somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৮৭ বছরের কলেজ শিক্ষার্থী রোজ

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা অনেকেই সঠিক সময়ে পড়ালেখা শেষ করার জন্য দিনমান খাটি। আর শেষ করতে না পারলে মনে একরাশ হতাশা নিয়ে দিন কাটাই। অনেকেই মনে করেন সঠিক বয়সে শেষ না করলে আর পড়ালেখাই সম্ভব নয়।  একটু বয়স্ক কাউকে পড়তে দেখলে অনেক সময় হাসি, আবার অনেকে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও  শুধু বয়স আর চক্ষু লজ্জার ভয়ে আর পড়া লেখা করতে পারিনা। এবারের গল্পটা আপনার ধারনায় নাড়া দিতে বাধ্য। 

গল্পটা একজন  জ্ঞানতাপসের । যার কাছে বয়স একটা সংখ্যা মাত্র।  দিবস যার কাছে জীবনের কাছ থেকে পাওয়া আরাধ্য সময় মাত্র। 

চলুন ঘুরে আসি রোজের  ক্লাস রুম থেকেঃ 

প্রথম ক্লাসে অধ্যাপক ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। "অপরিচিতকে জানার চেষ্টা কর"। অনেকেই এদিক ওদিক তাকালো নিজ নিজ সাব্জেক্ট খুঁজে নেওয়ার আশায়। এর মধ্যে একজন ছাত্র  সাঞ্জেক্ট খুঁজে পাওয়ার আগেই সাব্জেক্ট তাকে খুঁজে পেলো।   ছাত্রটি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল একজন আশিতোপর বৃদ্ধা তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। একজন সল্প-উচ্চতার বয়স্ক মহিলা, যারা সারা মুখমন্ডল কি এক আশ্চর্য আলোয় উদ্ভাসিত। 

বৃদ্ধা নিজের পরিচয় দিয়ে জানালেন তাঁর নাম রোজ , বয়স ৮৭ বছর। মজার ছলে ছাত্রটি তাকে জিজ্ঞেস করলো এত কম এবং কোমলমতি বয়সে তুমি কেনো এখানে পড়তে এসেছো !

বৃদ্ধা যেন এ কথায় মজা পেয়ে  উত্তরে জানালো "আমি কলেজে এসেছি একজন বিত্তবান পুরুষের সাথে দেখা করতে,তাকে বিয়ে করতে এবং কিছু সন্তানের জননী হতে"।

কিন্তু ছাত্রটি তাঁর উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারলোনা। তাঁর মনে একটা প্রশ্নই আসছিলো বার বার, কি এমন উৎসাহ এই বয়সে ইনি পেলেন যে একেবারে সানন্দে  পড়া লেখা শুরু করে দিয়েছেন!  



জবাবে মহিলা বলল "আমি  সবসময় স্বপ্ন দেখেছি কলেজে পড়ালেখা করার, এবং এখন আমি সেটা করছি!"।  

ক্লাসরুমের বাইরে রোজঃ  

ক্লাসের পরে ছাত্রটি এবং আমাদের ছাত্রিটি হাটছিলেন। শীঘ্রই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। এরপর সামনের তিনমাস তাঁরা দুজন প্রতি ক্লাসের শেষে একসাথে বের হয় এবং গল্প করেন। ছাত্রটি এই চিরসবুজ ছাত্রীর অভিজ্ঞতাপূর্ন গল্প শুনতে শুনতে মুগ্ধ হয়ে যায়। পরবর্তি সময়গুলোতে তিনি হয়ে উঠেন ক্যাম্পাস আইকন। গড়ে তুলেন বন্ধুত্ব। তিনি তারুন্যে বাঁচতে চাইতেন, এবং তিনি আসলেই  বেঁচে ছিলেন তারুন্যে! 

