somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতাঃ বেলা শেষের কথকতা

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিবাকর যতই আলো ছড়িয়ে রাখুক সারাটা আকাশব্যাপী,
বেলাশেষে রৌদ্রকরোজ্জ্বল সেই আকাশেও আঁধার নামে,
ধীরে ধীরে, প্রকাশ্যে। বৃক্ষের শাখায় শাখায় ঝুলে থাকে
যেসব পাকা ফল- আনত, ভূমীমুখি, দোদুল্যমান,
মৃদুমন্দ বাতাসেও ওরা টুপ করে ঝরে পড়ে বেখেয়ালে।

প্রকৃতির রীতিই জীবনের নীতি।
পুরনোরা ভূমিতলে যাবে, নতুনরা ভূমিষ্ঠ হবে।
শব্দরা চলে যাবে, শূন্যতা ঘিরে রবে।
হে ষাটোর্ধ্ব বালক, তবে স্বেচ্ছায় প্রস্তুত হও-
একান্ত, বিবিক্ত, নিঃসঙ্গ, নির্জন জীবনের জন্য!

যতই তুমি উজ্জ্বল তারকা হওনা কেন, তোমার দ্যূতি
এখন দ্রুত ম্লান হয়ে যাবে। থেমে যাবে জীবনের কলরব,
নিভৃতে পড়ে রবে তুমি লোকচক্ষুর অগোচরে। এখন কিভাবে
নির্জন কোণে একেলা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তা শিখে নাও!
কোন ঈর্ষা নয়, অভিযোগ নয়- সবকিছু মেনে নিতে শেখো।

তোমার বিজন ঘরে হঠাৎ আসতে পারে কোন নোটিশ ছাড়াই
প্রাণঘাতী জটিল ব্যাধি। ভারসাম্যহীন, পতিত দেহের ভাঙা হাড়
তোমাকে কষ্ট দিতে পারে আমৃত্যু। অপত্য স্নেহের দাবী নিয়ে
হৃদনালীতে বসতি গড়তে পারে বর্জ্য স্নেহ, কর্কটের অদৃশ্য কীট
কিলবিল করে ছড়িয়ে যেতে পারে যকৃতে, বৃক্কে, মূত্রগ্রন্থিতে।

হে ষাটোর্ধ্ব বালক, তুমি প্রস্তুত হও-
মস্তিষ্ক ক্ষয়ে যাবে, স্মৃতিভম হবে। আর কখনো ফিরে পাবে না
তুমি ব্যাধিহীন জীবন। যতটুকু পার, অনুশীলন কর, ব্যত্যয়হীন।
যা করে আনন্দ পাও, সেটাই কর। আবার তুমি শিশুকালে ফিরে যাবে,
তবে এবারে মাতৃহীন। নার্সনির্ভর শয্যামুখি জীবনের জন্য প্রস্তুত হও!

এতকাল গড়ে তোলা তোমার সম্পদের মৌবনে আকৃষ্ট হবে মৌলোভী
নানা ভ্রমর। ফন্দি ফিকিরে, মিষ্টি কথায় তোমাকে ভোলাবে অনুক্ষণ।
যতক্ষণ জ্ঞান থাকে, তাদেরে পরিহার করো। জীবনের শেষ পথটুকু চলা
বড় কষ্টের হয়, অনুজ্জ্বল, অস্পষ্ট দৃষ্টিশক্তি নিয়ে। কোন অভিযোগ নয়,
কোন গর্ব নয়, বিনীত হও; প্রকৃতির রীতিই জীবনের নীতি- মেনে নাও!


মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০


পাদটীকাঃ চীনা ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং চিন্তাবিদ Zhou Daxin তার “The Sky Gets Dark, Slowly” নিবন্ধে লিখেছেন, মধ্য বয়সের পর থেকে কিভাবে মানুষ ধীরে ধীরে বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হতে থাকে। ষাটোর্ধ্ব মানুষ কিভাবে বয়স বাড়ার এ প্রক্রিয়াকে সাবলীল মাধুর্যে, শোভন ও মার্জিত আচরণে আত্মস্থ করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। বয়সে তিনি আমার চেয়ে দুই বছরের বড়, তাই বোধহয় প্রায় সমবয়সী হবার কারণে তার কথাগুলোকে আমি অতি সহজেই উপলব্ধি করতে পেরেছি। তার এ নিবন্ধটি পড়ার পর, আমি আমার ভাবনাগুলোকে নিজের মত করে সাজিয়ে নিলাম, মূলতঃ তারই কথাগুলো স্মরণ করে। কবিতাটি তারই প্রতিফলন।

Zhou Daxin নিজের আসল নাম ছাড়াও ‘Pudu’ ছদ্মনামে লিখে থাকেন। চীনের Henan প্রদেশের Dengzhou এ তিনি একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭০ সালে উচ্চবিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে তিনি চীনা গণমুক্তি ফৌযে যোগদান করেছিলেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছিলেন। খাদ্যাভাব তাকে পীড়িত করেছিল, তাই মূলতঃ বিনামূল্যে খাদ্য লাভের আশায়ই তিনি চীনা গণমুক্তি ফৌযে যোগদান করেছিলেন, একথা তার অনেক লেখায় বলেছেন। সেখানে কিছুকাল কর্মরত থাকার পর ১৯৭৯ সাল থেকে তিনি তার লেখা প্রকাশ করতে শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি Xi’an Institute of Politics থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন এবং Lu Xun Literary Academy তে যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি China Writers’ Association এ যোগদান করেন এবং ১৯৯৯ সালে চীনের Henan Literature Academy এর প্রেসিডেন্ট এর পদ অলংকৃত করেন। ২০০৮ সালে তিনি The Scenery of the Lake and the Mountain উপন্যাসের জন্য প্রখ্যাত Mao Dun সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:১৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×