করোনাকালে সবকিছুই ওলটপালট হয়ে গেল, চিরতরে হারিয়ে গেল অনেক প্রিয়জন। সমস্ত জল্পনা কল্পনা এক ফুৎকারে উড়িয়ে নিয়ে গেল কোভিড। তারপরও জীবন থেমে থাকে না। নিরানন্দ এই জীবনে ব্লগিং কিন্ত আমাদের জন্য এক বিশাল আশীর্বাদের মত এটা আমাদের মানতেই হবে। যাই হোক অনেক দেশে বেড়ানোর প্রোগ্রাম বাতিল করতে হয়েছে সব কিছু ঠিকঠাক হওয়ার পরও, তাই আমার সাথে একটু পুরনো দেশ ইজিপ্টেই চলুন আরেকবার ঘুরে আসি।
দুর্গের সামনের প্রধান সড়ক থেকে তোলা
মিশরের রাজধানী কায়রোর বুকের মাঝে রয়েছে এক দুর্গ যার নাম সালাদিনের দুর্গ বা সিটাডেল অফ সালাদিন। মিশর ও সিরিয়ার আয়ুবিদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সুলতান সালাদিন এর নির্মাণ শুরু করেন ১১৭৬ সনে। কায়রোর মোকাত্তাম পাহাড়ের উপর নির্মিত দুর্গটির অবস্থান ছিল কৌশলগত কারনে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। মধ্যযুগে খৃষ্টান ক্রুসেডারের হাত থেকে ইজিপ্টকে রক্ষার জন্য এই দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল। বড় বড় তিনটি পর্যায়ে এর নির্মাণ কাজ চলেছিল।, যেমন প্রথমে সালাদিনের হাত ধরর শুরু হলেও এরপর মামলুক সালতান নাসির এবং সর্বশেষ অটোমান তুর্কী শাসক মোহাম্মদ আলী যিনি পরবর্তীকালে মিশর আর সিরিয়ার শাসক হয়েছিলেন তার হাতে সমাপ্তি ঘটেছিল। ৭০০ বছর ধরে সালাদিনের দুর্গটি মিশরীয় শাসকদের সরকারী অফিস ও বাসভবন হিসেবে ব্যাবহৃত হয়েছিল।
সালাদিন দুর্গের সামনে সারি সারি ট্যুরিস্ট বাস
আমরা হেটে হেটে যখন দুর্গের কাছে গেলাম তখন বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছে মোহাম্মাদ আলী মসজিদের চুড়া
কায়রোর বিখ্যাত সালাদিন দুর্গের সামনের অংশ
পরবর্তীতে আধুনিক মিশরের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মাদ আলী ইস্তাম্বুলের হায়া সোফিয়ার আদলে সালাদিনের দুর্গের ভেতরেই মোকাত্তাম পাহাড়ের সর্বোচ্চ শিখরের উপর নিজ নামে অপুর্ব নকশায় নির্মান করেন এক মসজিদ যার নাম মোহাম্মদ আলী মসজিদ। এই নামটি আমি লেখার প্রথম দিকেও উল্লেখ করেছি। এর নির্মানকাল ১৮৩০-১৮৪৮ পর্যন্ত। এরপর থেকে এই দুর্গকে মোহাম্মদ আলী দুর্গ বলেও অভিহিত করা হয়। ইতিহাসের এই কচকচানি রেখে আসুন আমার চোখে দেখুন দুটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক মসজিদকে। প্রথমেই শুরু করা যাক মোহাম্মদ আলী মসজিদ দিয়ে ।
বুরুজ আল মোকাত্তাম নামের সালাদিন দুর্গের এই বুরুজটি ১৫২৫ সনে অটোমান শাসক ইবরাহীম পাশা নির্মান করেন
১২০৭ খৃষ্টাব্দে নির্মিত পুর্বদিকের দুটো দুর্গ প্রাকার যার নাম বুরুজ আল -রামলা আর বুর্জ আল হাদিদ
মোহাম্মদ আলী মসজিদের প্রধান প্রার্থনা ঘরে প্রবেশ পথের উপর রঙ্গীন কাচের নকশা
মোহাম্মাদ আলী মসজিদের ভেতরে আলো ঝলমলে ঝাড়বাতিতে চারিদিক ঝলমলিয়ে উঠছে চারিদিক
তবে এখন মনে হয় এই দুটো মসজিদই নামাজ হয় না। নইলে উনারা এভাবে বসে আছে কিভাবে !
মসজিদ প্রাঙ্গনে ক্লিওপেট্রার মুখোশ নিয়ে বসে আছে লোকজন, পর্যটকরা কেউ ভাড়া নিয়ে ছবি তুলছে, কেউবা কিনছে
অদুরেই একটি উচু স্থানে মুখোমুখি বসা চারটি সিংহর মুর্তি
এরপরের গন্তব্য আল হাসান মসজিদ ও মাদ্রাসা আর এর অবস্থান হলো সালাদিন মোহাম্মদ আলী দুর্গের বাইরেই দিকে দেয়ালের লাগোয়া। ১৩৫৬ থেকে ১৩৬৩ সনের মাঝে সুলতান আল হাসান এই দুটি স্থাপত্য নির্মান করেন যা আকারেও বিশাল আর সংযুক্ত করা হয়েছে নব উদ্ভাবিত স্থাপত্য কলা কৌশল।
দুর্গের দেয়ালের ঠিক বাইরেই সুলতান আল হাসান মসজিদ আর মাদ্রাসা
দেয়ালের গায়ে মসজিদের স্থাপত্য নকশা
বাইরে থেকে আল হাসান মসজিদ
মসজিদ ভবনের প্রবেশ পথ
মসজিদের প্রাঙ্গনে এক ক্যানোপি
এই মসজিদ ও মাদ্রাসার বিপরীতে রয়েছে আল রিফাই মসজিদ । এখানে দুজন পৃথিবী বিখ্যাত ব্যাক্তির সমাধি রয়েছে । একটি ইরানের শেষ সম্রাট রেজা শাহ পাহলভীর সমাধি আরেকটি মিশরের মুহাম্মাদ আলী রাজবংশের দশম রাজা ফারুকের সমাধি। রাজা ফারুকের বোন ফঔজিয়া ছিলেন ইরানের শেষ সম্রাট রেজা শাহ পাহলভীর প্রথম স্ত্রী, অবশ্য সে সময় রেজা শাহ সিংহাসনে আসীন হয় নি ।
এ হলো ইরানের শেষ সম্রাট রেজা শাহ পাহলভীর সমাধি যার মৃত্যুটি ছিল বড্ড করুন
এটি হচ্ছে মিশরের মুহাম্মদ আলী রাজ বংশের দশম রাজা ফারুকের সমাধি
শেষ বারের মত দুর্গ প্রাচীর থেকে কায়রো শহর দেখে সমাপ্তি টানলুম এই ভ্রমনের।
বিখ্যাত মসজিদ আল আজহারকে নিয়ে আলাদা পোস্টই আছে
সব ছবি আমার ক্যামেরায় তোলা
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪১