আলতাফ সাহেব তার লেখার টেবিল ছেড়ে একটা দরকারি কাগজ খোঁজার জন্য বেডরুমে প্রবেশ করলেন। তার স্ত্রী তখন প্রাতঃরাশ সেরে কেবল বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে সেলফোনটা হাতে নিয়ে কিছু একটা দেখছিলেন। কাগজটা হাতে পেয়ে আলতাফ সাহেব বের হয়ে আসার আগে দক্ষিণের জানালার পর্দাগুলো টেনে দিচ্ছিলেন, যেন সকালের রোদটা কিছুক্ষণ কক্ষে প্রবেশ করতে পারে। তার স্ত্রীও বিছানা ছেড়ে এটা ওটা গোছাতে শুরু করলেন। দু’জনের মধ্যে একটা কথোপকথন তিনিই শুরু করলেনঃ
-এ্যাই শুনছো!
-হুঁ।
-আজকাল একটা নতুন ফ্যাশন খুব চালু হয়েছে, তা জানো?
-কত ফ্যাশনই তো চালু হচ্ছে! কোনটার কথা বলছো?
-জানো, আজকালকার স্ত্রীরা তাদের স্বামীদেরকে ‘বাবু’ বলে ডাকে (মুচকি হাসি)।
সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আলতাফ সাহেবও এসব হাল আমলের ফ্যাশনের সাথে পরিচিত ছিলেন, তাই তিনি আরেকটু আগ বাড়িয়ে বললেন,
-হ্যাঁ, ওরা আজকাল স্বামীকে সম্বোধন করে বলে, “বাবু সোনা, তুমি খাইসো”?
-ওদের নাম কিন্তু মোটেই বাবু নয়!
-তা তো জানিই।
-তা তো জানোই। আর আমার ঘরে একটা অরিজিনাল ‘বাবুসোনা’ থাকতেও, সেটাকে গত একচল্লিশ বছরে আমি একবারও ‘বাবুসোনা’ ডাকতে পারলাম না!!! উভয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন।
আলতাফ সাহেব হাসতে হাসতেই শয্যাকক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে লেখার টেবিলে বসলেন, কিন্তু তিনি অনেকক্ষণ ধরে তার স্ত্রীর এই হিউমারাস পর্যবেক্ষণটার কথা ভেবে ক্ষণে ক্ষণে মনে মনে হেসে উঠছিলেন। উল্লেখ্য, আলতাফ সাহেবের জন্মের পর তার পিতা মাতা তার ডাকনাম রেখেছিলেন ‘মুকুল’। কিন্তু আদর করে সবাই তাকে ‘বাবু’ ডাকতে শুরু করলো বিধায় তার আসল নামটা কালক্রমে হারিয়ে গেল এবং তিনি ‘বাবু’তেই পরিণত হয়ে গেলেন। ব্যতিক্রম ছিল শুধু তার দাদীমা, যিনি আজীবন তাকে মুকুল নামেই ডেকে গেছেন।
হাসি থামার পর আলতাফ সাহেব তার স্মৃতির ভিডিও ক্লিপটিকে পেছনে টেনে নিয়ে গেলেন। কত স্মৃতি! সেসব মনে করে মনটা কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল। তার স্বগতোক্তিঃ
“ওরা তো ‘বাবু সোনা, তুমি খাইসো’ বলেই খালাস। তোমার সেটা বলার প্রয়োজন হয়নি কখনো, কারণ তুমি সবসময় নিশ্চিত করেছো যে তোমার ‘অরিজিনাল বাবুসোনা’টা সময়মত যেন কিছু হলেও, খেয়েছে। তাকে খালিমুখে একটি দিনও ঘর থেকে বের হতে দাওনি। এমন কি সন্তান জন্মদানের পরও মাত্র কয়েকদিনের বিরতির পর তুমি রসুইঘরে ঢুকেছো। সকালে অফিস ধরতে দেরি হবার সম্ভাবনা দেখা দিলে তুমি গরম রুটির মাঝে ঘি এর প্রলেপ মাখিয়ে তাতে কিছু চিনি ছিটিয়ে রোল করে মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছো। কখনো কখনো বাইরে যাবার সময় লাঞ্চের সময় হয়ে গেলে তুমি ভাত সব্জী ডাল একসাথে মেখে নলা করে মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছো, যত্নের সাথে মাছের কাঁটা ছাড়িয়ে প্লেটের কোণায় সাজিয়ে রেখেছো। একটু একটু করে মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছো। একই প্রক্রিয়ায় আমার সন্তানদেরকেও খাইয়েছো, এখনো খাওয়াও, এবং তাদের সন্তানদেরকেও’।
এসব ভাবতে ভাবতে আলতাফ সাহেবের মন ও চোখ, দুটোই আর্দ্র হয়ে উঠলো!
নারী ও প্রকৃতি, একে অপরের পরিপূরক। নারী ভাল থাকলে পরিবার ভাল থাকবে। নারী মর্যাদা পেলে প্রকৃতি প্রফুল্ল থাকবে, মানব সভ্যতা বিকাশমান থাকবে। নারীর ভালবাসায় সিক্ত হোক ধরণী, প্রকৃতি ও প্রতিটি পরিবার!!! ভালবাসার কুসুম বিকশিত হোক ঘরে ঘরে!
ঢাকা
২৩ ফাল্গুন ১৪২৭
০৮ মার্চ ২০২১
(আন্তর্জাতিক নারী দিবস)
বিঃ দ্রঃ- পোস্ট প্রকাশিত হবার পরে শিরোনামটা সম্পাদনা করা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:২৯