somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদেরকে এক অন্ধকারে ফেলে পিতা তুমি চলে গেলে

১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় বঙ্গবন্ধু,

তুমি চলে গেছো আজ প্রায় চল্লিশ বছর হতে চলল। আমাদেরকে এক অজানা অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিয়ে তোমার চলে যাওয়া। তোমার সরকার ব্যবস্থাকে যারা কটাক্ষ করে তোমার পুরো পরিবারকে শেষ করে দিয়ে আমাদেরকে যারা নতুন দিনের গল্প শুনিয়েছিল, সে গল্পের পরতে পরতে ছিল রক্তের দাগ, রক্তের গন্ধ ও সীমাহীন উন্মাদনা।

১৯৭৫ সালের পর ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ইতিহাস খালি রক্তের আর খুনাখুনির। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ক্যু আর পাল্টা ক্যু চলতেই থাকল। আর এসবের মধ্য দিয়ে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় অবিভাবক তাজউদ্দিন, নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান আর মনসুর আলীকে।

ঘাতকদের ইচ্ছা, বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর। তা না হলে ছোট্ট শিশু রাসেলের কি দোষ ছিল? কি দোষ ছিল তাজুদ্দিন আহমেদের? সবই আমাদের কাছে অজানা। যা পাকিস্তানি হায়নারা করতে পারেনাই, তা বাংলাদেশি কুলাঙ্গারেরা করে দেখাল। দেখাল রক্তের এক ভয়াবহ ইতিহাস। যে ইতিহাস আমাদেরকে আজও ভুল, মিথ্যা আর হানাহানির মধ্যে ফেলে রেখেছে।

দুঃখজনক হলেও তো সত্যি, সেদিন খুব ইচ্ছা হচ্ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে আমি আমার গাড়িতে ওড়াবো। এখন ভয় হয়। বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বের হলে আমাকে হত্যা করা হতে পারে। কি আশ্চর্য তাই না? কি অদ্ভূত।

এই হায়নাদের আমরা ভুলে গেলাম। আমরা তাদেরকেই ক্ষমতায় বসালাম, আমরা চরম লোভি একটি জাতে পরিণত হলাম।

স্বাধীনতার এতগুলো বছর পর, আমরাই হিন্দুদের মারছি, মারছি বৌদ্ধদের। আমাদের হিংসা, বিদ্বেষের কোন কমতি নেই। তোমার দেখানো একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র আমরা করতে পারিনি।

বঙ্গবন্ধু জানো কি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বন্ধু উত্তম কুমার দত্ত যেদিন স্নেহভরে আমাদের ক'জনের হাতে স্বরস্বতি পুজার কার্ডটা দিয়ে বলেছিল পুজায় এসো, সেদিন আমার বন্ধু আমাকে বাঁধা দিল। বলল, ওরা হিন্দু। ওদের সাথে আমরা নাই। ছি ছি ওরা হিন্দু। ছি!

হ্যা, এই আমাদের অবস্থা। যখন বৌদ্ধ মন্দিরে মন্দিরে ভয়ংকর হামলা হলো, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ আগালো না। কেউ কোন কথাই বলতে চাইল না। কারণ তারা বৌদ্ধ, ছি! তারা বৌদ্ধ, তারা মানুষ নাকি? তারা বৌদ্ধ!


পরিস্থিতি কতটা খারাপ সেটা বোঝা বড় দায়। বন্ধুর মোবাইলে ভিডিও দেখলাম এক পুলিশ এক মওলানাকে লাত্থি মারছে। তার গায়ে নাম লেখা, সে নাম এক হিন্দুর। তবে তাঁর চেহারা দেখা গেল না। তাই- সব মানুষে বিশ্বাস করছে। এই প্রতিহিংসার বিষ ঢুকছে তো ঢুকছেই।

টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে বিশ্বজিৎ দাসকে তোমার দলের লোকেরাই পেটাল, তোমার দলের আমলেই বৌদ্ধদের উপর, হিন্দুদের উপর হামলা হলো। এসবের বিচার আমরা পাইনি। লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়।

দুঃখ অনেক। বলে শেষ করা যাবে না। প্রকাশ্যে বাংলাদেশের নারীদের ক্লাস ফোর ফাইভ পর্যন্ত পড়তে বলা হয়। ছি! লজ্জা!

এভাবে করে বাংলাদেশ পাকিস্তানের পথেই হাটছে। আর সেইদিন বেশি দূরে কি, যখন সকাল বিকাল বোমা হামলার খবর পাওয়া যাবে????

প্রশ্ন রইল, বন্ধবন্ধু তোমার কাছে।

মনে পরে, তুমি আমার স্বপ্নে এসেছিলে একবার। আমি তোমাকে দেখে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলাম। তুমি সম্ভবত আমার দুঃখগুলো বুঝতে শিখেছিলে। আমার কাছে এসে আমার নাম জিজ্ঞেস করলে। আমিও বললাম। তারপর, তুমি বললে সেই দুটো কথা। দুটো আশা জাগানিয়া কথা। "বাঙালি কখনও হারে নারে, চিন্তা করিস কেন"?

আমি হারতে চাই না বঙ্গবন্ধু। আমার ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেকেরও বেশি বন্ধু আমাকে ছেড়ে গেছে। তাদেরকে আমি সাম্যের কথা বলতে গেলেই তারা তেড়ে আসে। তবুও আমি এ লড়াই করে যাই। মানুষকে মানুষ ভাবতে শিখাই।

তোমার জীবনটা খুবই বর্ণাধ্য। বড় আক্ষেপ হয় তোমাকে জীবিত দেখি নাই বলে।

পরিশিষ্টঃ জয় বাংলা, জয় বাংলা, জয় বাংলা।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×