এর আগের পর্বটি পড়তে পারবেন এখানেঃ মেলবোর্নের দিনলিপি-৮ ... ‘চ্যাপমান’স পয়েন্ট’ এবং ‘আরথার্স সীট’ এ কিছুক্ষণ
সমুদ্র ও পাহাড়, দুটোই আমাকে আকর্ষণ করে, একেক সময়ে একেকটা। দুটোরই নিজস্ব ভাষা আছে। একটার সবাক- যখন উত্তাল তখন তার স্বরমাত্রা উচ্চাঙ্গ, যখন মৌনব্রতী, তখন অনুগত রমণীর মত নিম্নকন্ঠ। অপরটার ভাষা নির্বাক, সেটা মুনী-ঋষি-ভাবুকের আশ্রয়স্থল, কখনো তপস্যাস্থল। আজকের এ লেখাটা শুধু সাগর নিয়ে, মেলবোর্নের একটি শান্ত, স্নিগ্ধ সাগরতীরে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর ছবি নিয়ে, গোধূলি লগনে সাগর যখন মৌনব্রতী ছিল। সে সাগর সৈকতটির নাম ব্রাইটন বীচ।
১২ জানুয়ারী ২০২০। অন্যান্য দিনের মত সন্ধ্যের ঠিক প্রাক্কালে নয়, বিকেল সাতটা চল্লিশে, অর্থাৎ সূর্যাস্তের প্রায় এক ঘন্টা আগে আমরা ব্রাইটন এলাকার একটা বীচের পার্কিং লটে পৌঁছে দেখি সেখানে রাস্তার উপর অনেকগুলো সাদা, পেট মোটা পাখি (সী-গাল) বিশ্রাম নিচ্ছে, কেউ কেউ আবার সুখনিদ্রারত। মনে হলো, কিছুক্ষণ আগে জোয়ারে ভেসে আসা অনেকগুলো ছোট ছোট মাছ ও জলজ প্রাণী (plankton) এরা উদরস্থ করে কেবল রাস্তায় এসে বসেছে। এদেশে গাড়ী চালকেরা কখনো এদেরকে ডিসটার্ব করে না, গাড়ী থামিয়ে অপেক্ষা করে কখন এরা সরে যাবে। আমার ছেলেও তাই করছিল। গাড়ীর শব্দ পেয়ে ওদের কেউ কেউ সরে গিয়ে জায়গা করে দিলে একটি সুবিধেমত জায়গায় সে গাড়ীটা পার্ক করলো। একটি ঘুমন্ত পাখির নিদ্রার ব্যাঘাত না ঘটানোর জন্য তখন তার কাছাকাছি দুটি গাড়ী অপেক্ষা করছিল, কখন তার ঘুম ভাঙবে!
পড়ন্ত বিকেলটাতে আকাশের রঙ পানিতে প্রতিফলিত হওয়াতে সাগরের পানির রঙ নীলচে সবুজাভ দেখাচ্ছিল। আলো যত কমতে থাকে, পানির রঙ তত ছাই রঙের মত হতে থাকে। ছাই রঙের উপর রূপালী আলোর ঝিকিমিকি ছটা দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। গোধূলির প্রাক্কালে সাগরজলের বিপরীতে বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা অথবা চলমান জনমানুষের ছায়াচিত্র (silhouette) দেখতে অপূর্ব লাগছিল। পশ্চিমের রোদ এসে এমনিতেই নানান রঙে রঞ্জিত উজ্জ্বল Bathing Box গুলোকে আরো বেশী বৈচিত্রময় করে তুলেছিল। তির তির করে শান্ত ঢেউগুলো যখন তীরে এসে ভিড়ছিল, এবং মাথার উপরে গাঙচিলগুলো নানা রকমের শব্দ করতে করতে উড়ছিল, তখন পরিবেশটাকে খুবই প্রশান্তময় মনে হচ্ছিল। এরকম পরিবেশে যে কেউ কিছুটা সময় নিয়ে ডুবন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে ভাবনার সাগরে ডুবে যেতে বাধ্য। আমরা এসব দেখতে দেখতেই একসময় সূর্যটা টুপ করে ডুবে যায়। একেবারে অন্ধকার নামার পর আমরা আরো কিছুক্ষণ একটা নিরিবিলি জায়গায় বসে থেকে আঁধারের নীরবতা উপভোগ করলাম। তারপর নিকটস্থ একটা ওয়াশরুমে গিয়ে ভাল করে হাত পা ধুয়ে গাড়ীতে উঠলাম। পেছনে রেখে এলাম একটি সুন্দর, রূপালী সৈকতসন্ধ্যার স্মৃতি।
ঢাকা
২২ মে ২০২০
শব্দসংখ্যাঃ ৩৫৫
জোয়ারে ভেসে আসা ছোট ছোট মাছ খেয়ে তৃপ্ত, কারপার্কে বিশ্রামরত পাখিকূল। কেউ কেউ সুখনিদ্রারত।
একটি বিশ্রামরত পাখির সরে যাবার অপেক্ষায় অপেক্ষমান একটি গাড়ী।
পড়ন্ত বিকেলে রূপোলী আলোর ছটা......
সূর্যাস্তের প্রস্তুতি শুরু......
ব্রাইটন বীচের 'বেদিং বক্সেস'। একজনের জলে নামার প্রস্তুতি...
প্রতিফলন....
পাখির উল্লাস, নিবিষ্ট দর্শক...
অর্ধ ডুবন্ত সূর্যের সোনালী বর্ণচ্ছটা....
এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়......
আঁধার নেমে এলো....
সারমেয়সহ দর্শনার্থী....
নিঝুম সন্ধ্যায় পান্হ পাখিরা....
বেলাশেষের ভোজ...
The last supper....
তীর ধরে হেঁটে যাওয়া এক যুগল দম্পতি....
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৩৩