যেখানে আকাশে পাহাড় ও ঝর্ণা মিলে মিশে একাকার আর হাতছানি দিয়ে ডাকে সমুদ্র সেই অপরুপ প্রকৃতির নাম সীতাকুণ্ড।চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার উত্তরে যার অবস্হান।এর রূপে মুগ্ধ হয়ে কবি নজরুল লিখে ছিলেন তার সেই বিখাত্য গান ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমাই...’। সীতাকুণ্ড অপরূপ প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের লীলাভূমি । এ এলাকা শুধু হিন্দুদের বড় তীর্থস্থানই নয় খুব ভাল ভ্রমনের স্থানও বটে।সীতাকুণ্ডের পূর্বদিকে চন্দ্রনাথ পাহাড় আর পশ্চিমে সুবিশাল সমুদ্র ।যে সকল ভ্রমনকারী প্রকৃতিকে ভালবাসেন প্রকৃতিকে খুব কাছের থেকে উপভোগ করতে চান তারা অবশ্যই সীতাকুণ্ডে আসতে হবে।
ইতিহাস
প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ও ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় প্রাচীন কালে এখানে মহামুনি ভার্গব বসবাস করতেন।অযোদ্ধার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র তার বনবাসের সময় এখানে এসেছিলেন।মহামুণি ভার্গব তাঁরা আসবেন জানতে পেরে তাঁদের স্নানের জন্য তিনটি কুণ্ড সৃষ্টি করেন এবং রামচন্দ্রের এখানে ভ্রমণ কালে তাঁর স্ত্রী সীতা এই কুণ্ডে স্নান করেন।এই কারনেই এখানকার নাম সীতাকুণ্ড বলে অনেকে ধারনা করেন।
চন্দ্রনাথ পাহাড়
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৪কি.মি. পূর্বে চন্দ্রনাথ পাহাড় অবস্থিত । আপনি পায়ে হেঁটে অথবা রিক্সায় চড়ে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যেতে পারেন।কিন্তু পায়ে হেঁটে ভ্রমনের মজাই আলাদা, কারন চন্দ্রনাথ পাহাড় শ্রেণীভূক্ত ছোট পাহাড় গুলো ব্যাসকুণ্ড থেকে শুরু হয়েছে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে হিন্দুদের কিছু ধর্মীয় স্থাপনাও আপনার চোখে পরবে। এই এলাকা বিভিন্ন ধরনের গাছ, বুনফুল এবং গুল্মলতায় পরিপূর্ণ। বোটানি এবং জীববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের শিক্ষা প্রকল্পের কাজের জন্য প্রায়ই এখানে আসেন। এখানে আপনি পেয়ারা, সুঁপাড়ি, আম সহ বিভিন্ন ফলের বাগান দেখতে পাবেন।এখানে কিছু নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষও বসবাস করে, যারা ত্রিপুরা নামে পরিচিত এবং এখানে তাদের কিছু গ্রামও আছে। আপনি যদি পাহাড়ের গভীরে যান তবে পাহাড়ের গায়ে ফসলের চাষ হচ্ছে দেখতে পাবেন, এ গুলোকে জুমক্ষেত বলে; গভীর পাহাড়ের ভেতরে আপনি বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা ফুলের বাগানও দেখতে পাবেন। এখানে অনেকগুলো ঝর্ণা আছে তবে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে আপনারা শুধু একটি মাত্র ঝর্ণা দেখতে পারবেন, এস্থান থেকেই পাহাড়ে উঠার পথ দু ভাগে বিভক্ত হয়েগেছে, ডানদিকের দিকের রাস্তা প্রায় পুরোটাই সিঁড়ি আর বামদিকের রাস্তাটি পুরোটাই পাহাড়ী পথ কিছু ভাঙ্গা সিঁড়ি আছে। বাম দিকের পথ দিয়ে উঠা সহজ আর ডানদিকের সিঁড়ির পথদিয়ে নামা সহজ, তবে আপনি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী পথ ব্যবহার করতে পারবেন।এখানে সীতা মন্দিরের কাছে আরও একটি ঝর্ণা আছে তবে এটা শুকিয়ে গেছে, অন্য ঝর্ণা গুলো গভীর বনের মধ্যে অবস্থিত। বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ধুয়ে গাছের পাতা যখন পরিষ্কার, সতেজ হয়ে যায় তখন দেখতে খুবই সুন্দর লাগে তখন পাহাড়গুলোকে দেখতে পূর্ণ যৌবনা মনে হয়। কিন্তু বর্ষাকালে পাহাড়ে উঠা খুবই বিপদজনক।
