somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ব্যচেলার বাসা ভাড়া

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আমি বেশ খুশি হয়ে চেয়ারটায় বসলাম। অবশেষে চাকরিটা পেয়েই গেলাম। যদিও একটা কোচিং সেন্টারে সামান্য বেতনের চাকরি। চকরিটা আমার খুব দরকার। বেকার জীবনে থাকার চেয়ে কিছু একটা করা ভাল। তবুও নিজের হাত খরচ চলবে।

স্যার আমার সাথে রুম থেকে বের হল। তিনি আমাকে ক্লাস দেখাতে নিয়ে যাচ্ছেন। আজ থেকেই আমার ক্লাস নিতে হবে। এর আগে কয়েকটা টিউশানি করিয়েছি। কিন্তু কোন কোচিং সেন্টারে চাকরি করা হয়নি।

আমার গায়ে একটা সাদা শার্ট, সাথে কালো প্যান্ট। আমার রুমমেট বলেছিল, প্যান্টের ভিতরে শার্ট ঢুকিয়ে পরার জন্য। কিন্তু আমি সেইরকম কিছুই করতে চাইনি। নিজেকে খুব বড় সাহেব সাহেব ভাবার কিছু নেই।

-আমার সাথে এস।
কোচিং সেন্টারের প্রধান শিক্ষকের সাথে রুমে ঢুকলাম। বেশ বড়সড় রুম। এখানে পার্মানেন্ট চাকরি হয়ে গেলে অনেক টাকা বেতন পাওয়া যাবে। তার জন্য আমাকে বেশ কাঠখড় পুড়াতে হবে। সেটা পরে ভাবব।

আমি টেবিলের পিছনে রাখা চেয়ারটায় বসলাম। সামনে কিছু শিট রাখা আছে। এই শিটগুলো থেকেই আমাকে লেকচার দিতে হবে। আমি নিজের মত করে শুরু করলাম। ক্লাসে প্রায় চল্লিশজন ছাত্র-ছাত্রী আছে। নিজের মধ্যে একটা জড়তা কাজ করছে।

নিজের পরিচয়টা দিয়েই শুরু করলাম। শিটের প্রত্যেক পয়েন্ট বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম। রসায়নে আমার বেশ ভাল জানা আছে। কারন রসায়নে খুব ভালভাবে পড়া হয়ে গিয়েছে আমার। তৃতীয় বর্ষে পড়া অবস্থায়, রসায়নকে বেশ আয়ত্ব করে ফেলতে পেরেছি।

ক্লাসের কাউকেই চিনি না। তবে আমার পুরোটা চেষ্টা করছি তাদের বুঝার জন্য। যাতে তারা আমাকে বুঝতে পারে। আমার লেকচার বুঝতে পেরে কিছুটা শিখতে পারে। আমি বুঝানোর পরেও তারা যদি, না বুঝে, তবে সেটা ব্যর্থতা।

বিকেলবেলা শুনশান রাস্তায় হাটছি। হঠাৎ করে আমাদের রাজিব স্যারের সাথে দেখা। উনি আমার সাথেই চাকরি করেন। চাকরি সুত্রে আমার সমান হলেও, সন্মানের দিক বড়। আমার দিকে তাকিয়ে চশমাটা ভালভাবে নেড়ে বললেন
-আরে আসিফ ভাই যে! কোথায় যান?
-এখানেই হাটাহাটি করছি।
-আপনি তো কয়েকদিনেই কাম্মাল করে দিলেন।
ভ্রু কুঁচকে বললাম
-আমি আবার কি করলাম!
-আপনার লেকচারে সবাই মুগ্ধ। আপনার চাকরিটা পার্মানেন্ট হয়ে যাবে।
-দোয়া করবেন।

রাজিব স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। চাকরিটা পার্মানেন্ট হয়ে গেলে বেশ ভালই হবে। ব্যাচেলর হয়ে বাসা পাওয়ার জন্য ভাড়া বেশি দিতে হয়। সেই বাসাও ভার্সিটি থেকে দুরে। ভার্সিটির কাছের বাসাগুলোতে ব্যাচেলর ভাড়া দেয়না। নিয়মিত যাতায়াত খরচ যায় অনেক টাকা। চাকরিটা পার্মানেন্ট হলে বেশ সুবিধা হয়।

