‘পুলিশ মেরে তিন জঙ্গি ছিনতাই, ফিল্মি স্টাইলে বোমা-গুলি, পলাতক জঙ্গি রাকিবসহ আটক ৪, তদন্ত কমিটি গঠন ও ধরিয়ে দিতে ২ লক্ষ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা, চলছে সাঁড়াশি অভিযান, জাতিসংঘের তথ্য, বাংলাদেশে আলÑকায়দা সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড রয়েছে, দেশের সব কারাগার ও সীমান্তে রেড অ্যালার্ট, নারায়ণগঞ্জের সালাহউদ্দিন যেভাবে জেএমবি ক্যাডার, জঙ্গি ছিনতাইয়ে জামায়াত জড়িতঃ মুহিত, ৪০টি জঙ্গি সংগঠন তৎপর বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি, আলকায়দা তৎপরতার ইঙ্গিতঃ আওমীলীগ’।প্রকাশ্য দিবালোকে বোমা ফাটিয়ে ভ্যান থেকে তিন আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জে.এম.বি’র তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ সময় ছিনতাই কারীর গুলিতে নিহত হন এক পুলিশ সদস্য। আহত হন এক উপপরিদর্শকসহ (এ.এস.আই) প্রিজন ভ্যানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের তিন সদস্য।ছিনতাইকৃত তিন আসামির মধ্যে রাকিব হাসান ছিলো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, ঘটনার সাত ঘণ্টা পর সে টাঙ্গাইলে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। অন্য দুজন- সালাহউদ্দিন সালেহীনও ছিলো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এবং জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান যাবতজীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ঘটনার পর ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন কারাগার এবং সীমান্ত এলাকায় রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। পলাতক আসামিদের ধরতে দুই লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। জেলায় জেলায় চলছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এক পলাতক আসামিকে ধরা সম্ভব হয়েছে।বাংলাদেশে আল কায়দা নেটওয়ার্কের কর্মকাণ্ড রয়েছে এমন তথ্য দিচ্ছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। গত ১৪ ফেব্র“য়ারি জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিল আল কায়দার স্যাংকশন কমিটির রেজুলেশনে এ সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। এতে বাংলাদেশে পরিচালিত দুটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে আল কায়দার সম্পৃক্ততা নির্দেশ করেছে জাতিষংঘ। সংস্থা দুটির পর নিষেধাজ্ঞ আরোপ থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে রেজুলেশনে। রেজুলেশনে বাংলাদেশ সম্পর্কে তথ্য ‘আপডেট’ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এ বিশেষ কমিটি বলেছে, সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়দার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ‘গ্লোবাল রিলিফ ফাউন্ডেশন নামের সংগঠনটির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞ আরোপ রেখেছে। বাংলাদেশে এই সংগঠনটি সক্রিয়ভাবে কাজ করে। এছাড়া ‘আল হারামাইন’ নামে আরেকটি সংস্থার বাংলাদেশ শাখার আল কায়দা নেটওয়ার্কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে উল্লেখ রয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের আলাদা একটি নথিতে। নথিতে উল্লেখ রয়েছে এই এনজিওটি বরাবর আল কায়দাকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিয়ে আসছে।মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন জেএমবি সদস্য ছিনতাই হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, এ ঘটনা বাংলাদেশে আল কায়দার এজেন্টদের তৎপরতার ইঙ্গিত দেয়। নেতারা বলেন, ‘নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। জামায়াত-হেফাজত আল কায়দার এজেন্ট আর বি.এন.পি. ভাবশিস্য। আমরা বি.এন.পি.কে ভয় পাইনা। যারা আন্দোলন করতে ভয় পায় আমরা তাদের ভয় পাইনা।’ অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জেএমবির মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি ছিনতাই ও পুলিশ হত্যার ঘটনায় জামায়াতে ইসলামী জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জনাব মুহিত বলেন- ‘জামায়ত কোন রাজনৈতিক দল নয়, এরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। পুলিশের গাড়িতে হামলা করে জঙ্গী ছিনতাইয়ের সঙ্গে জামায়াত জড়িত। নিঃসন্দেহে এটা তাদের কাজ।’ (বর্তমান-২৪.০২.২০১৪)।দৈনিক বর্তমানের এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে যে, শীর্ষ জঙ্গিরা গ্রেফতার হলেও জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা থেমে নেই। জঙ্গি ও উগ্র মৌলবাদী সংগঠন মিলিয়ে দেশে অন্তত ৪০টি জঙ্গিবাদি সংগঠন তৎপর। দেশব্যাপী তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোয় ও তাদের লোকজন কাজ করছে। বোমা মেরে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা তাদের শক্তিশালী অবস্থানের বিষয়টি আবারও প্রমাণ করে। এর আগে সিরিজ বোমা হামলা, পুলিশ ও র্যাবের ওপর হামলা। ভবিষ্যতে এরা আরো বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছে। উগ্র মৌলবাদী ও জঙ্গি সংগঠনগুলোকে যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত বিশেষ ইসলামী দলটি নানাভাবে সহায়তা করছে।
এই যে জঙ্গি তৎপরতার ভয়ংকর সব তথ্য আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠেছে, এতে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়ছি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনা সাহেব বাংলাদেশের লাগামছাড়া গুনকীর্তণ করছেন কিন্তু এসব জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে কিছুই বলছেন না। তিনি কি আমাদের প্রশংসার আঁফিম খাওয়াচ্ছেন? যেমন চীনকে খাওয়ানো হয়েছিলো! বিচিত্র কিছু নয়। তবে বাংলাদেশ সরকার ও তাদের রাজনৈতিক ফ্রন্টের রাঘববোয়ালরা হয়তো ভেবেছিলেন, অটো নির্বাচনে ক্ষমতায় গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমোবেন। সেটি যে হবে না তা পত্র-পত্রিকা প্রতিদিন জানিয়ে দিচ্ছে। অতীতে সব কিছু বঙ্গবন্ধু করে দিয়েছেন, আর বর্তমানে সব ‘আপা’ই করে দিবেন। এমন যারা ভাবেন, নিজেরা নিজেরা হালুয়া রুটি নিয়ে কোন্দল, কামড়া-কামড়ি করে দলের ভবিষ্যৎ, দেশের ভবিষ্যৎ বিনষ্ট করছেন। তারা একটা সময়ে এসে হাড়ে হাড়ে টের পাবেন, ব্যক্তিস্বার্থ আর কোটারী স্বার্থের রাজনীতি অন্তত বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটা কুফল বয়ে আনবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই জঙ্গি তৎপরতা আছে, কোন দেশই একচেটিয়া স্বর্গ নয়, একচেটিয়া নরকও নয়। রাষ্ট্রশক্তির বিপক্ষে যে কোন রেঞ্জে বৈরিশক্তি থাকে, তা মোকাবেলা করতে হয় দক্ষতার সঙ্গে, সাংগঠনিক শক্তি ও প্রশাসনিক শক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। নাকে তেল দিয়ে রাষ্ট্রকে পুলিশের ওপর ছেড়ে দিলে বিপদ চারদিক থেকে ঘনিভূত হয়ে আসবে। অতএব, সাধু সাবধান!!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




