আজ সকালে অনলাইনে পেপার পড়তে গিয়ে একটা নিউজে আমার চোখ আটকে গেল, আর তা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটার স্টিভ স্মিথ তাদের জন্য নির্ধারিত হোটেলের লিফটে নাকি ৫০ মিনিট আটকে ছিলেন। তার সহ-খেলোয়াড় লাবুশেন তাকে বের করার প্রানপন চেষ্টা করে ব্যার্থ হন। এর পর বাকি খেলোয়াড়রাও এসে অনেক ধস্তাধস্তি করে লিফটের দরজা অল্প একটু ফাক করতে সমর্থ হয়। সেখান দিয়ে মশা মাছি হয়তো গলে বের হতে পারবে কিন্ত স্টিভ স্মিথ নামের মানুষটি নয়। যাইহোক এর ৫০ মিনিট পর তাকে উদ্ধার করা হয়। লিফট নাকি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এত বড় হোটেল,তার মেইনটেনেন্সের জন্য কত লোক থাকে আর সেইখানে তার সহ-খেলোয়াড়রা দরজা ধরে টানাটানি করছে পড়ে যথারীতি তাজ্জব হোলাম।
যাইহোক আবোলতাবোল না বকে এখন আমি কিভাবে স্মিথের সাথে এক কাতারে নাম লিখালাম সেই কাহিনী লিখি। দুই তিনদিন আগে সকাল এগারোটার দিকে আমি হুড়মুড় করে আমাদের হোটেল রুম থেকে বের হয়ে নীচে লাউঞ্জে গেলাম। এই হোটেলে আমরা সাতদিন কোয়ারেন্টাইন এ ছিলাম। হাতে রুমের দরজা লিফট সব কিছু খোলার কী-কার্ড নিয়ে নীচে নেমে দুই মিনিটের কাজ সেরে ওঠার পর যথারীতি দরজা অটমেটিক বন্ধ হয়ে গেল। এরপর আমাদের ২৬ তালার ফ্লোরের জন্য যখন কার্ড প্রেস করছি তখন লাল বাতি আর সবুজ হয়না, ফ্লোরের বাটন একদম নট নড়ন চড়ন, মরে আছে মনে হয়। দরজা খোলার বাটনে চাপ দেই, নাহ কোথাও কিছু হচ্ছে না।
এই অবস্থায় মাথা থেকে পা পর্যন্ত যেন অবশ হয়ে আসছে, কপাল বেয়ে চিকন ঘাম গড়িয়ে পরতে শুরু করলো। আমি বোকার মত দাঁড়িয়ে কাপছি এমন সময় চোখে পরলো বেল বাটনে। তাড়াতাড়ি তাতে চাপ দিতেই এক মহিলা থাই এক্সেন্টে ইংরেজিতে প্রশ্ন করছে "কি ব্যাপার"? আমি কান্না কাঁন্না গলায় কোনভাবে বললাম যে "আমার কার্ড কাজ করছে না"। এরপর মহিলা দ্রুত কি বলছে আমি তো বুঝিনা, আমি হেল্প হেল্প বলে কাঁদছি এমন সময় আচমকা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে লিফট চলতে শুরু করলো এবং চোখের পলকে ৩১ তালায় গিয়ে উঠে ঠাস করে দরজা খুলে গেল। ভুতুড়ে কান্ড যাকে বলে আর কি! ,
এদিকে দরজা খুলতেই দেখি সামনেই দাড়িয়ে এক তরুনী পরনে তার অপারেশন থিয়েটারের সবুজ পোশাক। আমি এক লাফে লিফট থেকে বেরিয়ে তার পাশ দিয়ে মাগো বাবাগো বলে সোজা দৌড়।মেয়েটাও আমার সাথে সাথে এসে আমাকে দৌড়ে ধরে ফেল্লো।
জিজ্ঞেস করলো কি ঘটনা? আমি তোতলাতে তোতলাতে শুধু এটুকুই বললাম যে আমি লিফটের ভেতরে আটকে গিয়েছিলাম,মানে আমার কার্ড কাজ করছে না। এর মধ্যে লিফটের মধ্য থেকে ওই মহিলার উত্তেজিত গলা তখনো ভেসে আসছে। ডাক্তার মেয়েটা আমাকে ছেড়ে তাড়াতাড়ি লিফটের ভেতরে ঢুকে কি জানি বল্লো থাই ভাষায় তারপর আমাকে ডেকে নিয়ে আমার ফ্লোরে নামিয়ে দিল। লিফট থেকে বের হয়েই আমি চোখ বন্ধ করে আমার রুমের দিকে ভো দৌড়।
এখন অজি প্লেয়ার স্মিথ ৫০ মিনিট আটকে থেকে আবার নাকি ঘটনাটি ভিডিও করেছে আর আমি নাকের পানি চোখের পানি এক করে হেল্প হেল্প করেই গেলাম ভিডিও করতে পারলাম্না।
আসলে আমাদের যে দুটো কীকার্ড দিয়েছিল এটা সেই কার্ড ছিলনা এটা ছিল রুম সার্ভিসের মেয়েটার কার্ড যা দিয়ে ওরা দরজা খুলে ঘর পরিস্কার করে। আমরা ফিরে আসার পর সে কার্ড রেখেই চলে গিয়েছিল আর আমি তারাহুড়োয় সেই মেয়াদহীন কার্ডটা
সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।
স্মিথ এর ছবিটি নেট থেকে আর আমারটা
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:৫৪