সকালবেলা একটা সারপ্রাইজ পেলাম। আমার চাকরিটা পার্মানেন্ট হয়ে গিয়েছে। ভার্সিটির ক্লাস শেষে বিকেলে আমাকে দুই ঘন্টা পড়াতে হবে। তার জন্য এখান থেকে দশ হাজার টাকা দিবে।

-আজ থেকে আপনি উনার বাসায় থাকবেন। উনার বাসা পাশেই। আপনার সব সুবিধার জন্য এই ব্যবস্থা করেছি।
ক্লাস শেষে অফিস রুমে ঢুকলাম। একজন লোক বসে আছে। মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি। আজিজ স্যার লোকটার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বাসা ভাড়া পেয়ে বেশ খুশি হলাম।

আমি ধন্যবাদ দিয়ে চলে এলাম। বাসা দেখার প্রয়োজন নেই। এখান থেকে ভার্সিটি খুব কাছে। তাই বাসার কথা শুনেই খুশি হয়েছি। আজকের দিনটা বেশ ভাল যাচ্ছে আমার। একসাথে দুইটা জিনিস পেয়ে গেলাম।

পরেরদিন আমার জিনিসপত্র নিয়ে চলে এলাম। আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। ঘরে ঢুকে ব্যাগ থেকে সবকিছু বের করে রুমটা সাজিয়ে নিচ্ছি। রুমটা বেশ বড়সড়। ভাড়াও কম।

কিছুক্ষন পরে বাড়িওয়ালা আংকেল এসে রুমে ঢুকল। চেয়ার টেনে বসে বলল
-যে কোন অসুবিধা হলে আমাকে বলবে। রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেছ?
-রুম গুছিয়ে রান্না করব।
-আজকে রান্না করতে হবে না। আমি খাবার পাঠিয়ে দিব।
আর কালকে থেকে আমার পেয়ে মিতুকে পড়াবে।
-ওকে।

এই শহরে দুই ধরনের লোক দেখা যায়। এক ভাল মানুষ আর দুই বাড়িওয়ালা। এই আংকেল ভাল মানুষদের দলে। ব্যাবহারে বাড়িওয়ালা ভাবটা প্রকাশ পায় না। এটা অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।

পরের সকালবেলা একটা মেয়ে এসে হাজির। কালকের বর্ননা শুনে বুঝতে পারলাম, মেয়েটার নাম মিতু। সকালবেলা সময় হয় বলে, সকালবেলা পড়াতে চেয়েছি।

বই সামনে নিয়ে মিতু পড়তে আরম্ভ করল। আমার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে আবার পড়ছে। মনেহয় তার মধ্যে একটা জড়তা কাজ করছে। প্রথমবার আমার কাছে পড়তে এসেছে, বলেই এমন হচ্ছে!

মিতু পড়া শেষ করে চলে গেল। আমি রাইসকুকারে রান্না বসিয়ে দিলাম। সকালবেলা ডিম ভাজির সাথে আলুভর্তা হলেই হয়ে যায়। এই খাবার আমার বেশ ভাল লাগে।

সকালের খাবার খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। সব জিনিসপত্র এলোমেলো ভাবে রেখেই চলে যাই। এখন সময় নেই এসব ঠিক করার। ভার্সিটির জন্য বের হয়ে গেলাম।

জীবনটা বেশ ভালই যাচ্ছে। ভার্সিটি শেষে বাসায় আসি। তারপরে দুপুরের খাবার খেয়ে কোচিং করাতে চলে যাই। আজ দুইদিন দুপুরে বাসায় এসে বেশ অবাক হচ্ছি। রান্না করা খাবার দেখছি দুপুরে। কে রান্না করে দিয়ে যায় সেটাই বুঝতে পারছি না। বাড়িওয়ালার কাছে এই রুমের চাবি আছে। তিনি কি কাজের লোক দিয়ে রান্না করে পাঠায়! ব্যাপারটা ভেবে আবার বাদ দিলাম। কে রান্না করল সেটা ভেবে লাভ কি!

