somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আই লাভ দাদা বাট দাদা লাভস ল্যাপটপ

০৮ ই আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



https://ibb.co/348JC7C

আমার প্রায় সাত বছরের নাতনি গত ঈদের দিন সন্ধ্যায় ওর নানুবাড়ি থেকে আমাদের বাসায় এসেছে। এসে সেদিন সে আমাকে বাসায় পায়নি, কারণ আমি সেদিন রংপুরে ছিলাম। আমি ফিরেছি ঈদের পরদিন গভীর রাতে, সুতরাং পরদিনও সে আমাকে দেখে নাই। তার পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সে আমাকে দেখে অবাক হয়। আমাকে জড়িয়ে ধরতে চায়, কিন্তু আমি ওকে বলি, আমাকে ধরা যাবে না, কারণ আমার শরীরে করোনা ভাইরাস থাকতে পারে। ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস সম্বন্ধে সে মোটামুটি ভালই ধারণা পেয়েছে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি মাস্ক পড়েছিলাম কিনা। আমি হ্যাঁ বলায় সে জিজ্ঞেস করলো বাসায় এসে আমি সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছি কিনা। আমি বললাম, শুধু সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছি তাই নয়, বাসায় এসে আমি রাতেই সাবান দিয়ে গোসল করেছি। সে বললো, তা’হলে তো তোমাকে টাচ করতে অসুবিধে নেই। আমি বললাম, ‘না, আমি অনেক দূর থেকে জার্নি করে এসেছি, অনেকক্ষণ অনেক লোকের সাথে ছিলাম, তাই আমার কাছে তোমার এখন আসা যাবে না’। সে বললো, ‘কতদিন’? আমি একটু কম করে বললাম, ‘মিনিমাম দশ দিন। এই দশ দিন তোমাকে আমার কাছ থেকে ছয় ফুট দূরে থাকতে হবে’। সে বললো, ‘ছয়ফুট কতদূর’? আমি বললাম, ‘মিনিমাম দুই চেয়ার ডিসট্যান্স’। সে বললো ‘আচ্ছা’।

ওরা এবার অনেকদিন পরে আমাদের বাসায় থাকার জন্য এলো। এর আগে কয়েকদিন ছিল রোযার ঈদের সময়। আগে নিয়ম করে প্রতিদিন ও ঘুমোতে যাবার আগে আমার কাছে এসে আদর নিয়ে যেত। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কিছু দোয়া পড়ে চুমু দিতাম আর বলতাম, ‘এবারে তুমি ঘুমাতে যাও’। সে বলতো, ‘তুমি ঘুমাবে কখন’? আমি বলতাম, ‘বারটায়’। অধুনা সে ঘড়ির সময় চিনতে শিখেছে। বারটার মধ্যে আমি কোনদিন ল্যাপটপ বন্ধ না করলে সে তার দরজা ফাঁক করে বলতো, ‘বারটা বেজে গেছে, দাদা তুমি এখনো কী করছো’? আমি বলতাম, ‘ল্যাপটপ শাটডাউন দিয়েছি, একটু পরেই বন্ধ হবে, হলেই ঊঠে যাবো’। এ কয়দিন সে ঘুমোতে যাবার আগে তার আন্দাজ মত ছয়ফুট দূর থেকে বাই বাই দিয়ে ঘুমোতে যেত। কিন্তু সে হিসেব রেখেছে দশদিনের। গতরাতে ঘুমোতে যাবার আগে সে আমার কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে বলে, ‘দাদা, হাগ মি’। আমি ওকে আগের মত জড়িয়ে ধরে, জোরে জোরে দোয়া করে (মনে মনে দোয়া করলে সে সন্তুষ্ট হয় না, কী দোয়া করছি তা শুনতে চায়) ওকে গুডনাইট কিস দিলাম। ও তখন আমাকে দুই ভাঁজ করা একটা কাগজ আমার হাতে দিয়ে বললো, ‘এটা দেখ’। ভাঁজ করা কাগজটার উপর সে নিজের নাম লিখেছে, ‘আনায়া’। আমি বললাম, ‘এটা কী’? সে বললো, ‘এটা তুমি’। আমি তাড়াতাড়ি কাগজটা খুলে দেখি সে আমাকে এঁকেছে, যেভাবে পেরেছে। কাগজটার উপরের বাম পাশে একটি ‘লাভ চিহ্ন’। তার পাশে বড় করে লেখা ‘আই লাভ দাদা’। তার নীচে সে এঁকেছে একটা খোলা ল্যাপটপ, কী বোর্ড আর মাউস, যা সে সবসময় আমার টেবিলে দেখে, আর মাঝে মাঝেই এসে জিজ্ঞেস করে, ‘দাদা, তুমি কী লেখো’?। মনিটর আর কী বোর্ড এর নীচে সে তার দাদার কিম্ভূতকিমাকার একটা দাঁড়ানো ছবি এঁকেছে। কাগজের নীচের ডান পাশে লেখা ‘বাট দাদা লাভস ল্যাপটপ’, একটা তিরচিহ্ন দিয়ে দিয়ে লেখাটা দাদাকে দেখাচ্ছে।

হাউ সুঈট! এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে, সে বুঝতে পেরেছে দাদা তাকে সময় দিচ্ছে না। তাই যেভাবে পেরেছে, সেটা এঁকে তাকে বুঝিয়েছে। আমি তাকে আবার আদর করে বললাম, ‘তোমার ড্রয়িং দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমি তো তোমাকে ডাকি আমার সাথে বসে ইউটিউবে গল্প শোনার জন্য, গান শোনার জন্য, তুমি তো এখন আসো না, আগে আসতে’। সে বললো, ‘তোমার ল্যাপটপ ছোট, আমি চাচুর বড় টিভিতে কার্টুন দেখি’। আজও সারাদিন আমার ওর ছবিটার কথা মনে হয়েছে। আমি মনে মনে তার বুদ্ধির অনেক তারিফ করেছি। আজ একটু কাজে ঘরের বাইরে যেতে হয়েছিল। ফিরে এসে গোসল সেরে দেখি ও টিভি ছেড়ে দিয়ে খাচ্ছে। ওকে বললাম, ‘তোমার কালকের আঁকা আমার ছবিটা দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। থ্যাঙ্ক ইউ ফর ড্রয়িং মি। আজ খাওয়া শেষে তুমি আমার কাছে আসবে। আমরা সেলফোন থেকে ইউটিউবে স্টোরি শুনবো। সে শুধু একটু হাসলো, তারপর আবার টিভি দেখায় মনোনিবেশ করলো।

ঢাকা
০১ অগাস্ট ২০২১
শব্দ সংখ্যাঃ ৬০৫


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০২৩ সকাল ১১:১৬
১৫টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×