somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যানভাসে আঁকা জীবনের তৈলচিত্র

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সাদা জমিনের মাঝে হাল্কা এ্যাশ ছাপা চিকন পাড়ওয়ালা শাড়ী পরা ইলা গাড়ীর পেছনের সীটে হেলান দিয়ে বসা। চেহারায় এক আভিজাত্যের ছাপ মাখানো, অল্প একটু ঘোমটার ভেতর রুপোলী চুলগুলো হাতখোপায় বাঁধা, একদা চঞ্চল হরিন চোখদুটোর মায়াবী আকর্ষন আজও কিছুটা ঝলক দিয়ে উঠে টিকোলো নাকের উপর থেকে রিমলেস চশমাটা খুললে।

চলন্ত গাড়ীর জানালার বাইরে চোখ মেলে ইলা তাকিয়ে দেখলো কয়েক বছর আগেও যে খোলামেলা জায়গা ছিল তার এখন কোন চিন্হ নেই। এখন আর সবুজ দুর্বা ঢাকা মাঠে ছেলেপুলেরা বিকেল বেলা বল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় না। তারা হয়তো এখন ঘরে বসে কম্পিউটারে গেমস খেলে।

রাস্তার দুপাশের বাড়ীগুলো ও যেন একটার গায়ে আরেকটা লেগে আকাশ ছোয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ঘাড় উচু করে তাকালেও মাথা দেখা যায় না । সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গাড়ী। এক মিনিটের পথ যেতে এক ঘন্টা লাগে।এ জন্য আজকাল তার কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না তেমন।
কিন্ত আজ দু সপ্তাহ ধরেই ইলার মনটা অস্থির হয়ে আছে আব্বাস কে এক নজর দেখার জন্য। যদিও প্রতিদিনই তার সাথে কথা হয় ফোনে । একজন আরেক জনের খোজ খবর না পেলে অস্থির হয়ে যায় । কি হলো ?কি হলো অসুস্থ নাকি ! দুজনারই বয়স হয়েছেতো তাই ।

আস্তে আস্তে গাড়ীটা এসে থামলো নীলিমা নামে বহুতল এক ভবনের সামনে।যদিও লেখা আছে অতিথির গাড়ী বাইরে রাখুন তবে তার জন্য এ বাড়ীর পার্কিং অবারিত।চালক দরজা খুলে ধরলে অনেক কষ্টে আড়ষ্ট শরীরটাকে টেনে নামিয়ে আনলো ইলা। পার্কিং হলেও অন্য এপার্টমেন্টের মত অন্ধকার ধুলোবালি মাখা নয়। চারিদিক গ্রীল করা খোলামেলা,বাইরে তাকালে এক ভালোলাগায় মনটা ভরে যায় । আব্বাসের রুচি আছে , নাহলে ডেভলাপারকে জমি দেয়া সত্বেও চারিদিকে এমন সুন্দর বাগান, গাছ পালা,সিড়ির ধাঁপে ধাঁপে নিজ হাতে আঁকা ছবি দিয়ে দশ মালিকের বাড়ী কে সাজিয়ে রাখে?
কুঁচকে থাকা শাড়ীটা হাত দিয়ে ঠিক ঠাক করতে গিয়ে মনে হলো আব্বাস পছন্দ করে না তার সাদা শাড়ী পরা।সেজন্যই এখানে আসার সময় হাল্কা ছাপা শাড়ী পরে ইলা। প্রায় আট বছর হলো আমিন তাকে ছেড়ে অন্য পৃথিবীতে চলে গেছে। তারপর থেকে সাদা শাড়ী তার সঙ্গী কিন্ত এখানে আসার সময় ব্যাতিক্রম ঘটে।
'খালাম্মা এই যে ব্যাগটা, আপনি নিতে পারবেন ? না আমি উপরে দিয়ে আসবো'?

