আজ এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে।আমরা যারা পিএসসি-জেএসসি চালু হওয়ার আগের জমানার মানুষ, তাদের শিক্ষাজীবনে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা ছিল এসএসসি। স্বাভাবিকভাবেই এই পরীক্ষা নিয়ে আমাদের ভয় আর উৎকন্ঠা যেমন ছিল চরম মাত্রার, তেমনি আশানুরূপ রেজাল্ট করার আনন্দটাও ছিল সীমাহীন।আজকে যারা রেজাল্ট পেল, তাদের আবেগ কিংবা উৎকন্ঠা হয়ত সেই পর্যায়ে যাবে না, তবুও এই রেজাল্ট তাদের একাডেমিক অর্জনের খাতায় একটা নতুন পালক যোগ করবে।
যাই হোক, সারাদিন নিউজফীডে ঘোরাঘুরি করা এ সংক্রান্ত ছবি আর খবর নিয়ে নিজের কিছু ভাবনা শেয়ার করছি সহব্লগারদের সাথে।
১.নিউজ সাইটগুলায় ঢুকে বুঝলাম অন্য যেকোন সময়ের মত এবারও হয় শুধু মেয়েরাই পাশ করেছে, অথবা ছেলেরা "ভি"-চিহ্ন দেখানো পোজ দিয়ে ছবি তুলতে অক্ষম। (আমাদের রেজাল্টের দিন স্কুল ক্যাম্পাসে কোন পত্রিকার ফটোগ্রাফার এসেছিলেন কিনা-অনেক ভেবেও মনে করতে পারলাম না

২. ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা অনেকেই তাদের সন্তান-ছোট ভাইনবোনদের মার্কশীটসহ ফেসবুকে আপলোড করে দিচ্ছেন, যার রেজাল্ট, তার অনুমতির তোয়াক্কা না করেই। অথবা অনুমতি নিয়েছেন, কিন্তু NOC আপলোড করতে ভুলে গেছেন। এমনকি কেউ কেউ পরীক্ষার্থীর নাম-পিতা-মাতার নাম, জন্মতারিখ, রোল নম্বর-এসব তথ্য ঢেকে বা মুছে দেওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তাবোধও করেননি। প্রাইভেসির অধিকার সবার আছে, কিন্তু ফেসবুকের কল্যাণে সেই অধিকারের বিন্দুমাত্র মূল্য নেই।
৩. যেহেতু বেশ কয়েকজনের মার্কশীট দেখেই ফেলেছি, তাই কিছু অবর্জাভেশন লিখে রাখি। একজন ইংরেজীতে পেয়েছে ১৯৮, আরেকজন জীববিজ্ঞানে ৯৮। শারীরিক শিক্ষায় প্রায় সবাই দেখলাম ৫০। এত মেধা!!! কেউ ইংরেজীতে কিভাবে ১৯৮ আর জীববিজ্ঞানে ৯৮ পায়, আমি এখনো বুঝতে পারছি না। আমাদের সময় আর কোথাও না পারুক, স্যাররা পরীক্ষায় আঁকা ছবিগুলোতে নম্বর কমিয়ে দিতেন, ফলে জীববিজ্ঞানে এ প্লাস পাওয়া গেলেও ৯০ এর আশেপাশে যাওয়া কঠিন ছিল (অবজেক্টিভে ৩৪-৩৫ আর প্র্যাকটিকালে ২৫ পাওয়ার পরেও)। এখন জীববিজ্ঞান পরীক্ষায় ম্যাথ আসে কিনা, ঠিক বুঝতে পারছি না। বলছি না নম্বর দেয়াটা খারাপ, তবে একটা মাত্রা বা সীমারেখা থাকা উচিত। অপ্রাপ্তি না থাকলে কেউ কখনো আরও ভাল করার জন্য মোটিভেটেড হয় না
৪.আবার আরেক বেচারীর দেখলাম অন্য সকল বিষয়ে এ+ থাকলেও পদার্থবিজ্ঞানে আসছে ফেল। তার খাতা কোন অপদার্থ পরীক্ষকের হাতে পরেছিল, নাকি কম্পিউটারে ডাটা এন্ট্রি দেওয়ার সময় কোন অপদার্থ ভুল করেছে-বুঝলাম না। বেচারীর অভিভাবক এখন সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।
৫.আমাদের সময় এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল মার্চ মাসে, প্র্যাকটিকাল পরীক্ষাসহ শেষ হয়েছিল সম্ভবত এপ্রিল মাসে। কোন মাসে রেজাল্ট হয়েছিল মনে নেই, তবে কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছিল আগস্ট মাসে। সুতরাং রেজাল্ট তার আগে প্রকাশিত হয়েছিল নিশ্চিতভাবেই। যারা নভেম্বরে এসএসসি'র রেজাল্ট পেল, তাদের কলেজে এডমিশন আর কবে ক্লাস শুরু হবে জানি না। যদি ডিসেম্বর মাসেও তাদের এডমিশন আর ক্লাস শুরু করা সম্ভব হয়, তাহলেও আমাদের তুলনায় এই ব্যাচের (২০২২) ছেলেমেয়েগুলো অন্তত চার মাস পিছিয়ে পড়ছে।
এইচএসসিতে আমাদের সময় এমনিতেই দুই বছরের কম সময় পাওয়া যেত। যতদূর জানি, এই বছর নভেম্বর মাসে এইচএসসি শুরু হয়েছে। এদের কবে রেজাল্ট হবে আর কবে এরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে? ফখরুদ্দিন সরকারের সময় প্রতি বছর ১লা ফেব্রুয়ারী থেকে এসএসসি আর ১লা এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার বারটা বেজে গেছে বহু আগেই। করোনা পরবর্তী প্রতিটা ব্যাচই দীপুমণি'র দীপ্তিময় সিদ্ধান্তের ফলে জীবনের অন্তত ছয় মাস থেকে একবছর হারাচ্ছে।
যাই হোক, যারা পাশ করেছে, সবাইকে অভিনন্দন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৫১