সার্বজনীন হয়? কেন সার্বজনীন হবে এসব প্রশ্নের কোন অর্থ নেই!

০৭ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ অথবা দুর্গা পূজা সার্বজনীন কিনা এই বিতর্কের অবতারণা করা এই যুগে হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই মনে করি না।

ঈদ, আমার ধর্মের একটি উৎসব। ঈদের উৎসবে আমাদের দেশে আয়োজন করা হয় নানা আচার অনুষ্ঠানের। বিভিন্ন বাসা বাড়িতে রান্না করা হয় চমৎকার সব খাবার। এখন প্রশ্ন হলো এই যে এত আয়োজন অনুষ্ঠান করা হচ্ছে এসবই কি মুসলমানদের জন্য? হিন্দুরা কি এর বাইরে থাকেন?

আমি দু'টো ঈদ এমন কাটিয়েছি যে, আমি যে মসজীদে ঈদের নামাজ পড়ি, তার ঠিক বাইরে আমার একজন বন্ধু সান্তুনু দাস পায়জামা পাঞ্জাবী পড়ে দাঁড়িয়ে থাকত। আমার নামাজ শেষ হলে, আমি তার সাথে গিয়ে কোলাকুলি করতাম। তারপর আমার বাসায় নিয়ে যেতাম। তাকে খিচুড়ি ভোগ করাতাম। ঠিক তেমনি, তার পূজোর সময় আমি একই ভাবে তার বাড়িতেও গিয়েছি। সেখানে নানারকম মুখরোচক খাবার খেয়েছি, পূজা মন্ডপে সে দেবীকে প্রণাম করেছে আর আমি পাশে দাঁড়িয়ে দেবীদের সাজ পোষাক দেখেছি, পুরোহিতের মন্ত্র পড়া দেখেছি, আর ঢাকের শব্দ শুনেছি।

প্রত্যেকটা ধর্মীয় উৎসবে দুইটা জিনিস থাকে। একটা হলো প্রার্থনা পর্ব। আরেকটি হলো উৎসব। এই উৎসবটা সার্বজনীন হতে দোষ কোথায়? আমি জানি না। আমি তো পূজা করছি না, তা বলে কি, মন্ডপে গেলে আমার ধর্ম নষ্ট হয়ে গেল? এটা কোন যুক্তিই হতে পারে কি?

হিন্দু কোন বন্ধুকে দেখিনি, আমি তার সাথে কোলাকুলি করতে গেলে সে বিচলিত হচ্ছে। তার মনে তো এই প্রশ্ন জাগে না, যে এটা মুসলিম রীতি, আমি কেন এটা করছি। এটা উদারতা বৈ আর কিছু নয়। পক্ষান্তরে এসব নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে একটা বিশালাকার হীনমন্যতা কাজ করে। কেন পূজা দেখতে যাব? কেন কোন হিন্দুকে আমি শারদীয়া শুভেচ্ছা জানাবো?

আমি মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেছি। সেখানে এক ক্লাসে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান সবাই একসাথে ক্লাস করতাম। কখনও রোজার সময় দেখতাম না কোন হিন্দু, অথবা বৌদ্ধ আমাদের সামনে পানি খাচ্ছে। তার মনে তো এই জিনিসের উদ্ভব হয়নি, যে ও রোজা রাখছে তো আমার কি? আমি পানি খাই, খাবার খাই। মুসলমানদের মধ্যে কি এই সহানুভূতিটি কাজ করত?

আমরা ইফতার পার্টি করতাম। সেখানে সব ধর্মের লোকের সমাগম হতো। এবং ইফতারের খাবার সামনে নিয়ে যে অপেক্ষা করতে হয় তা হিন্দু, খ্রিষ্টানরাও করত। আযানের সাথে সাথে তারাও রোজা ভাঙ্গার মত একটি খেজুর খেয়ে খাওয়া শুরু করত। কোনদিন বিধর্মী একজনকেও দেখলাম না, যে ইফতার পার্টিতে আসে নাই। তাদের মনে একটি বারের জন্যও কি উদ্ভব হয়না, যে আযানের সাথে সাথে আমি খাচ্ছি, আমার তো ধর্ম চলে গেল।

ইফতার পার্টিও একটি ছোট্ট উৎসবের মতই নয় কি? এর পরে বসত আড্ডা। সেই আড্ডায় আমরা হারিয়ে যেতাম কথার জঙ্গলে। তারপরে একসাথে ডিনার সেড়ে চলে যেতাম যে যার বাসায়।

ঈদকে যদি আপনারা সার্বজনীন বলতে না চান, তাহলে এমন ব্যবস্থা করুন না, যে ঈদ উৎসবের যত আয়োজন হয়, সবকিছু থেকে অন্য ধর্মাবলম্বীদের বাদ দেওয়া। সেটা কি সম্ভব? ঈদের আগেরদিন একটি গান বাজে, "রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ", এইগানটা দেশের মানুষের কাছে এত জনপ্রিয় যে আমার পরিচিত একজন বিধর্মি ছেলে আমার কাছ থেকে এই গানটি চেয়ে নিয়ে গিয়েছিল। পারবেন, এই গান থেকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বিরত রাখতে?