চালকের কথায় চমকে উঠে ইলা, তাইতো আব্বাসের জন্য নিজের হাতে পুডিং বানিয়ে এনেছে সে ।ইলার হাতের বানানো পুডিং তার অনেক প্রিয়।

' না না তুমি দিয়ে যাও রফিক , দুটো ব্যাগ নিয়ে আমি উঠতে পারবোনা'।
লিফটে সোজা ছ তালায় উঠে আসে ইলা ডুপ্লেক্সের উপরতলায়। এখানেই আব্বাসের ছবি আকার স্টুডিও। ইলা জানে এখানে আসলেই সে তাকে পাবে। গেটের দারোয়ানরা তার এত পরিচিত যে সে আসলে ইন্টারকম করার ও দরকার হয় না।
বেল বাজতেই আব্বাস দরজা খুলে দেয় আর চমকে উঠে ইলাকে দেখে।
'আরে তুমি ! খবর না দিয়ে সোজা এসে পরলে যে কি ব্যাপার ? আসো আসো ভেতরে আসো আজ কদিন ধরেই তোমার কথা ভাবছি'।
“তাই নাকি! তা ভাবলেই যখন তখন একবার যেতেও তো পারতে”
বলতে বলতে ইলা কালো কাশ্মীরি শালটা আরো জড়িয়ে নিয়ে ঘরের ভেতর পা দেয়। বেশ বড় ঘরটা ছিমছাম সাজানো গুছানো।ঘরের একদিক জুড়ে পুরোটাই একটা খোলা ব্যালকনি তাতে নানা ডিজাইনের টবে হরেক রকম পাতাবাহার।কেমন এক সবুজ ছায়া ছায়া ভাব।এখনও বেশ ঠান্ডা। তাই থাই এর দরজা লাগানো তবে কাচের ভেতর দিয়ে দেখতে পাচ্ছিল ইলা সব কিছু।ঘরের দেয়ালে আব্বাসের আঁকা ছবি ছাড়াও আরো দু একজন শিল্পীর ছবি। একটা শিল্পী বিখ্যাত গনেশ পাইনের আঁকা। অনেক কষ্টের টাকা খরচ করে এই দামী ছবিটা কিনেছিল মনের খোরাক মেটানোর জন্য। গল্পচ্ছলে একদিন বলেছিল তাকে সে।
একদিকে ছবি আকার ইজেল রং তুলি ক্যানভাস সব সাজিয়ে রাখা।ইজেলে একটা ছবি অর্ধেকটা আঁকা।আব্বাস এখন আর আগের মত অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই একটা ছবি একে উঠতে পারে না, কষ্ট হয়।
বিশাল সেই ঘরটির আরেক দিকে বেতের এক সেট সোফা সামনে কাচের টেবিল আর তার উলটো দিকে মোটা সুজনী দিয়ে ঢাকা নানা রকম কুশন দিয়ে সাজানো এক ডিভান। মাঝে মাঝে আব্বাস এখানেই শুয়ে থাকে।ঘরের ভেতরও চীনা মাটির টবে কত রকম ইনডোর প্ল্যান্ট এখানে সেখানে রাখা।মনে হয় এলোমেলো কিন্ত তা নয় আসলে ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় এর মধ্যেও রয়েছে এক শিল্পের ছটা। সত্যি অনেক রুচিশীল এই ভদ্রলোক, আর সেটাই ইলার মনকে আকর্ষন করেছিল সবচেয়ে বেশী।
অনেক বার দেখা ঘরটায় আবারো চোখ বুলাতে বুলাতে ইলা এগিয়ে যায় বেতের সোফাটার দিকে।
'খালাম্মা আমি নীচে আছি দরকার লাগলে ডাক দিয়েন' পুডিং এর ব্যাগটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলে উঠে রফিক।
মাথা নাড়তেই রফিক ঘর থেকে বেরিয়ে লিফটের দিকে এগিয়ে যায়।
‘এই ব্যাগে আবার কি এনেছো শুনি’ ? সামনের ডিভানে বসতে বসতে মোটা কাচের চশমা পরা চোখদুটো তুলে প্রশ্ন করে আব্বাস।
“তোমার জন্য একটু পুডিং”।
‘তোমার এই অভ্যাস আর গেল না, সবসময় একটা না একটা কিছু আনতেই হবে শুনি?’
'এমন করে বলছো কেন? 'তুমি পছন্দ করো তাই এনেছি', ম্লান গলায় বলে উঠে ইলা।
'একি তুমি মন খারাপ করছো নাকি ? আমি তো এমন করেই তোমার সাথে কথা বলি আজ পনের বছর ধরে, প্লিজ এমন করোনা, জানতো তুমি মন খারাপ করলে আমারও মন খারাপ হয়ে যায়, তাছাড়া তোমার শরীর ভালোনা কখন চুলোর পাশে গিয়ে আগুন টাগুন লাগিয়ে বসো গায়ে তার জন্যই চিন্তা করি’।
“না কিছু মনে করিনি, বাসায় একা থাকি, কাজ নেই, কিছু নেই, একটা পুডিং বানানো কোন ব্যাপার নাকি!আর আমি নিজেই কি সব কিছু করেছি নাকি? রিনার মার সাহায্য ছাড়া” নিজেকে সামলে নিল ইলা।

