ঘড়ি মাপা এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙে। চোখ ভাঙা ঘুমে ধরা বাসটায় ঝুলে তবেই জেগে থাকাটার শুরু।
অনেক রকম শব্দ শোনা যায়।
কারো ফোন বাজছে, কারো ফোনে কথা চলছে অলরেডি। বাতাসে তখন ঘামের গন্ধ। ছোট ধূলিকণাও যেন জানাতে চায়, এই সাতসকালে সেও জেগে আছে। বাতাসে ধুলা ওড়ে, শব্দ ছড়ায়। আমি কিছু বলারই সুযোগ পাই না।
থাক, আমি কিছু বলতেও চাই নি,
আমি তো বেঁচে থাকার কথা বলি......
শহর কিসে জাগে? শহর কিসে বাঁচে?
প্রতিদিনের সকালে কন্ডাক্টরের গলার আওয়াজে স্বপ্ন ভাঙে। বাস চলে, শত মানুষের ঘাম পুড়িয়ে বাস চলে। ফুসফুসের বাতাস শব্দ হয়ে বের হয়। তার জায়গা নেয় উড়তে থাকা ধুলা আর ধোঁয়া।
গাড়ির ধোঁয়া কালো হয়, সিগারেটেরটা সাদা।
শহরের মানুষগুলো আস্তে আস্তে মরে যায়। তারা টেরও পায় না।
নাকি টের পায়? বাসের অন্য সব জায়গার চেয়ে গেটেই তো ভিড়টা সবচেয়ে বেশি। কেন? তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাবার জন্যই তো?
মানুষ বেরুতে চায়, দাঁড়াতে চায়, হাঁটতে চায়, ছুটতে চায়!
পালাতে চায়!!!
পালিয়ে বাঁচতে চায়!
বাসভর্তি মানুষগুলোর মুখে তাই দুঃখ দেখেছি, ক্লান্তি দেখেছি, রাগ দেখেছি। শান্তি দেখি নি কোনোদিন।
শতশত অশান্ত মনের চাপা কান্না মিশে এক নিরব চিৎকারে রূপ নেয়। সেই চিৎকারে চাপা পড়ে যাই, আমার কথা শোনাই যায় না!
থাকগে, ঐ মরতে থাকা মানুষগুলোকে আমি কিছু শোনাতেও চাই না!
আমি তো বেঁচে থাকার কথা বলি......
ওদের চিৎকার কী শহর শোনে? শোনে না হয়ত। কোনোদিন তো বলতে শুনি না। শহর "বলাকা"-র কথা বলে না, "ফাল্গুন"-এর কথা বলে না। বলে না "অনাবিল", "আলিফ" কিংবা "তুরাগ"-এর কথাও। শহর বলে "গুলশান", "বনানী", "ফখরুদ্দীন-এর বিরিয়ানি", পুরান ঢাকার "বাকরখানি"।
কত কবর সমান হয়ে যায়। কত রক্তে ভিজে শক্ত হয় সিমেন্ট। মরে যাওয়া মানুষগুলোর হাড়ের উপর শহর গড়ে ওঠে। সেই শহরে আরেকদল মানুষ টাকা দিয়ে বাতাস কেনে, বেঁচে থাকে। নাম হয় শহরের, দাম বাড়ে জমির। যারা মরে ছিল তারা মরেই থাকে।
থাকুক, আমি তাদের জন্য কথা বলি নি তো কোনোদিন!
আমি তো বেঁচে থাকার কথা বলি......
শহরের রূপ বড় চেনা লাগে। কোথায় দেখেছি? মেলাতে পারি না।
আমি কি এতটাই আলাদা? লজিকাল লাইফ মেনে চলা ফিট শার্টের দলে তো আমি নই। কিন্তু টিকতে তো পারব না কবিদের দলেও! পাগলের পাগলামিতেও নিজেকে খুঁজে পাই না। পাখির ডানার মুক্তিতে আমি নেই। নেই কারাগারের গরাদবন্দি স্বপ্ন পঁচা নষ্ট মানুষদের দলেও।
আমি তবে কে?
শহরের ছাঁচে ফেলে নিজের যায়গা খুঁজে পাবার চেষ্টা করি। হঠাৎই মনে পড়ে, শহরের রূপটা বড় চেনা।
শহর কে?
আমিই শহর!!
মৃত্যুতে যার ভিষণ ভয়!!
আমি তাই চুপ করে থাকি।
আমি মৃত্যুর কথা বলি না,
বলতে চাই না!
আমি তো বেঁচে থাকার কথা বলি.......