আজকের দিনে বাংলাদেশে তরুণদের হঠাৎ মৃত্যু একটি শঙ্কাজনক প্রবণতা হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক ঘটনায় দেখা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। জবির ছেলেটি হোটেলে খেয়ে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই প্রাণ হারিয়েছে, আর চবির ছেলেটা বান্দরবানে ঘুরতে গিয়ে হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেছে। এই ধরনের ঘটনা কেবলমাত্র isolated ঘটনা নয়, বরং একটি বড় স্বাস্থ্য সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এক সময় মনে করা হতো, হঠাৎ মৃত্যু বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা মূলত বৃদ্ধ বয়সীদের মধ্যে দেখা দেয়। কিন্তু আজকাল তরুণরা, যারা শারীরিকভাবে সুস্থ বলে বিবেচিত, হঠাৎ হৃদরোগ, স্ট্রোক বা ক্যান্সারের শিকার হয়ে যাচ্ছেন। এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং ভেজাল খাদ্য। আমাদের তরুণরা মূলত মায়ের পেট থেকে বের হওয়া ভেজাল খাবারের মধ্যেই বেড়ে উঠছে। বাজারে পাওয়া প্রতিটি খাদ্য – ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, ফল – অধিকাংশই ভেজাল বা কেমিক্যাল দ্বারা দূষিত।
সম্প্রতি এক সাইন্টিস্ট সবজির ল্যাব টেস্ট করেছেন। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী একটি সবজিতে কীটনাশকের সর্বাধিক সহনীয় মাত্রা হলো ১০ পিপিবি। কিন্তু পরীক্ষায় পাওয়া ফলাফল অনুযায়ী কিছু সবজিতে কীটনাশকের পরিমাণ ছিল ৭০০ পিপিবি, যা অনুমোদিত মাত্রার ৭০ গুণ বেশি। এই তথ্য একদিকে যেমন ভয়াবহ, তেমনি এটি প্রমাণ করে আমাদের খাদ্য ব্যবস্থার ক্রমাগত অবহেলা।
এই সংকটের বিষয়ে কতজন মানুষ, গবেষক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, সাংবাদিক বা প্রশাসন গভীরভাবে চিন্তা করছেন? দেশের তরুণ প্রজন্মের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কারো মাথাব্যথা আছে কি? উত্তর একরকমই হতাশাজনক – অনেকেই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা ক্ষমতার দৌড়ে এতটাই ব্যস্ত যে স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক বিষয়টি চোখে পড়ে না।
দেশে আজ এমন একটি বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে যেখানে অসুস্থতা, দুর্নীতি, অসামাজিক মনোভাব এবং অবহেলা একসাথে চলছে। রাজনীতি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন হলেও খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সচেতনতা বা তরুণদের সুস্থ জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনা অপ্রতুল। আমরা যদি এই পথে চলি, পরবর্তী প্রজন্ম শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে উঠবে, যা জাতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ক্ষতি।
ফরমালিন, কীটনাশক এবং সকল প্রকার কেমিক্যালের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিশ্চিত করা ছাড়া আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুস্থ জীবন দেওয়া সম্ভব নয়। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার, বিজ্ঞানী এবং সমাজকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। তরুণরা হলো দেশের ভবিষ্যৎ, তাদের জীবন ও স্বাস্থ্যের উপর অবহেলা ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় সংকটের জন্ম দেবে।
দোহাই আল্লাহর, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মকে সুস্থ, শক্তিশালী এবং বেঁচে থাকার যোগ্য জীবন নিশ্চিত করা। খাদ্য দূষণ, ভেজাল এবং কেমিক্যালের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা কমবে না। দেশের জন্য স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ এবং টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলাই আজকের তরুণদের জীবনের নিরাপত্তার মূল চাবিকাঠি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