সকালবেলা মিতুকে পড়াতে বসে একটু কেমন কেমন যেন লাগছে। আজ বেশ বেশ খুশি খুশি লাগছে মেয়েটাকে। কিন্তু এই খুশির কারন জানার দরকার নেই। আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর না নিলেই ভাল। তাকে পড়ানোর কথা পড়াই।

-আজ আমার জন্মদিন। আপনি জানেন?
মিতুর মাঝে একটা চঞ্চলতা আবার চোখের মাঝে একটা হতাশা। আমাকে এর আগেও বলেছিল। তারপরেও আজ নিজে থেকে বলার কারনে এমন হতাশ। আমি সেসব পাত্তা না দিয়ে নিজের মত করে পড়াতে শুরু করলাম।

দুপুরবেলা রুমে ঢুকে অবাক হলাম। মিতু রান্না করছে। আমি বললাম
-কি ব্যাপার তুমি এখানে!
-হ্যা তো?
-কিভাবে ঢুকলে?
-বাবার কাছ থেকে চাবি নিয়েছি।
-প্রতিদিন রান্না কর তুমি এখানে!
মুচকি হেসে বলল
-হ্যা।প্রতিদিন রান্না খান। কিন্তু একবার ও তো প্রশংসা করেন না!
আমি মাথা চুলকে বললাম
-আসলে আমি ভেবেছিলাম কাজের লোক রান্না করে দিয়ে যায়। তাই কিছু বলিনি।

মিতুর সামনে অনেকগুলো রান্নার আইটেম। এতগুলো আইটেম দেখে বেশ অবাক হলাম। এতকিছু আমার একার পক্ষে খাওয়া সম্ভব না। অবাক হয়ে বললাম
-এতকিছু রান্না করছ যে!
-আজ আমার জন্মদিন। তাই এতকিছু।
আমি আর কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম।

মিতুর রান্না শেষ হলে দুজন একসাথে খাবার খেয়ে নিলাম। মেয়েটা বেশ ভাল রান্না করতে পারে। তার জন্মদিনে কিছু একটা গিফট করা উচিত। সেটা নাহয় পরে দিব। মিতুও আমার সাথে খেয়ে নিল।

-আজকে আমার সাথে একটু ঘুরতে যাবেন?
মিতু খাওয়ার পরে প্লেট বেসিনে রেখে আসল। চোখের মাঝে একটা জিজ্ঞাসু ভাব। আমি ভাবটা দুর করে বললাম
-হ্যা যাব।
মিতু প্লেট পরিষ্কার করে রেখে চলে গেল। বিকেলবেলা ঘুরতে যেতে হবে।



আজকের বিকেলটা বেশ সুন্দর মনেহয়। হালকা হালকা শিত লাগছে। একটা চাদর গায়ে দিয়ে বের হলাম। মিতু আমার সাথে বের হল। আজকে জন্মদিনে সে শাড়ি পরেছে। শাড়িতে তাকে খারাপ লাগছে বলা যাবেনা। তবে নিজে নিজে শাড়ি পড়তে গিয়ে ঠিকমত ভাজটা দিতে পারেনি। তবে যে চেষ্টা করেছে সেটাই তো অনেক বেশি।

দুজন মিলে নির্জন বিকেলে হাটতে থাকলাম। ইচ্ছা ছিল একটা রিক্সা নিব। কিন্তু মিতুর ইচ্ছা সে আমার সাথে হাটবে। তাই ইচ্ছা পুরন করার জন্য হাটছি। জন্মদিনে কারো ইচ্ছা পুরন করতে হয়। জন্মদিনটা কারো ইচ্ছামত চলতে দেওয়া উচিত।

হাটতে হাটতে ক্যম্পাসে এসে দাঁড়ালাম। এই ক্যম্পাসের মধ্যে কেন এল সেটাই উদঘাটন করার চেষ্টা করছি। সুন্দরি মেয়েদের ফুসকা পছন্দ হয়। আমি একবার বলেছি ফুসকা খাওয়ার কথা। কিন্তু সে খাবেনা।