ইকোপার্ক
সীতাকুণ্ড বাজারের ২ কিলো দক্ষিণে অবস্হিত ১৯৯৬ একরের সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন।ফকিরহাট বাজার থেকে পায়ে হেঁটে মাত্র ১০ মিনিটেই পোঁছানো যায় ইকোপার্কে।এটি বাংলাদেশের ১ম ইকোপার্ক। পার্কের মুল ফটকে এলে পাওয়া যায় প্রবেশ টিকিট । জনপ্রতি মাত্র ১০ টাকার টিকিটে ঘোরা যায় পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের সর্বত্রই। পার্কের মুখেই রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের সু-ব্যবস্থা। কেউ ইচ্ছে করলে গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন উপরেও। তবে সেক্ষেত্রে টেক্সী, মোটর সাইকেল, মাইক্রো বা অন্য গাড়ি ভেদে ট্রাভল চার্জ দিতে হয়। ইকোপার্কের অন্যতম মূল আকর্ষন হলো প্রাকৃতিক ঝর্ণা ও হাজারো রকমের দুর্লভ প্রজাতির গাছ। তাছাড়া পার্কের চুড়া থেকে সোজা পশ্চিমে তাকালে দেখাযায় বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ। পার্ক থেকে মাত্র কয়েক কিঃমি পশ্চিমে এই সমুদ্র হওয়ায় বিকেলে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বেশিরভাগই এখানে এলে সমুদ্রে সূর্যাস্ত দেখে যান। আর এক ঢিলে দুই পাখি পাহাড় ও সমুদ্র দর্শন। পাহাড়ী আঁকা-বাঁকা পথের বাঁকের সবুজ অরণ্যে মন হারান অনেকেই। সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের ভেতরের যে সোন্দর্য্য তা এক কথায় অপরুপ। এখানে রয়েছে দুর্লভ প্রজাতির গোলাপ বাগান, অর্কিড হাউস, গ্রীণ হাউস, পদ্ম পুকুর, ভ্যালি ব্রীজ, প্রাকৃতিক লেক, নয়নাভিরাম ঝর্ণা, আর হাজারো পাখির কলতান। ভাগ্য ভালো হলে দেখা পেতে পারেন বাঁদর, নানারকম মায়া হরিণ সহ কয়েক প্রকার বণ্য প্রাণীরও।
অন্যান্য
সীতাকুন্ড বাজার থেকে সাড়ে ৪ কিঃমিঃ দক্ষিনে রয়েছে বাড়বাকুণ্ড বাজার।বাজার থেকে প্রায় ১ কিঃমিঃ পৃর্বে পাহাড়ে রয়েছে গরম পানির ঝরনা।বাড়বকুণ্ড বাজার থেকে আরো ৩কিঃমিঃ দক্ষিনে অবস্হিত বাঁশবাড়িয়া বাজার।এখানকার পাহাড়ে দেখতে পাবেন রাবার বাগান।আর সমুদ্র সৈকতকে বলা যায় ২য় কক্সবাজার।বাঁশবাড়িয়া থেকে আরো দক্ষিনে গেলে দেখতে পাবেন জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প।
আসলে সীতাকুণ্ডে ভ্রমনের জায়গা এত বেশি যে ৩ দিন সময় নিয়ে না আসলে সব কিছু ভাল ভাবে না দেখেই চলে যেতে হবে।
থাকাখাওয়া ও যাতায়াত
সীতাকুণ্ডে আবাসিক হোটেল রয়েছে ১টি।নাম সায়মন হোটেল।এটি বাজারের ঠিক পাশেই আবস্হিত।মান মোটামোটি।ভাড়া সিঙ্গেল বেড একরাতের জন্য ১৫০ টাকা আর ডাবল বেড ৩০০ টাকা।এছাড়া ইকেপার্কের রেস্ট হাউস এ ও থাকতে পারেন।প্রায় সব ধরণের খাবারের দোকানই পাবেনই বলে খাওয়াদাওয়া দিয়ে আপনাকে কোন চিন্তা করতে হবে না।
ঢাকা থেকে সব ধরনের বাহনেই সীতাকুণ্ড আসা যায়।বাসে আসলে সরাসরি সীতাকুণ্ড নেমে যেতে পারবেন।আর ট্রেন বা বিমানে আসলে সরাসরি চট্টগ্রাম চলে যেতে হবে।তারপর একেখান মোড় থেকে বাস এবং সিটি গেইট থেকে সিএনজিতে করে সীতাকুণ্ডে আসা যায়।আর সীতাকুণ্ডে ভ্রমনের জন্য সিএনজি বা মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে নেওয়া ভাল।গাড়ি রিজার্ভ করার আগে দরদাম করে নিতে ভুলবেন না যেন।
# পিসির সমস্যার জন্য ছবি দিতে পারলাম না
# পোস্টটি লিখতে গুগলের সাহায্য নেওয়া হয়েছে যাতে আমার লিখার কষ্ট একটু কম হয়
# নানা বিষয়ে সাহায্য করায় কাল্পনিক ভালবাসা ভাই ও আপূর্ণ ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।