somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একগাদা কান্নাকাটির গল্প। (আপনাদের সময় নষ্ট করার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত.....)

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাচ্চাটা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছে। আমি হা করে তাকিয়ে দেখছি। আমি কিচ্ছু করছি না দেখে বাচ্চা আরো জোরে জোরে কাঁদছে। বাচ্চার কান্না থামানোর চেষ্টা করা উচিত। এই বাচ্চার কান্না থামানোটা ভয়ংকর কঠিন কাজ। আমার অভিজ্ঞতা বলে, এই বাচ্চার কান্না থামানো যায় না। বাচ্চার দোষ তেমন নাই অবশ্য। বাচ্চা কাঁদলে বাচ্চার বাবা দৌড়ায় আসে, কোলে তুলে নিয়ে পিঠে চাপড় মেরে কান্না থামানোর চেষ্টা করে। গরিলা সাইজের বাবার দেড় মণ ওজনের হাত, নরমালি পিঠে হাত বুলায়ে দিলেও আমরা ব্যাথা পাই। বাচ্চা তো সেখানে চাপড় খায়, খেয়ে গলা ফাটায় চিল্লায়। এই বাচ্চার কান্না একমাত্র থামাইতে পারে তার মা....

বাচ্চার মা এখন কাছে নাই। নাই বাবার চেয়ে কানা বাবাও হয়ত ভালো, বেচারার বাবাও এখন কাছে নাই। বাচ্চার মামা আমার বন্ধু হয়। তার একমাত্র বড় বোনের একমাত্র ছেলে, বেচারা বাচ্চারে একা রেখে কোথাও যাইতে ডরাইতেছে। তাকে মাঝেমধ্যের টয়লেট ব্রেক দিতে আমার উপস্থিতি।

হালায় আমারে বাচ্চার কাছে গছায় দিয়া সেই যে বাথরুমে ঢুকছে, আর বাইর হওয়ার নাম নাই। তারে ডাকতে যেয়ে দেখি বাথরুম থেকে সিগারেটের গন্ধ আসে। তারে এখন বাথরুম থেকে বের করা সম্ভব না। আমি হতাশ হয়ে বাচ্চার কাছে এসে বসি।

বাচ্চা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতেছে তো কাঁদতেছেই.....

বাচ্চাটার কান্না থামানোর জন্য আমার কিছু করা উচিত। এইটা বাচ্চাটাও বুঝতেছে, আমাকেও বুঝানোর চেষ্টা করতেছে। আমি বুঝার চেষ্টা করতেছি না। মুগ্ধ নয়নে একজন মানুষের কান্না দেখছি। হ্যাঁ, একটা মিনি সাইজের, কাজ-কর্মে অক্ষম, অন্য মানুষের উপর ফুললি ডিপেনডেন্ট, বেচারা টাইপের মানুষ; তবু, মানুষ তো। আর মানুষটা কাঁদছে.....

মানুষ কাঁদে।
হ্যাঁ, মানুষই তো বেশি কাঁদে। ল্যাক্রিমাল নামের একটা গ্ল্যান্ড আছে, তার সিক্রেশন হয়; মানুষ কাঁদবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তাহলে মানুষকে কাঁদতে দেখলে এতটা অস্বাভাবিক লাগে কেন? খারাপই বা লাগে কেন?

সামনের বাচ্চাটার মত পিচ্চি ছিলাম একসময়। আমিও হয়ত এতটাই কাঁদতাম। সবাইই কাঁদে। তারপর বয়েস বাড়ে। ক্ষেত্র বিশেষে খুব করে কান্না করা তখনও জায়েজ, "আম্মু, গাড়িটা দাও না কিনেএএএএ.... (ভ্যাঁএএএএ কান্না)"
বয়েস আরেকটু বাড়ে। কান্না তখন ফোঁপানির গন্ডি পার করাও নিষেধ, সেও আবার খুব কাছের মানুষের চেনা গন্ডির মধ্যে। বাইরের কারো দেখতে মানা। আরও কিছুদিন পর সেই কাছের মানুষদের কাছ থেকেও আড়ালে চলে যেতে হয়। ঘরের ভেতর লুকিয়ে কাঁদে কেউ কেউ। কেউ কেউ সেখানেও মুখ শক্ত করে রাখে।

আমি কিন্তু খুব কাঁদতাম। ছিঁচকাঁদুনে ছিলাম, অনেক বড় হওয়া পর্যন্তও সামান্য কারণে কাঁদতাম। এতটাই কাঁদতাম, যে নিজের মা পর্যন্ত পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে বসলেন, "ছেলেমানুষ, এত কাঁদতে আছে?"

খুব নাটক করে বলা যায়, "তারপর থেকে আমি আর কাঁদিনি", মিথ্যে বলা হবে।
অনেক কেঁদেছি, এখনও কাঁদি, বেশিরভাগ সময়ই একা কাঁদি। কারণে কাঁদি, অকারণে কাঁদি। অন্য সব মানুষও কাঁদে। আপনিও কাঁদেন, বাথরুমে বসে থাকা আমার বন্ধুটাও কাঁদে। আমি দেখেছি, আমার কাঁধে মুখ লুকিয়েই কেঁদেছে কতদিন......
বেশিরভাগ মানুষের কান্নাই এক উপরওয়ালা ব্যতিত আর কেউ শোনে না। আর উপরওয়ালা শুনেও তাতে খুব বেশি পাত্তা দেন বলে মনে হয় না.....

বাচ্চাটার কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে কিছুক্ষণ ফোঁপায়, তারপর আবার কাঁদে। কত বছর হবে বাচ্চাটার? এটুকু বয়সে লাইফ লেসন দেয়ার জন্য বসায় বসায় কাঁদানো ফালতু একটা কাজ হচ্ছে। এই কথাটা নিজে উপলব্ধি করে বাচ্চাটাকে কোলে নেবার আগেই বন্ধু মহাশয় হই হই করে মামাগিরি ফলাইতে আসে,
"কিইইই রে, পোলাটারে বসায় বসায় কান্দাইতাছস! কোলে লইতে পারস না?"
"দোস্ত, আমি ডায়পার ডরাই!"
"হ হইছে, যা অহন, ভাগ।"
"ভাগ মানে? আমার বেনসন কই?"
"তুই না খাস না?"
"খামু না, দোকানে বেচুম। ওই টাকা দিয়া কোক কিনুম, না পাইলে স্প্রাইট কিনমু, তুমি আমার ভাগ মারতে পারো না!"

বন্ধু তার ভাগনের ডায়পার পাল্টাচ্ছে। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি।
না না, সিগারেট খাচ্ছি না। খুব গরম বলেই কি না, ঘরে দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমার একটু খোলা হাওয়ার দরকার......
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×