নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনাটি গোটা দেশকে হতবাক করে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়—অপূর্ব পাল নামের এক ছাত্র ঠোঁটে শিস বাজাতে বাজাতে পবিত্র কুরআন শরীফকে পদদলিত করছে। এই জঘন্য দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ক্ষোভে, ঘৃণায়, বেদনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে।
ঘটনাটি ঘটে সকাল ৯টার দিকে, অথচ এটি ভাইরাল হয় রাত ১১টায়। অনলাইনে ব্যাপক আলোচনার ঝড় ওঠার পর রাত ২টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রশ্ন জাগে—ঘটনার পর এতক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী করেছে? উত্তর হলো, কিছুই করেনি। বরং অপূর্ব পালকে সিকিউরিটি দিয়ে নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে যাতে তাকে কেউ গ্রেফতার করতে না পারে বা আঘাত না করে। এখানেই স্পষ্ট বোঝা যায়, কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই ছাত্রটিকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে।
এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অতীতে দেখা গেছে, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এক শিক্ষককে ক্লাসে উদাহরণ হিসেবে একটি হাদিস উদ্ধৃত করায় বহিষ্কার করেছিল। অথচ কুরআন পদদলনের মতো মারাত্মক অপরাধ সংঘটিত হলেও প্রথমে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। বরং লঘু করার চেষ্টা করেছে। এ যেন দ্বিচারিতা নয়, চরম ইসলামবিদ্বেষী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
এখন প্রশ্ন হলো, অপূর্ব পালকে মানসিক রোগী হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা কেন? পূর্বেও বহু ইসলাম অবমাননাকারীর ক্ষেত্রে একই কৌশল ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু একজন যদি সত্যিই মানসিক রোগী হয়, তবে সে কীভাবে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে? আর কেন এ ধরনের "মানসিক রোগীরা" শুধুই ইসলামকে আঘাত করে? গীতা, বেদ, বাইবেল বা অন্য ধর্মগ্রন্থ নয়—বারবার কেবল কুরআনই টার্গেট হয় কেন?
অপূর্ব পাল নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে বলেছে—তার পেছনে শক্তিশালী ব্যাকআপ আছে, কেউ তাকে কিছু করতে পারবে না। এ বক্তব্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি প্রমাণ করে, ঘটনা কেবল একজন ছাত্রের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ নয়; এর পেছনে শক্তিশালী গোষ্ঠীর প্রভাব কাজ করছে। সেই গোষ্ঠী কারা, কী উদ্দেশ্যে কাজ করছে, তা উদঘাটন করা জরুরি। নইলে এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটবে।
এদেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে একটি অভিযোগ আছে—তারা ইসলামবিরোধী এজেন্ডা লালন করে। এই অভিযোগ হাওয়ায় ভেসে আসেনি। শিক্ষক বহিষ্কারের ঘটনা, ধর্মীয় মূল্যবোধকে অবজ্ঞা করার প্রবণতা, আর এখন কুরআন অবমাননার মতো ভয়াবহ ঘটনা সেই অভিযোগকেই আরও শক্তিশালী করে তুলছে। একটি মুসলিমপ্রধান দেশে এই ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
অপূর্ব পালের এই কর্মকাণ্ড কেবল একটি ধর্মগ্রন্থের অবমাননা নয়; এটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দেয়ার স্পষ্ট প্ররোচনা। তিনি জেনে-শুনেই একটি জাতির ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। তাকে যদি কিছুদিন পর জামিন দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়, তবে এই বার্তাই যাবে—ইসলাম অবমাননা করলে কোনো ভয় নেই। আর সেই ফাঁক গলে আবারও নতুন কোনো "অপূর্ব পাল" বের হয়ে আসবে, আবারও কুরআন ছিঁড়ে, পিষে, পা দিয়ে পদদলিত করে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে—"তোদের মতো শালারা কিছুই করতে পারবি না!"
তাই আজই রাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে। কেবল গ্রেফতার নয়, দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। একইসঙ্গে সরকারের প্রতি জোর দাবি—অবিলম্বে ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত কঠোর ও সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও তার কার্যকর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। কেবল ব্যক্তিগত শাস্তি নয়, এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও দায় নিতে হবে। তারা ক্ষমা চাইবে, দায় স্বীকার করবে এবং ভবিষ্যতে যেন আর কোনো ছাত্র-শিক্ষক এভাবে প্রশ্রয় না পায় তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
এ দেশের শান্তি, সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে বারবার আঘাত করার এই ধারাকে রুখতেই হবে। নতুবা এর পরিণতি ভয়াবহ হবে, যার দায়ভার বহন করতে হবে গোটা জাতিকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