আমাকে সাথে নিয়ে ঘাসের উপর বসল। বিকেল ববেলা ঘাসগুলো ঠান্ডা হয়ে আছে। তবুও এই ঘাসের উপরেই বসল। আমিও তার সাথে বসলাম।

-আমার জীবনের কিছু কথা শুনবেন?
মিতুর মুখে অসহায়ত্বের ভাব। কথাগুলো বলা মনেহয় জরুরী। তাই শোনার আগ্রহ নিয়ে বললাম
-হুম শুনব।
-আমার একজনের সাথে রিলেশন ছিল। তার জোড়াজুড়িতে রিলেশন করতে বাধ্য হই। কিন্তু একসময় বুঝতে পারি, আমি তার মায়ায় পড়ে গিয়েছি। কিন্তু ততদিনে সে আস্তে আস্তে দুরে সরে যায়। সে দুরে যেতে যেতে হারিয়ে যায়।

মিতু এতটুকু বলেই চুপ করে থাকল। আমার মনেহয় এখানেই শেষ নয়। তারপরেরটুকু জানার আগ্রহ জাগছে। অর্ধেক শুনে আর অর্ধেক বাকি রাখলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। আমার এখন তাই হচ্ছে। তার নীরবতা নিজেই ভাঙবে নাকি আমি ভাঙিয়ে দিব।

-তারপরে আমি ভেঙে পড়ি। আমার বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে ডিপ্রেশন থেকে বের করে আনে। তবুও জীবনের কালো অধ্যায় হয়ে থেকে যায়। সেটা আমার অনেক বড় ভুল হয়ে থেকে যায়।
কথাগুলো বলে মিতু যেন হালকা হয়ে গেল। অনেকদিনের জমানো কথা আমায় বলছে। তার মাঝে এক চঞ্চলতা কাজ করছে। মেয়েটার মাঝে লুকিয়ে থাকা চঞ্চলতা জেগেই যাচ্ছে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। পাখিরা যার যার মত বাসাত ফিরছে। আলো ফিরে যাচ্ছে তার মত। আমিও মিতুর সাথে বাসার দিকে হাটছি। একটু আগে তাকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছি। সেটা পছন্দ নাকি অপছন্দ সেটা বুঝতে পারিনি। মেয়েরা নিজেদের পছন্দমত কিছু কিনতে চায়। আমি নিজের ইচ্ছায় কিনে দিয়েছি। তাই কেমন হয়েছে বলতে পারিনা।

পরেরদিন সকাল সকাল ভার্সিটির জন্য বের হলাম। ভার্সিটিতে একটা পোগ্রাম আছে। সকালবেলা মিতু পড়তে আসলে, তাকে না পড়িয়েই বিদায় জানিয়েছি। গেটের সামনে আসতেই মিতু পিছন থেকে ডাক দিল। পরনে কালকের সেই শাড়িটা। এতক্ষণে মনেহয় শাড়িটা তার বেশ পছন্দ হয়েছে।

-আমি আপনার সাথে যাব।
মিতুর কথার মধ্যে একটা জোর করার ভাব প্রকাশ পাচ্ছে। যেটা উপেক্ষা করার মত ক্ষমতা আমার নেই। আমি একবার তাকিয়ে বললাম
-আচ্ছা চল।

নবীনবরণ অনুষ্ঠানের জন্য সবাই নতুন ভাবে সেজেছে। আমিও নতুন একটা পাঞ্জাবী পরে এসেছি। গত সপ্তাহে কিনেছি। আমার পাশে মিতুকে সবাই নতুনভাবে দেখছে। একজন ডেকে বলল
-কিরে তোর গার্লফ্রেন্ড?
কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। মিতু মুচকি হাসল। বেশি কথা না বলে চলে এলাম।

ভার্সিটির পোগ্রামটা ভালভাবে শেষ হল। মিতুকে নিয়ে আমার একটু অসস্তিতে পরতে হয়েছিল। সবাই আমার গার্লফ্রেন্ড ভেবে নিয়ে বারবার বলছিল। আমি উত্তরে মুচকি হেসেছি। হাসিতে তারা যা ভাবার ভাবছে।