রোজের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষাঃ

তিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন এক আলোকিত জীবনের। তাঁর সাথে প্রথম পরিচিত হওয়া ছাত্রটি একবার তাকে ডাকলো সবার সাথে এক আড্ডায়। সেখানে রস যা বললেন , তা থেকে অনেক কিছুই শিখার আছে। খানিকটা হাসি ঠাট্টার মধ্যে দিয়েই তিনি বলতে শুরু করলেন,

" আমরা এজন্যে খেলা থামাইনা কারন আমাদের বয়স হয়েছে,  আমাদের বয়স হয়ে যায় কারন আমরা খেলা থামিয়ে দি, তারুন্য ধরে রাখার গোপন রহস্য মাত্র চারটি, খুশি থাকা,সাফল্য অর্জন করা। তোমাকে প্রতিনিয়ত হাসতে হবে এবং প্রতিদিন জীবনের মজার দিক গুলো খুঁজে নিতে হবে।

তোমার অবশ্যই স্বপ্ন থাকতে হবে অন্যথায় তুমি মৃত। আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই আছে যারা জীবন্মৃত ,তবে তাঁরা তা নিজেরাই জানেনা। বয়স হওয়া এবং পরিনত হওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য। যখন তোমার বয়স ১৯ এবং তুমি দীর্ঘ এক বছর সৃষ্টিশীল কিছুই করবেনা তখনো  তোমার বয়স এক বছর বেড়ে বিশে গিয়ে ঠেকবে। আমার বয়স ৮৭ , আর যদি আমি এক বছর কিছুই না করি আমার বয়সও  হবে ৮৮।" 




বয়সে বড় যেকোন কেউ হতে পারে, এটাতে কোন সৃষ্টিশীলতা দক্ষতার প্রয়োজন নেই। আসল কথা হলো  পরিবর্তনের মাঝেও  সুযোগ  কাজে লাগিয়ে তুমি কিভাবে পরিপক্ক হও।  বয়স হয়ে যাওয়ার পর এটা আফসোস হয়না যে আমরা কি করেছিলাম,বরং এতা ভেবে আফসোস হয় যে কি করিনি এই জীবনে! শুধুই মাত্র তারাই মৃত্যুকে ভয় পায় যাদের রয়েছে ফেলে আসা জীবনের জন্য হাপিত্যেশ ।" 

তিনি দ্যা রোজ গানের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন এবং সবাইকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন এই গানের কথা গুলো পর্যালোচনা করতে এবং দৈনন্দিন জীবনে এগুলোকে কাজে লাগাতে। 



রোজের  শিক্ষাজীবনের  শেষ অধ্যায় ও আমাদের জন্য শিক্ষাঃ 

বিগত বছর গুলোর শিক্ষাজীবনের শেষে অবশেষে রোজ তাঁর স্বপ্ন পূরন করেন। তিনি সফল ভাবেই গ্র্যাজুয়েশন সমাপ্ত করেন এবং এর সপ্তাহখানেক পরেই নিদ্রিত অবস্থায় শান্তিময় মৃত্যি বরণ করেন তিনি। 



তাঁর মৃত্যু পরবর্তি বিদায় বেলায় উপস্থিত ছিলো দু-হাজারের উপর কলেজ শিক্ষার্থী। তিনি এমন একজন যিনি উদাহরণ স্থাপনের মাধ্যমে  সবাইকে এই শিক্ষা দিয়েছিলেন যে   " তুমি যা হতে চাও তা হয়ে ওঠার জন্য কখনই খুব বেশি দেরি হয়ে যায়নি" 



আপনি যখন এটা পড়া শেষ করবেন আশা করি এই শান্তিপূর্ন উপদেশবানী সমূহ আপনার  পরিবার-পরিজনের  কাছে পৌছে দিবেন। এটা পড়ে তাঁরা অবশ্যই খুশি এবং উপকৃত হবেন। 



                               

 .এই বাক্যগুলোর সাথে রোজের  স্মৃতি বিজড়িত আছে-

REMEMBER, GROWING OLDER IS MANDATORY. GROWING UP IS
OPTIONAL.

We make a Living by what we get, We make a Life by what we give.






ভাবানুবাদঃজুনাইদ বিন কায়েস
প্রথম প্রকাশঃ আমারজীবনী

রচনাকালঃ ১৭/১০/২০১৮



রেফারেন্সঃ ক্লিক করুন

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:২১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×