somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরআন অবমাননা : দায় কার?

০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনাটি গোটা দেশকে হতবাক করে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়—অপূর্ব পাল নামের এক ছাত্র ঠোঁটে শিস বাজাতে বাজাতে পবিত্র কুরআন শরীফকে পদদলিত করছে। এই জঘন্য দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ক্ষোভে, ঘৃণায়, বেদনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে।

ঘটনাটি ঘটে সকাল ৯টার দিকে, অথচ এটি ভাইরাল হয় রাত ১১টায়। অনলাইনে ব্যাপক আলোচনার ঝড় ওঠার পর রাত ২টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রশ্ন জাগে—ঘটনার পর এতক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী করেছে? উত্তর হলো, কিছুই করেনি। বরং অপূর্ব পালকে সিকিউরিটি দিয়ে নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে যাতে তাকে কেউ গ্রেফতার করতে না পারে বা আঘাত না করে। এখানেই স্পষ্ট বোঝা যায়, কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই ছাত্রটিকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে।

এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অতীতে দেখা গেছে, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এক শিক্ষককে ক্লাসে উদাহরণ হিসেবে একটি হাদিস উদ্ধৃত করায় বহিষ্কার করেছিল। অথচ কুরআন পদদলনের মতো মারাত্মক অপরাধ সংঘটিত হলেও প্রথমে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। বরং লঘু করার চেষ্টা করেছে। এ যেন দ্বিচারিতা নয়, চরম ইসলামবিদ্বেষী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।

এখন প্রশ্ন হলো, অপূর্ব পালকে মানসিক রোগী হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা কেন? পূর্বেও বহু ইসলাম অবমাননাকারীর ক্ষেত্রে একই কৌশল ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু একজন যদি সত্যিই মানসিক রোগী হয়, তবে সে কীভাবে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে? আর কেন এ ধরনের "মানসিক রোগীরা" শুধুই ইসলামকে আঘাত করে? গীতা, বেদ, বাইবেল বা অন্য ধর্মগ্রন্থ নয়—বারবার কেবল কুরআনই টার্গেট হয় কেন?

অপূর্ব পাল নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে বলেছে—তার পেছনে শক্তিশালী ব্যাকআপ আছে, কেউ তাকে কিছু করতে পারবে না। এ বক্তব্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি প্রমাণ করে, ঘটনা কেবল একজন ছাত্রের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ নয়; এর পেছনে শক্তিশালী গোষ্ঠীর প্রভাব কাজ করছে। সেই গোষ্ঠী কারা, কী উদ্দেশ্যে কাজ করছে, তা উদঘাটন করা জরুরি। নইলে এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটবে।

এদেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে একটি অভিযোগ আছে—তারা ইসলামবিরোধী এজেন্ডা লালন করে। এই অভিযোগ হাওয়ায় ভেসে আসেনি। শিক্ষক বহিষ্কারের ঘটনা, ধর্মীয় মূল্যবোধকে অবজ্ঞা করার প্রবণতা, আর এখন কুরআন অবমাননার মতো ভয়াবহ ঘটনা সেই অভিযোগকেই আরও শক্তিশালী করে তুলছে। একটি মুসলিমপ্রধান দেশে এই ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

অপূর্ব পালের এই কর্মকাণ্ড কেবল একটি ধর্মগ্রন্থের অবমাননা নয়; এটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দেয়ার স্পষ্ট প্ররোচনা। তিনি জেনে-শুনেই একটি জাতির ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। তাকে যদি কিছুদিন পর জামিন দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়, তবে এই বার্তাই যাবে—ইসলাম অবমাননা করলে কোনো ভয় নেই। আর সেই ফাঁক গলে আবারও নতুন কোনো "অপূর্ব পাল" বের হয়ে আসবে, আবারও কুরআন ছিঁড়ে, পিষে, পা দিয়ে পদদলিত করে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে—"তোদের মতো শালারা কিছুই করতে পারবি না!"

তাই আজই রাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে। কেবল গ্রেফতার নয়, দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। একইসঙ্গে সরকারের প্রতি জোর দাবি—অবিলম্বে ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত কঠোর ও সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও তার কার্যকর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। কেবল ব্যক্তিগত শাস্তি নয়, এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও দায় নিতে হবে। তারা ক্ষমা চাইবে, দায় স্বীকার করবে এবং ভবিষ্যতে যেন আর কোনো ছাত্র-শিক্ষক এভাবে প্রশ্রয় না পায় তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

এ দেশের শান্তি, সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে বারবার আঘাত করার এই ধারাকে রুখতেই হবে। নতুবা এর পরিণতি ভয়াবহ হবে, যার দায়ভার বহন করতে হবে গোটা জাতিকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৮
২১টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×