somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আযানের ধ্বনি

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইসলামের প্রতিটা হুকুমের পেছনেই কোন না কোন সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে। এই যেমন আযানের কথাই ধরা যাক। আমরা ছোটবেলা থেকে হাজার হাজারবার আযান শুনে এসেছি, কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছি কি আযানে যে কথাগুলো বলা হয় সেগুলো কেন বলা হয়? অথচ আযানের কথাগুলোর মর্ম অনুধাবন করতে পারলে আযান কানে আসামাত্রই আমরা নামাজ পড়ার জন্য একটা অন্যরকম তাগাদা অনুভব করতাম! এই লেখায় আমি সংক্ষেপে আযানের কথাগুলোর মর্মার্থ আলোচনা করব।

১) আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার

অর্থ: আল্লাহ সবচেয়ে মহান, আল্লাহ সবচেয়ে মহান

“আল্লাহু আকবার” কথাটির মধ্যে চমৎকার একটা ভাষার খেলা আছে। আরবী “কাবির” শব্দের ইংরেজী হলো “গ্রেট”, “আকবার” এর ইংরেজী “গ্রেটার”, আর “আল-আকবার” এর ইংরেজী “গ্রেটেষ্ট”। আল্লাহ তো সবার চাইতে মহান বা গ্রেটেষ্ট, লক্ষ্য করুন তারপরেও এখানে “আল-আকবার” (গ্রেটেষ্ট) ব্যবহার না করে “আকবার” (গ্রেটার) ব্যবহার করা হয়েছে। কেন? কারণ, “গ্রেটেষ্ট” তখন ব্যবহার করা জরুরী হয়ে পড়ে যখন কমপক্ষে তিনজনের মধ্যে তুলনা করা হয় । দুইজনের মধ্যে কে বেশী মহান তা বুঝানোর জন্য “গ্রেটার” শব্দটাই যথেষ্ট। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা অন্য সব কিছুর তুলনায় এত বেশী মহান যে তাঁর সামনে সবকিছুই নগণ্য, সব কিছুই তুচ্ছ। ঠিক যেমন অসীম কোন কিছুর সাথে যদি ক্ষুদ্র সব কিছুর তুলনা করার জন্য “গ্রেটার” শব্দটাই যথেষ্ট, তেমনিভাবে মহান আল্লাহর মহানতা বর্ণনার জন্য “আকবর” ব্যবহার করলেও সেটা “গ্রেটেষ্ট” কেই বুঝায়।
আমি এখন যে কাজই করছি না কেন – পড়াশুনা করছি, চাকরি করছি বা সোফায় গা এলিয়ে টিভি দেখছি, “আল্লাহু আকবার” বলার মাধ্যমে মুয়াজ্জিন আমাকে মনে করিয়ে দিলেন – যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ, তিনি আমাকে ডাকছেন।

২) আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লালাহ

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোন উপাস্য নাই
ইবাদত শব্দের অর্থ হলো উপাসনা ও দাসত্ব করা। এখানে আমাকে মনি করিয়ে দেয়া হলো আমি আল্লাহর দাস। কাজেই, আমার ইচ্ছা হলো তাই নামাজ পড়লাম, আর ইচ্ছা হলো না তাই নামাজ পড়লাম না – এরকম করা যাবে না। দাসের কাজ হলো প্রভু যা বলে তা পালন করা।

৩) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ(সা) আল্লাহর প্রেরিত বার্তাবাহক
কিভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে তা আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর বার্তাবাহক মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাধ্যমে। আল্লাহর হুকুম মানতে চাইলে অনুসরণ করতে হবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে। কাজেই জানতে হবে, আযান শুনলে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি করতে হবে শিখিয়ে গেছেন? মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে গেছেন – ইসলাম আর কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ। তিনি আরো বলে গেছেন – তাঁর সাথে তাঁর উম্মতের কন্ট্রাক্ট হলো নামাজ, যে ইচ্ছা করে নামাজ ছেড়ে দিল, সে কন্ট্রাক্ট ভঙ্গ করলো। আমি আমার অফিসের কন্ট্রাক্ট এর বিরুদ্ধে কোন কাজ করলে যেমন আমার চাকরী থাকবে না, তেমনি মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে কন্ট্রাক্ট দিয়েছেন সেটা ভঙ্গ করে নিজেকে তাঁর উম্মত দাবি করা কতটা যুক্তিযুক্ত?

