somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কার্ত্তিকের আকাশে দেখি আষাঢ়ের মেঘ… অবেলায় ঝরে জল

২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ নিয়ে ক্রমাগত তিন দিন ধরে আকাশটা ঝরছে। ভালই লাগছে। বাংলার প্রতিটা ঋতুর আছে একেকটা আলাদা আলাদা সৌন্দর্য। কিন্তু অধুনা সেই ঋতু বৈচিত্রেও ঘটছে নানা পরিবর্তন। তবে আমি সেটা নিয়ে চিন্তিত নই। প্রকৃতি তার পথ খুঁজে নেবে, সময় সমন্বয় করে নতুন নতুন সাজে সাজবে। এখন চলছে কার্ত্তিক মাস। আমাদের বাল্যকালে হেমন্ত ঋতুর প্রায় অর্ধেকটা, অর্থাৎ কার্ত্তিকের পুরোটা মাস জুড়েই কৃষকের কপালে দুঃখ লেগে থাকতো। এ সময় তাদের ঘরে খাবার থাকতো না, হাতে কাজ থাকতো না। কার্ত্তিক ছিল কৃষকের দুশ্চিন্তার মাস, আমাদের স্থানীয় ভাষায় বলা হতো ‘মঙ্গা’র মাস। এখন দিন অনেক বদলে গেছে, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা এবং গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ পৌঁছে যাওয়ায় কৃষি ছাড়াও দরিদ্র পরিবারগুলো ছোটখাট কাজ কারবার করে অন্ন সংস্থান করতে পারছে। এখন আর কার্ত্তিক নিয়ে কৃষকের দুর্ভাবনা তেমন নেই। কার্ত্তিকের পর থেকেই ধীরে ধীরে শুরু হয়ে যায় নবান্নের পালা, শীতের আগমন এবং সেই সাথে পিঠেপুলির উৎসব।

ছোটবেলায় বর্ষা ঋতুকে আমি ভাল পেতাম না, এখন ভাল লাগে। তখন শীতকাল খুব ভাল লাগতো। এখনো লাগে, তবে ততটা নয়। ঝরা পাতার কান্না তখন শুনতে পেতাম না, এখন পাই। ছোটবেলায় বিকেল খুব ভাল লাগতো, কারণ সেটা ছিল খেলাধুলো করার অনুমতিপ্রাপ্ত সময়। সন্ধ্যে মোটেই ভাল লাগতো না, কারণ তখন পড়তে বসতে হতো। এখন আর বিকেলের কোন আকর্ষণ নেই, তাই অপেক্ষায় থাকি না। বিকেল বেলাটা এখন নিতান্তই ঘটনাবিরল (আন-ইভেন্টফুল)। তবে এখন সন্ধ্যে ভাল লাগে, কারণ সন্ধ্যের সময় পাখিদের, বানরের ঘরে ফেরা দেখতে পাই। হেমন্তের আকাশটাও প্রায়ই নানা বর্ণিল সাজে সেজে আকর্ষণীয় রূপ ধারণ করে, মেঘে মেঘে মায়াবী আবির ছড়িয়ে যায়। দখিনের, পশ্চিমের জানালা দিয়ে আমি সেসব দৃশ্য দেখি। এই সান্ধ্য আবিরের মায়াবী ছটার মাঝেই ক্লান্ত দিবাকর এক সময় শেষ বিদায় জানিয়ে অস্তাচলে যায়। সেই সাথে আমার মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় পড়া বেগম সুফিয়া কামাল এর ‘সাঁঝের মায়া’ কবিতার কিছু কথাঃ

“ধীরে ধীরে ধীরে
প্রদীপ্ত ভাস্কর এসে বেলাশেষে দিবসের তীরে
ডুবিল যে শান্ত মহিমায়,
তাহারি সে অস্তরাগে বসন্তের সন্ধ্যাকাশ ছায়”।

এবং একই কবি’র “পল্লী স্মৃতি” কবিতার শেষে আঁকা কিছু স্বপ্নের কথা জীবন সায়াহ্নে এসে মিলিয়ে দেখতে ইচ্ছে হয়ঃ

“আগামী দিনের আশা-ভরসার কত না মধুর ছবি
ফুঁটিয়া উঠেছে আঁখির পাতায় ডুবেছে যখন রবি”।

সায়াহ্নের আযান ধ্বনি প্রথমে কানে বাজে, পরে বাজে বুকে। আযানের পর মাগরিবের নামায পড়েই এক কাপ চা হাতে লেখার টেবিলে ফিরে আসি। সকাল সাঁঝে ডাইনিং টেবিলের একটা কোণাতেই আমি ল্যাপটপ খুলে বসি, এর কারণ ডাইনিং টেবিল থেকে দৃষ্টি মেলে ধরলে সেটা অলিন্দ পেরিয়ে আকাশ অবধি পৌঁছে যায়, বড় বড় গাছ গাছালিও দেখা যায়, সেই সাথে পাখিও। করোনাকালের আগে সন্ধ্যার পর পরই নানা সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে যেতে হতো। জন্মদিন, বিয়ে, কুটুম বাড়ী, ঘরোয়া আড্ডা, সঙ্গীত সন্ধ্যা, ইত্যাদি ইত্যাদিতে। এখন সেসব বন্ধ, তাই সন্ধ্যের পরেই আমার মূল লেখালেখির কাজ শুরু হয়, যেটা আমি সানন্দে উপভোগ করি।

এখন থেকে দিন ছোট আর রাত বড় হতে থাকবে। নিস্তব্ধ প্রহরের পরিসর বাড়বে, হয়তো লেখার মানও সেই সাথে। আজ দুপুরে লাঞ্চের পর টেবিলে বসেই দেখি একটা বৃষ্টি ভেজা শালিক কাপড় শুকানোর র‍্যাকে বসে আছে তপস্যারত। বসে বসেই শুনতে পাচ্ছিলাম তার আরো কিছু সাথী বেশ হৈচৈ করছে, বুঝতে পারলাম ওরা পাশের পাত্রে রাখা আহার মনের সুখে খাচ্ছে। তখনো ঝির ঝির করে বৃষ্টি ঝরছিল। আমাকেও ভাতঘুমে পেয়ে বসেছিল। বিকেলে উঠে দেখি তখনো আকাশ মেঘলা, বৃষ্টি ঝরছে। আকাশে ঘন মেঘের কারণে সন্ধ্যা নামার আগেই আঁধার নেমেছিল। সেই প্রায়ান্ধকার সন্ধ্যার কিছু ছবি এখানে শেয়ার করেই আজকের মত এই বেলা অবেলার কথকতা শেষ করছি।

ফটোক্রেডিটঃ আমার গিন্নী।

ঢাকা
২৪ অক্টোবর ২০২০
শব্দসংখ্যাঃ ৫৩৭



লাঞ্চের পর টেবিলে বসেই দেখি একটা বৃষ্টি ভেজা শালিক কাপড় শুকানোর র্যাকে বসে আছে তপস্যারত।










আঁধার ঘনিয়ে এলো....
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৩
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×