-আপনার ঘরটা এমন অগোছালো করে রাখেন কেন!
মিতুর কথা শুনে একটু অবাক হলাম। কোমরে ওরনা পেচিয়ে রুম পরিষ্কার করছে। আমি প্রথমে আপত্তি করলেও পরে বলল
-আমাদের বাসায় থেকে এইরকম অগোছালো থাকলে,কেমন দেখায়!
পরে আর আপত্তি করিনি। ঘরে সব ময়লা পরিষ্কার করছে। বিনিময়ে তার সাথে আমাকে ঘুরতে হবে। তাতে কোন আপত্তি নেই আমার।

-এখন আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন?
রাতে খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে আছি। আজ বেশ রাত করে খাবার খেলাম। হঠাৎ এত রাতে মিতুকে দেখে চমকে গেলাম। এত রাতে ঘুরতে যেতে চায়! অবাক হয়েই বললাম
-এখন ঘুরতে যাবে!
-হুম।
-তোমার বাবা-মা কেউ দেখলে সমস্যা আছে।
-বাবা-মা দুজন ঘুমিয়ে আছে।
-কিন্তু এখন গেটের তালা লাগানো।
-আমি চাবি নিয়ে এসেছি।
মিতু চাবি বের করে দেখাল। এই মেয়েটা সত্যি একটু পাগলি টাইপের আছে। বাবার কাছে চাবি চাইলে দিত না। নিশ্চয় লুকিয়ে নিয়ে এসেছে। উপায় না দেখে বের হলাম তার সাথে।

ব্যাস্ত নাগরীর বুকে এখন ব্যাস্ততা নেই। শুনশান রাস্তায় হাটছি দুজন। রাস্তার পাশে কিছু মানুষ ঘুমিয়ে আছে। তাদের চোখে কত সুখের ঘুম! ভাবতে অবাক লাগে। মিতু আমার পাশাপাশি হাটছে। এখন তাকে চা খাওয়ার জন্য বলব! এত রাতে দোকান খোলা নেই। তবুও বললে কেমন হয়!

-চা খাবে?
আমার কথা শুনে সে হেসে বলল
-এখন চা নয়। চলুন কুয়াশা খাই।
-কুয়াশা খাবে!
-হুম। আকাশের দিকে তাকিয়ে, দু হাত দুদিকে ছড়িয়ে কুয়াশা খাব।

কুয়াশা খাওয়া শেষে দুজন বাসায় ফিরলাম। এত রাতে এইরকম কুয়াশা খেতে কেউ রাস্তায় বের হয়! আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। ঘড়িতে প্রায় তিনটা বাজে। যে যার মত রুমে চলে গেলাম।

মেয়েটার সাথে চলতে চলতে কখন যেন তাকে ভাল লেগে গিয়েছে। ভাল লাগার ব্যাপারটা হুট কতে তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু তাকে ভাল লাগার ব্যাপারটা বলতে পারছি না। এর আগে একজনকে ভালবেসে ঠকেছে। তাহলে কিভাবে তাকে ভালবাসার কথা বলি!

সকালবেলা ঘুম ভাঙল দরজায় আওয়াজ শুনে। আমি ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দেখলাম, বাড়িওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে। এত সকালে কি কারনে! ভেতরে আসতে বলে একটা চেয়ার এগিয়ে দিলাম।

-তুমি এই মাস পরে বাসা ছেড়ে দিবে।
ঘুম ঘুম চোখে বিছানায় বসে ছিলাম। বাড়িওয়ালার কথা শুনে ঘুম চলে গেল। কি বলেন উনি! বাসা ছেড়ে দিব মানে! আমি আমতা আমতা করে বললাম
-কেন আংকেল!
-সেটা তোমাকে জানতে হবেনা। তুমি এই মাস পরে
-কোন কিন্তু নয়। এই মাসে বাসা খুঁজে, সামনের মাসে চলে যাবে।