৪) হাইয়া ‘আলাস সলাহ

অর্থঃ নামাজের দিকে আসো
এই বাক্যে আহবান করা হলো সরাসরি নামাজের দিকে। তুলনা করে দেখুন, অফিসে আমাদের বস যখন আমাদের ডাকে তখন আমরা কেমন পড়িমড়ি করে তার কাছে ছুটে যাই।

৫) হাইয়া ‘আলাল ফালাহ

অর্থ: সফলতার দিকে আসো
আল্লাহ জানেন যখন আমাদের নামাজের দিকে ডাকা হয় তখন আমরা কি ভাবি, তাই একেবারে মোক্ষম পয়েন্টে আঘাত করা হলো! আমরা বেশীরভাগ মানুষই নামাজ পড়ি না এই বলে যে – “আরে নামাজ পড়লে আমার অফিসের কাজগুলি করবে কে?”, “আগামী কাল পরীক্ষা আছে এখন নামাজ পড়ার টাইম নাই”, “ফজরের নামাজ পড়তে উঠলে তো ঘুমের বারটা বাজবে” – এই সবগুলি অজুহাতেরই মূল কথা হলো নামাজ পড়তে গেলে আমার পার্থিব সফলতার ব্যাঘাত ঘটবে। “হাইয়া ‘আলাল ফালাহ” এর মাধ্যমে আমাদের মনে করিয়ে দেয়া হলো, সফলতায় ব্যাঘাত নয় বরং সফলতা অর্জনের জন্যই আল্লাহ নামাজের হুকুম দিয়েছেন! সত্যি কথা বলতে কি সারা দিনের একেক ওয়াক্তের ফরজ নামাজ আদায় করতে কিন্তু ৫-১০ মিনিটের বেশী সময় লাগে না, এর চেয়ে ঢের বেশী সময় আমরা ইউনিভার্সিটিতে/অফিসে ব্যয় করি কফি খেয়ে, আড্ডা মেরে, পত্রিকা পড়ে, ফেইসবুকিং করে। অথচ চাইলেই সময় মতো কমপক্ষে শুধু ফরজ নামাজটুকু পড়ে নিয়ে আমরা কিন্তু অনায়াসে পুরো উদ্যমে পড়ালেখা/অফিসের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি।

৬ ও ৭) আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

অর্থ: আল্লাহ সবচেয়ে মহান, আল্লাহ সবচেয়ে মহান; আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোন উপাস্য নাই
শেষের এই অংশটা এক মহাসতর্ক বাণী। আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন – হে বান্দাহ। তুমি নামাজ পড়তে আসো আর নাই আসো, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার তাতে কিছুই যায় আসে না। তুমি নামাজ পড়লেও তিনি সবচেয়ে মহান, তুমি নামাজ না পড়লেও তিনি সবচেয়ে মহান; তুমি তাঁর ইবাদত করলেও তিনি তোমার মা’বুদ, তুমি তাঁর ইবাদত না করলেও তিনি তোমার তোমার মা’বুদ। যত লাফালাফি করার ইচ্ছা তুমি করে নাও, তোমাকে যে এসাইনমেন্ট দিয়ে পাঠানো হয়েছে তার ডেডলাইন ঠিক করা আছে, সময় ফুরোলেই কড়ায় গন্ডায় হিসেব নেয়া হবে।

আযানের জবাব:

আযানের জবাবে আযানে যা যা বলা হয় তার সবই বলা হয় শুধু ৪ আর ৫ নং বাক্য দুইটা আলাদা। এই দুই বাক্য শুনলে বলতে হয় – “লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”, অর্থ: “আল্লাহ ছাড়া কোন কিছুরই কোন পরিবর্তন বা কোন শক্তি নেই”। কেন এরকম বলা হয়? কারণ, “হাইয়া ‘আলাস সালাহ” শুনে আমরা নামাজ পড়ার জন্য অজু করে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করব, আর তাই আল্লাহর কাছে দু’আ করা হচ্ছে ও শুকরিয়া আদায় করা হচ্ছে – হে আল্লাহ তুমি আমাকে শক্তি দিয়েছ বলেই আজ আমি নামাজের উদ্দেশ্যে উঠে দাড়াতে পারছি। কত মানুষ অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে তারা শত চেষ্টা করেও নামাজ পড়তে পারছে না! আবার, কত মানুষ তাদের কর্মের মাধ্যমে তোমার রাগ অর্জন করেছে, ফলে তাদের হৃদয় তুমি সীলগালা করে দিয়েছ, তাই আযানের এই সুন্দর আহবান তাদের অন্তরে বিন্দুমাত্র পরিবর্তনের সৃষ্টি করে না।
আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন যেন প্রতিটি ইবাদতের পেছনের সৌন্দর্যগুলি আমরা বুঝতে পারি এবং সেই অনুযায়ী তাঁর ইবাদত করতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:২৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×