somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট ভুল, বড় ভুল

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কিছুদিন ধরে, তা মাস ছয়েক তো হবেই, ফ্রোজেন শোল্ডারের ব্যথায় ভুগছি। বাঁ হাতটা উঁচুতে তুলতে, এপাশ-ওপাশ নাড়াচাড়া করতে বেশ অসুবিধে হয়, বেয়াকায়দায় নাড়া পড়লে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠতে হয়। রাতে বাঁ পাশ ফিরে শুতে পারি না। আমার ঘুমানোর স্বাভাবিক যে পজিশন, সে পজিশনেও ঘুমাতে পারি না, তবে তাতেও ঘুমকাতুরে আমার ঘুমের তেমন ব্যাঘাত অবশ্য ঘটেনা। হাত নাড়াচাড়া না করলে কোন সমস্যা হয় না। নাড়াতে গেলেই ঘটে যত বিপত্তি, ওজন বহন করতে গেলেও তাই। নাতি-নাতনিরা কোলে উঠতে চাইলে বাঁ কোলে নিতে পারি না। সবকিছু সয়ে নেয়াতে অভ্যস্ত আমি এভাবেই চলছিলাম গত ছ’টি মাস ধরে, ডাক্তারের কাছে যাব যাব করেও আর যাওয়া হয়নি। কিন্তু তিন দিন আগের রাতে আমার গিন্নী আচমকা তার পায়ে আঘাত পান। আঘাত পাবার পরেও তিনি কিছুক্ষণ স্বাভাবিক হাঁটা-চলা এবং স্বাভাবিক কাজ-কর্ম করে যাচ্ছিলেন, তাই প্রথমে ভেবেছিলাম, আঘাত হয়তো সামান্য ছিল। কিন্তু খানিক পরেই দেখা গেল তিনি পা ফেলতে পারছেন না। শুয়ে থাকলেও পা ব্যথা করছিল এবং ক্রমেই তা তীব্রতর হচ্ছিল। আমি শঙ্কায় পড়ে গেলাম। ভাবতে শুরু করলাম, হয়তো কোন সূক্ষ্ম ফ্র্যাকচার হয়ে থাকতে পারে। আর তা হওয়া মানেই তো পায়ে প্লাস্টার বাঁধা, আর ভাগ্য ভালো হলে যদি ফ্র্যাকচার নাও হয়, অন্ততঃ শক্ত ক্রেপ ব্যান্ডেজ তো বেঁধে রাখতেই হবে। তার মানে বেশ কিছুদিনের জন্য বেড-রেস্টে থাকতে হবে, কোন হাঁটাহাটি বা পায়ে ভর করে অন্য কোন কাজ করা চলবে না। আর এখন তো বেশ বুঝি, ‘হাঁটাহাটি নয়’ মানে রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া, কোলেস্টরেলও বেড়ে যাওয়া।

দুশ্চিন্তা নিয়েই রাতটা কাটলো। পরেরদিন সকালে আমি তাকে নিয়ে রওনা দিলাম নিকটস্থ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। গাড়ি থেকে নেমেই আমি একটা হুইলচেয়ার জোগাড় করলাম। ডাক্তার তাকে দেখে একটা এক্স-রে করাতে বলেন এবং কিছু বেদনানাশক ঔষধ প্রেসক্রাইব করলেন। সেই সাথে দু’সপ্তাহ ধরে দশ মিনিট করে ইলেক্ট্রোথেরাপি নেয়ার পরামর্শ দিলেন। তার এই পরামর্শের কথাটা শুনে আমার নিজের কাঁধ ব্যথাটার কথাও স্মরণে এলো। আমি সেই সুযোগে আমার কাঁধ ব্যথার কথাটা তাকে জানালে উনি শুনেই বললেন, এটা ‘ফ্রোজেন শোল্ডার’। আমাকে দু’হাত একসাথে উঁচু করতে বললেন। ডান হাতের তুলনায় বাঁ হাতের ধীর গতিতে উঠা লক্ষ্য করে উনি আমাকেও ইলেক্ট্রোথেরাপি নেয়ার একই পরামর্শ দিলেন। উনি জানালেন, থেরাপিস্ট আমাদের উভয়কে কিছু এক্সারসাইজ শিখিয়ে দেবে, সেগুলো নিষ্ঠার সাথে প্রতিদিন অনুশীলন করে যেতে হবে।