বাড়িওয়ালা চলে গেল। কথায় আছে অভাগার সুখ বেশিদিন কপালে সয় না। আমার বেলায় তেমন হল। খুব ভালই ছিলাম। হঠাৎ করে কি হল উনার! কিছুই মাথায় আসছে না। এখন বাসা পাব কোথায়!
কিন্তু কেন এমন হল সেটাই বুঝতে পারছি না।

আজ মিতুকে মনের কথা জানিয়ে দিব ভাবছি। এমনিতেই বাসা ছেড়ে দিতে হবে। তাই যা হবার হবে। মিতুকে জানিয়ে দিব ভালবাসার কথা। নিজের মাঝে কথাগুলো লুকিয়ে রাখলে বারবার আফছোস হবে। তাই মিতুকে একটা মেসেজ লিখে পাঠিয়ে দিলাম।

এরপরে মাসের শেষ চলে এসেছে প্রায়। আজ মাসের শেষ দিন। কালকে বাড়িওয়ালা বাসা ছেড়ে দিতে বলেছে। আমি বাসা খুঁজেছিলাম। কিন্তু পাইনি। কালকে আবার আসবে বাড়িওয়ালা। আমি ব্যাগপত্র সব গুছিয়ে রেখেছি।

সকালবেলা বাড়িওয়ালা এসে হাজির। আমি ভাড়ার টাকা বের করে মালিকের দিকে এগিয়ে দিলাম। মালিক রেগে বলল
-আমি ভাড়া নিতে আসিনি। তুমি আজকে বাসা ছেড়ে দিবে।
-কেন!
-আমি তোমাকে আর এই বাসায় রাখব না। বেড়িয়ে যাও। নতুন বাসা খুঁজে নাও গিয়ে।
আমি রাতেই ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখেছি। এখন ব্যাগে কাপড় নিয়ে বের হব। বাকি জিনিসপত্র পরে নিয়ে যাব।

-ওর সাথে আমাকেও যেতে হবে।
আমি ব্যাগ হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হলাম। মিতু একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে এসে আমার পাশে দাড়াল। এটা তার নিজের ব্যাগ। মিতুকে দেখে তার বাবা অবাক হয়ে গেল। আমার সাথে সে কোথায় যাবে! অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
-তুই কোথায় যাবি!
-এই শহরে ব্যাচেলর বাসা পাওয়া মুশকিল। বউ হিসেবে তার সাথে আমাকে যেতেই হবে।
-মানে!
-মানে আমরা বিয়ে করেছি। সেদিন তুমি বাসা ছাড়তে বলেছিলে আমার জন্য। তুমি ভেবেছিলে আমার সাথে ওর রিলেশন চলছে। আমিও মনে মনে ওকে ণিয়ে এটাই ভাবতাম। কিন্তু সম্মতি পাইনি। পরে একদিন মেসেজে তার ভাল লাগার কথা জানায়। তাই আমরা পরেরদিন আমরা বিয়ে করে নিয়েছি।

মিতুর কথা শুনে তার বাবা রেগে গিয়েছে। আমার দিকে এগিয়ে আসছে। দেখে মনেহয় আমাকে মারবে। আমি শুধুই চুপ করে বসে আছি। মিতু পাশ থেকে বলল
-বাবা, তোমার জামাই এর উপর রাগ করোনা। আমাদের দোয়া কর।

ওর বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
-বাসা খুঁজতে হবে না। এই বাসায় থাক। যা করার তা করা হয়েছেই তো। এখন বের করেই লাভ কি!
মিতুর বাবা চলে গেল। মিতু আমার দিকে তাকিয়ে চোখ নাড়িয়ে বলল
-এই যে মিস্টার। ঘরে চল। অনুমতি পেয়ে গিয়েছি। এখন আর বাসা খুঁজতে হবে না।
মিতুর সাথে ব্যাগ নিয়ে রুমে ঢুকলাম। এখন ব্যাচেলার হয়ে বাসা খুঁজতে হবে না। বাসা পেয়ে গিয়েছি। সাথে সুন্দরি একটা বউ পেয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×