somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাঁন কপালি বাছুর

১৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

।।। ১।।।
অন্তুর ডাকে ঘুমটা ভাঙ্গল। মনে হয় খুব ভোরেই জাগিয়ে দিয়েছে। দরজা সম্পূর্ণ খোলা তবুও এতটুকু আলোও আসছেনা। হয়তবা ফজরের আযান এখনও পড়েনি।
উঠে বাহিরে গেলাম। উঠানে গিয়ে দেখি যা ভেবেছিলাম তাই! চারদিক একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এত সকালে ঘুম ভাঙ্গিয়েছে ভেবে অন্তুর উপর প্রচন্ড রাগ হল।
টিউবওয়েল থেকে হাত মুখ ধুয়ে বারান্দার চেয়ারে এসে বসতেই দেখি অন্তু নাস্তা নিয়ে হাজির। তাকে দেখেই ভারি গলায় বললাম "এত ভোরে ঘুম ভাঙ্গালি কেন? "
আমার কথা শুনে মনে হল অন্তু যেন আকাশ থেকে পড়ল।আর বলল "এখন ভোর! ঘড়িতে এগারোটার উপরে বাজে........ এটা তোর ইট পাথরের শহর না এটা হল গেরাম! সবুজ গাছ আর ঘাসে ভরা গেরাম এখানে বেলা এগারোটার মানে অনেক বেলা। (অন্তু সব সমই গ্রামকে সুর করে গে..রা..ম বলে শুনলেই এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে মনটা ভরে উঠে।)
আমি বললম
-- " এগারোটা হয়ে গেছে বলিস কি ! চারদিকে এত অন্ধকার কেন?"
--"কালবোশেখি আসছে, আজ মনে হয় ঝড়ে বাড়ি ঘর একেবারে লন্ডভন্ড করে দেবে ......... তুই নাস্তা কর। আমি আসছি।" বলেই অন্তু ব্যস্ত ভঙ্গিতে চলে গেল।
অন্তু আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। কলেজ লাইফ থেকেই তার সাথে আমার বন্ধুত্ব। এরপর একই ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে গেলে আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়।.......
অন্তুর মুখে তার গ্রামের সৌন্দর্য্যের বর্ণনা কতবার যে শুনেছি তার কোনো হিসাব আমার কাছে নেই।আর আমিও লাইফে কখনও গ্রামে যাইনি বলে ওদের গ্রামের কথা শুনতে শুনতে আমি একেবারেই মুগ্ধ হয়ে যাই।
ভার্সিটিতে দুই পলিটিকাল পার্টির মারামারির কারণে ভার্সিটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ।আর আমারও তেমন কোনো কাজ না থাকায় অন্তুর সাথে চলে আসলাম তার গ্রামে। অন্তুদের গ্রামে আসা প্রচন্ড কষ্টকর বাস, ট্রেন, নৌকা, হাটা সবকিছুই লাগে।
নৌকা ভ্রমণটা খুব উপভোগ করেছিলাম। ছোট নদী দিয়ে নৌকা চলতেছে নদীতে দুরন্ত বাচ্চারা সাঁতার কাটতেছে..... নদীর পাড়ে ছোট ছোট গ্রাম..... এক কথায় অসাধারণ দৃশ্য।
প্রচন্ড ক্লান্ত ছিলাম আর খাবার-দাবার শেষ করে বেশ রাত করেই ঘুমিয়েছিলাম বলে এতসময় যে ঘুমিয়েছি তা বুঝতেই পারিনি।
।।। ২।।।
অন্তু হুরহুর করে আসতেছে। দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড জরুরি কোনো কিছু বলতে আমার কাছে আসতেছে। আসলে জরুরি কিছুই না! অন্তু সবসময় এমন একটা ভাব করে হাটে দেখে মনে হয় সে সিনেমার ডিরেক্টর, যে সারাক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করতেছে একটা সুন্দর শর্ট নেওয়ার জন্য।অন্তু আমার কাছে এসেই বলল,
"তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসতো.... এখন হাওড়ে বেড়াতে যাব "
--"তোর মাথা খারাপ হয়েছে? দেখছিস না কি অন্ধকার হয়ে ঝড় আসতেছে..... এখন কী হাওড়ে বেড়াতে যাওয়ার সময়? শুনেছি ঝড়ে হাওড় অঞ্চলে অনেক বেশি বাঁজ পরে।"
-- "তো! বাঁজ পরার ভয়ে প্রকৃতির সুন্দর একটা রূপ না দেখে তুই ঘরে বসে মুড়ি খাবে!!.....আর মরলেতো মরব তাতে কি আর হবে? তুই কোনো কথা না বলে রেডি হয়ে আসত। আর আমি গিয়ে দেখি দুটা ইদ্রিস ছাতা পাই কিনা...... ঠান্ডা বেশি লেগে গেলে তো বাঁচতে হবে।"