‘ওহ তাই নাকি বেশ বেশ খুব সুন্দর হয়েছে দেখতে, বুঝতে পারছি খেতেও অনেক মজা হবে ইলা’ ঢাকনা খুলে উকি দিয়ে এক নিশ্বাসে বলে গেল কথাগুলো আব্বাস।

“তারপর তোমার বাসার সবার খবর কি ভালো ? তোমার বৌ কবে আসবে কানাডা থেকে”?
‘ হ্যা সবাই ভালো আছে আর বৌ এর কথা শুনেছি সে নাকি আরো পাঁচ মাস থাকবে। ছেলে মেয়ে নাতি নাত্নি নিয়ে ওখানে সে ভালোই থাকে।তাই আসতে চায়না। তার আবার বাসাভর্তি লোকজন ছাড়া ভালোলাগে না।আর এ বাড়িতো শুন্য’।
“কিন্ত তুমি তো আছো, বয়সও হয়েছে, এত বড় বাড়ীতে একা একা থাকা ও তো ঠিক না। কখন কি হয়” ?
‘একা কই ইলা ! তাহের আছে আমার সবকিছু দেখাশোনা করে ,বুড়ি জমিলার মা আছে রান্না বান্না করে দেয়'।
“হু তা দেয়, তারপরও একজন আপন মানুষ কাছে থাকা”।
‘ইলা এত দিনেও তোমার বুদ্ধি হলো না ! মনে আছে আজ থেকে সেই পনেরো বছর আগে যখন আমাদের প্রথম পরিচয় তখন তোমার বোকামীর জন্য তোমাকে মাঝে মাঝে বুদ্ধু,ছাগল বলে ডাকতাম আর তুমি কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে যেতে।তারপর সেই ডাক আর ডাকিনি । কিন্ত আজ এতদিন পরে তোমাকে সেই আদরের ডাকটা আবার ডাকতে ইচ্ছে করছে। আরে আইনি বন্ধনেই কি মানুষ একে অন্যের আপন হয় বলো ‘?
“না তা হয়না অবশ্য”, ইলা বলে উঠে।
'তাহলে পঞ্চাশ বছর সংসার করলাম বলেই কি সে আমার আপন হবে? আমি ভালো আছি অনেক ভালো আছি ইলা আমাকে নিয়ে তুমি একটুও ভাববে না বলে দিলাম। তার চেয়ে নিজেকে নিয়ে ভাবো। তুমিও তো একাই আছো। ছেলে মেয়ে বাইরে চলে গেছে, আমিনও তোমাকে একা রেখে গেছে, এখন তুমি নিজের কথা ভাবো ‘ বলতে বলতে আব্বাস এগিয়ে এসে গভীর মমতায় তার মাথায় হাত রাখে।

কখন চোখের কোন দুটোতে দু ফোটা পানি এসে বাসা বেধেছে খেয়াল করে নি ইলা। আব্বাস দ্রুত হাত সরিয়ে নিল। এত বছরের সম্পর্কেও এমন আবেগের বহিপ্রকাশ খুব কমই হয়েছে তাদের মধ্যে।
‘তাহের তাহের কি ব্যাপার এতক্ষন ধরে মেহমান বসে আছে এখনো চা দিলি না'?
বিশ বাইশ বছর বয়সের তাহের ছেলেটা বলতে গেলে আব্বাসের ছায়া সঙ্গী। গাড়ী চালিয়ে ডাক্তারের কাছে নেয়া বাসায় বাজার করা ছাড়াও বাসায় তার যাবতীয় কাজে সাহায্য করে যায় একমনে। এখনো সে দাঁড়িয়ে আছে পর্দার ওপাশে আব্বাসের হুকুমের অপেক্ষায়।