ঈদের অন্যান্য যে সকল আয়োজন হয়, যেমন কনসার্ট, গান, হাসির অনুষ্ঠান, নাটক...কেউ কি গুণে বলতে পারবে, ক'টা হিন্দু এসব দেখলো বা ক'টা মুসলমানই বা দেখলো? তা কি সম্ভব?

দুর্গোৎসবে যোগ দেওয়া মানে পূজা করা নয়, দেবীর আরাধনা করা নয়। এর অর্থ হলো, এই উৎসবের সমস্ত অনুষ্ঠানকে উপভোগ করা, অন্তর দিয়ে এর মাহাত্ব উপলব্ধি করা । কোনভাবেই কোন গণ্ডি দিয়ে একে কিছু মানুষের জন্য আলাদা করে দেওয়া যাবে না।

আবারও বলছি, ধর্মীয় উৎসবের দুইটি দিক থাকে। একটা ধর্মীয় আচার পালন, যেটা নির্দিষ্ট ধর্মের লোকেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু আনুসাঙ্গিক উৎসবের সমস্তই সার্বজনীন। এইজন্য একে বলে সার্বজনীন দুর্গোৎসব।

এবার আসি ভারতের কথায়। ভারতে আমাদের থেকে বেশি মুসলমান আছে। অথচ সেই দেশের চ্যানেলগুলো নাকি ঈদ নিয়ে মাতামাতি করে না। তাহলে কি এই ব্যপারে আমাদের ভারতীয়দের অনুসরণ করতে হবে? এমনিতে ভারতকে আমরা দেখতে পারি না, কিন্তু উদাহরণ টানতে তো আমাদের ভারতের কাছেই যেতে হয়।

ভারতে মুসলমানদের অবস্থা কি সেটা জাকির নায়েকের সম্মেলন দেখলেই বুঝা যায়। এমন একটা সম্মেলন কি আমরা হিন্দু ধর্মাবম্বীদের করত দিতাম? সে প্রশ্নটা একবার নিজেকে করে দেখুন। মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেসে কতজন মুসলমান এমপি আছে একবার দেখে নিন Click This Link । এটা শুধু পশ্চিম বাংলার চিত্র। পুরো ইন্ডিয়ার কথা বাদই দিলাম। এবার বলেন, আমাদের দেশে কয়জন হিন্দু, খ্রীষ্টান বা বৌদ্ধ এমপি আছেন? ভারতকে অনুসরণ করাটা মনে হয় অত সহজ নয়, কি বলেন?

সনি, স্টারপ্লাস, স্টার জলসা, জি-বাংলা এইসব চ্যানেল পূজা উপলক্ষে কোন লোগো বসায় না। তবে তারা তাদের সিরিয়ালগুলোর মধ্যে এই উৎসব পালনের চিত্রগুলো দেখায়। আর আমাদের দেশের অনুষ্ঠান চিত্র একেবারেই ভিন্ন। আমাদের সব চ্যানেলে উৎসবে লোগো দেওয়া হয়। এটা আমাদের রীতি। আর আমাদের যেহেতু সোপ অপেরা নাই, মানে ডেইলি ব্যসিসের সিরিয়াল, তাই আমরা নানারকম অনুষ্ঠান দিয়ে উৎসবগুলোকে ফুটিয়ে তুলি। আমাদের দেশের চ্যানেলগুলো কে কি এখন ভারতকে ফলো করতে হবে? প্রশ্নটির উত্তর জানবার অপেক্ষায় থাকলাম।

ভারতীয় সিরিয়ালগুলো হিন্দু ফ্যামিলি ব্যসিসে তৈরি করা। সুতরাং সেখানে ঈদের কোন কিছু দেখানোর মানে হয় না। তবে মুসলমান চরিত্র নিয়ে যদি কোন সিরিয়াল হয়, থাকে, তাহলে ওরা ঈদকে হাইলাইট করবে। "কেয়া পাতার নৌকা", নামক একটি সিরিয়াল চলে জি-বাংলায় যেটাতে আমি মুসলমান ধর্মীয় কার্যালাপ দেখেছি।
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×