প্রচন্ড বাতাস বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিও পড়তেছে বড় বড় ফোঁটায়। বাতাসে মনে হচ্ছে ছাতাটা ভেঙ্গে ফেলবে। তবে তা বাতাসের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, ছাতাটা প্রচন্ড শক্ত বলে। মনে হচ্ছে খুব কাছেই কোথাও পৃথিবী কাঁপিয়ে বাঁজ পড়েছে। এক প্রচন্ড আলোর ঝলকানিতে চোখে ধাঁধার মতো লাগতেছে। হাওড় দেখতে খুব ভালো লাগছিল। চারদিকে পাকা-আধ পাকা ধানের ক্ষেত। কোনো কোনো ক্ষতের ধান কাটা আবার কোনো ক্ষেতের ধান কিছু কাটা.......ছোটখাটো অনেক বিলও দেখলাম।
কোথাও এরকম ঝড় হতে পারে বলে আমার ধারণাই নাই। মনে হচ্ছে যেন বতাসে সমগ্র পৃথিবীটাকেই উড়িয়ে নিয়ে যাবে। ঝড়ের মধ্যে ঘন্টা দুয়েক হেঁটে আমরা হওড়ের অনেক দূর চলে আসলাম। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাতাসের বেগও বাড়তে লাগল। সেই সাথে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টিও হচ্ছে। একসময় প্রচন্ড এক ঘূর্ণি বাতাসে আমাদের ছাতা দুটো ভেঙ্গে উড়িয়ে নিয়ে গেল। বৃষ্টির পানিতে প্রচন্ড ঠান্ডা লেগে যাওয়ায় আমরা এক হিজল গাছের নিচে আশ্রয় নেই।
আমি আর অন্তু হিজল গাছটার নিচে জবুতবু হয়ে বসে আছি। বেলাও অনেক হয়ে গেছে। বৃষ্টি কমলেই বাড়ি চলে যাব বলে অন্তুর সাথে কথা বলছিলাম। এমন সময় অন্তু বলল "ঐ দেখ " আর তর্জনী দিয়ে হাওড়ের রাস্তাটা দেখাল। দেখলাম কে যেন কী বলতে বলতে আসছে। আমরাও এগিয়ে রাস্তার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি ৭০/৮০ বছর বয়স্ক এক বুড়ি। ঠান্ডায় বুড়ি প্রচন্ড কাঁপতেছে। মনে হচ্ছে বুড়িটা এখনই পড়ে যাবে।
আমাদেরকে দেখেই বুড়ি বলল "আমার চাঁন কপালি বাছুরটা দেখছ বাফধন? লাল বাছুর খফালও সাদা চাঁন। " এ কথা বলতে বলতেই বুড়ি হাওড়ের বেলে মাটিতে অজ্ঞন হয়ে পড়ে গেল।

।।। ৩।।।
বুড়ি দুদিন পর্যন্ত অজ্ঞান ছিল। অন্তুর দাদা ডাক্তার ডেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করালেন । জানা গেল বুড়ির বাড়ি অন্তুদের গ্রামের কয়েকটা গ্রাম পরে। অন্তুর দাদা লোক পাঠিয়েছেন বুড়ির বাড়ির কাউকে নিয়ে আসতে। লোক পাঠানোর পরপরই বুড়ির জ্ঞান ফিরে এল। জ্ঞান ফিরতেই বুড়ি আবারো সেই "চাঁন কপালি" বাছুরের কথাই বলতেছে আর বলতেছে বাছুর গাইয়ের দুধ ছাড়া কিচ্ছু খায় না......... এটা যদি না খেয়ে মারা যায়। এই বলে বুড়ি কাঁদতেও শুরু করে।
বুড়ির বাড়ি থেকে লোক এসেছে তারা তাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতেছে আর তখনি বুড়ি চলে যায় রহস্যময় পৃথিবীটাকে ছেড়ে এক অন্য জগতে, না ফেরার দেশে।
অন্তু, অন্তুর দাদা, অন্তুর বড় চাচাদের সাথে আমিও গিয়েছিলাম বুড়ির গ্রামে, বুড়িকে কবর দিতে। সেখান থেকে অনেক রাতে অন্তুদের বাড়ি আসি।
পরদিন খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায় মনে হল কী একটা যেন ডাকছে। বারবার, খুব করুণভাবে ডাকছে । কিন্তু কি এভাবে ডাকছে তা আমি কোনোভাবেই চিনতে পারতেছিনা। তাই বেড থেকে উঠে দরজা খোলে বাহিরে বের হতেই দেখি উঠানে দাড়িয়ে আছে মাস তিনেকের এক বাছুর। বাছুরটা সম্পূর্ণ লাল রং এর তবে কপালের কিছু জায়গা সাদা। হঠাৎ মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগল এটা বুড়ির চাঁন কপালি বাছুরটা নয়ত? বুড়িত এরকম "চাঁন কপালি" বাছুরের কথা বলতে বলতেই মারা গেল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৩৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×