‘নানীরে বলেছি স্যার চা বানাতে, এক্ষুনি আনছি'।
‘জমিলার মাকে বলতো একটু পুরি বানাতে'
ইলা যে পুরি পছন্দ করে আব্বাস কখনো ভোলে না।
‘ইলা তোমার কি মনে আছে সেদিন গুলোর কথা যখন তোমার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হলো ‘?
“কেন মনে থাকবে না সে সব কথা কি ভোলা যায়”! দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে ইলার।
‘তা ঠিক আমিও প্রায় মনে করি।আজ পনের বছর তোমার সাথে আমার কত কথা,কত বিষয় নিয়ে কত আলাপ কত খুনসুটি আবার কখনো কি মারাত্মক ঝগড়া মনমালিন্য দুদিন কথা বন্ধ, কিন্ত সকালে উঠে আমাদের একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানাতাম ঠিকই। মনে আছে তুমি সব সময় বলতে ‘আই লাভ এস এম এস’ যদিও এখন চোখে দেখি না ঠিকমত তবুও ঝাপসা চোখে এস এম এসে গুড মর্নিং লিখতে আজও আমার ভুল হয় না ইলা’।
“খেয়াল করেছো আব্বাস শীতটা কিন্ত এখনো পুরোপুরি যায় নি, পাতলা একটা ফ্ল্যানেলের শার্ট পরে আছো"
প্রসংগ পাল্টানোর জন্য তাড়াতাড়ি বলে উঠে ইলা। সেই আবেগময় দিনগুলোর কথা মনে হলে বড্ড কষ্ট হয় তার। মনে পরে আমিনের কথাও সেই সাথে।
‘আমার কিন্ত তেমন একটা শীত লাগছে না, তোমার লাগছে কি? একদম বুড়ী হয়ে গেছ মনে হয়’ ঠাট্টা করে বলে উঠে আব্বাস।
“হু বুড়ীইতো, বয়স কম হলো নাকি, তুমি যেন এখনো ছোকরা আছো, যাও গরম কিছু গায়ে দিয়ে আসো”?
‘ঠিক আছে দাড়াও সোয়েটার পরে আসি’ ভেতরের ঘরের দিকে হেটে যাবার সময় ইলা লক্ষ্য করলো কেমন যেন সামনের দিকে একটু ঝুকে হাটছে আব্বাস।গত বছর চোখের ছানি অপারেশন করিয়েছে তখন ইলা দেখতে গিয়েছিল হাসপাতালে। কালো চশমা পরা চোখে দেখতে না পারা আব্বাসের হাতটি আলতো করে ধরে বলেছিল “আব্বাস আমি ইলা” শুনেই জোরে চেপে ধরে বলেছিল ‘আমি টের পেয়েছি তুমি’।
“কি করে টের পেলে শুনি”?
‘সেটা বলা যাবে না’ বলে এক রহস্যময় হাসি দিয়েছিল।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই আব্বাস ঘরে ঢুকলো। তাকে দেখেই ইলা চমকে উঠে!একি সেই পুলওভারটা এখনো আছে ?
‘ইলা চিনতে পেরেছো সোয়েটারটা ‘?
“কেন চিনবোনা” ধরা গলায় বলে ওঠে ইলা।নিজের হাতে বানিয়ে জন্মদিনে উপহার দেয়া গাঢ় নীল রঙ্গের সেই পুলওভার। সেই কত বছর আগের কথা।
‘জানো তোমার দেয়া কোন কিছুই আমি ফেলে দেইনি’
“আমি জানি আব্বাস সেটা আর তোমাকে বলতে হবে না । তারপর ডাক্তারের কথায়তো এখন লেখালেখি বাদ দিয়েছো বলেই মনে হয়, তারপর ছবি আঁকা কেমন চলছে শুনি”?

'চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে , চোখটা ঠিক আর হলো না ইলা। সবকিছু ঝাপসা দেখি এমন কি এই যে তুমি সামনেই বসে আছো তোমাকেও। লেখালেখি আর আগের মত হয়ে উঠে না ।তবে ছবি আঁকাটা ছাড়িনি, কষ্ট হলেও একটু একটু করে আঁকি প্রতিদিনই।তুমি তো জানোই ডুপ্লেক্সে বানানোর উদ্দেশ্যই ছিল ছবি আঁকার একটা স্টুডিও বানানো, সেই ডুপ্লেক্স হলো কিন্ত আমার চোখের জ্যোতিও ফুরিয়ে এলো’।
“জানি আমি ভালো করেই। তবে আমার সেই সূর্যমুখীর ছবিটা আঁকতে ভুল হয় না যেন। এটা পনের বছর আগে করা তোমার কাছে আমার এক ছোট্ট আবদার”।
‘মনে আছে ইলা ভুলিনি, কিছুই ভুলি নি। ওটা না একে আমি মরেও শান্তি পাবো না’।
চা এর ট্রে নিয়ে ঘরে পা দিল তাহের।আব্বাসের সব কিছু টিপটপ গুছানো। এই যে চা সেটাও সুন্দর ট্রেতে করে কেটলীতে টিকোজী দিয়ে ঢেকে এনেছে। পাশেই প্লেটে গরম গরম পুরি আর ইলার বানানো পুডিং।
আব্বাস চা বানাতে এগিয়ে আসলে ইলা বলে উঠে, “আমি ঢালি আব্বাস”।
কেটলী থেকে কাঁপা কাঁপা হাতে চা ঢেলে দুধ মিশিয়ে এগিয়ে দেয় আব্বাসের দিকে।
ইলার কেপে ওঠা হাতের দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি কাপটা ধরতে ধরতে আব্বাস বলে উঠে…
‘আচ্ছা প্রেশারের ওষুধটা ঠিকমত খাচ্ছোতো ইলা? আর ডাক্তারের কাছে আরেকবার গিয়ে একটা ইসিজি করিয়ে নিতে ভুলো না।ডাক্তার কি বলে না বলে আমাকে জানিও। আর একা না যেতে পারলে আমাকে খবর দিও আমি সাথে যাবো না হয়’।
“তুমি শুধু শুধু আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না তো, সব ওষুধই নিয়মিত খাচ্ছি, তুমি নিজের দিকে খেয়াল করো”।
‘নিজেকে নিয়ে ভাবি না ইলা এখন তো যাবার সময় হল। আমার সমস্ত চিন্তা তোমাকে ঘিরে।তুমি কি ভাবে একা থাকবে’?
“কি যে বলো আমি কি আরো একশ বচ্ছর বেচে থাকবো বলে ভেবেছো নাকি শুনি” ইলা রাগত গলায় ঝেজে উঠে।
‘আচ্ছা বাদ দাও এসব কথা, পুডিংটা কিন্ত দারুন মজা হয়েছে । চিনি দিয়েছো নাকি’?
“না না চিনি দেইনি আমি জানি তোমার চিনি খাওয়া নিষেধ তাই splenda দিয়েই বানিয়েছি”।
‘তুমি আমার সব কিছু খেয়াল রাখো ’ বলতে বলতে খুশীর হাসিতে তার সাদা দাড়ি গোফে ঢাকা মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।এটা সেটা কথা বলতে বলতে দুজনই খুব ধীরে ধীরে চা এর কাপে চুমুক দিচ্ছিল তবুও একসময় চা শেষ হয়ে আসে । তারা জানতো চা শেষের পরেই বিদায়ের পালা।সন্ধ্যার ম্লান আলো ঘনিয়ে আসে বাড়ীর চারিদিকে।
খালি কাপটা রাখতে রাখতে ইলা উঠে দাঁড়ায়।
'এখুনি চলে যাবে' ? কেমন এক অসহায় আকুতি ঝরে পরলো যেন আব্বাসের গলায়।
“হ্যা আজ উঠি ,অনেকক্ষনতো থাকলাম” ।
‘আচ্ছা এসো তাহলে, শরীরের দিকে খেয়াল রেখো কিন্ত’ বলতে বলতে সামনে এসে ঝুলে থাকা শালের কোনাটা তুলে পেচিয়ে দেয় ইলার গায়ে যাতে ঠান্ডা না লাগে।

আব্বাসের মাফলারের মাথাদুটো টেনে দিতে দিতে ইলা বলে ওঠে
“ঠিক আছে, তুমিও ভালো থেকো অনেক আর কারো জন্য না হলেও শুধু আমার জন্য আব্বাস”।




সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৪
৫২টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×