কর্তব্যরত তরুণ মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্টকে ডাক্তারের কাগজ দেখালাম। সে আমাকে একটা প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে বসতে বললো। আমি বসার পর সে একটা সাদা তোয়ালে দিয়ে আমার ডান কাঁধটা ঢেকে দিয়ে একটা মেশিন টেনে এনে সেখানে ফিট করতে যাচ্ছিল। আমি তাকে বললাম, আমার ব্যথা তো বাঁ কাঁধে, তুমি ডান কাঁধে মেশিন বসাচ্ছো কেন? সে দ্রুত ত্রুটিস্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করলো এবং বললো, “স্যরি স্যার, আপনি প্লীজ আবার একটু দাঁড়ান”। আমি দাঁড়ালে সে চেয়ারটাতে বসার দিক পরিবর্তন করে দিয়ে পুনরায় বসতে বললো। আমি বসার পর সে একটা নির্দিষ্ট উত্তাপে মেশিন সেট করে বললো, “আমি পর্দার পাশেই থাকবো। যদি মনে করেন তাপ বেশি বা কম হচ্ছে, আমাকে ডাকবেন, আমি এসে এ্যাডজাস্ট করে দিব”। এই বলে সে কাপড়ের পর্দাটা টেনে পাশের রোগীর কাছে গেল। তাপ সঞ্চালন শুরু হবার পর বেশ আরাম পাচ্ছিলাম। কিন্তু খানিক পরেই তাপমাত্রাটাকে অসহনীয় মনে হওয়াতে তাকে ডাকলাম। সে এসে তাপমাত্রা এ্যাডজাস্ট করে দিয়ে আবার পর্দার বাইরে চলে গেল। বাইরে থেকেই সে কয়েকবার জিজ্ঞেস করলো, তাপ সঠিক (আরামদায়ক) মাত্রায় পাচ্ছি কিনা। একটা নির্দিষ্ট সময় পর মেশিনে এলার্ম বেজে উঠলে সে এসে আমার কাঁধ থেকে তোয়ালে এবং মেশিন, দুটোই সরিয়ে নিয়ে জানালো, থেরাপি শেষ হয়েছে। এখন এক্সারসাইজের জন্য অন্য একটি কক্ষে যেতে হবে।

বহুদিন আগে একবার সংবাদপত্রে পড়েছিলাম, ঢাকার বাইরের কোন একটি জেলার মেডিক্যাল কলেজে সার্জন মহোদয় কোন এক রোগীর ডান দিকের পা এর বদলে বাঁ দিকের ভালো পা টি কেটে ফেলেছিলেন। খবরটিকে তখন আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি, কারণ এত বড় একটা ভুল হওয়াটা সহজ কথা নয়। সার্জন ছাড়াও তো স্তরে স্তরে অনেকেরই রোগীকে পরীক্ষা করে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত করার কথা। আবার সম্প্রতি একটা খবরে দেখলাম, একজন রোগীর বাম কানে সমস্যা থাকলেও ইম্পালস হাসপাতালের জনৈক চিকিৎসক তার ডান কানে অপারেশন করেছেন, রোগীর স্বামীর কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে চিকিৎসকের নিবন্ধন এক বছরের জন্য স্থগিত করেছে BMDC। এ সময়টাতে তিনি নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন না। আমার ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রো-থেরাপিস্ট যে ভুলটা করতে যাচ্ছিল, সেটা ঐ দুটো ঘটনার তুলনায় কিছুই নয়। তবুও, ভুল তো ভুলই। কর্তব্যে সাবধান ও মনযোগী না হলে এরকম ছোট ছোট ভুল থেকেই অনেক সময় বড় ভুলও হয়ে যেতে পারে। তবে ছেলেটির ত্রুটিস্বীকার, দুঃখ প্রকাশ এবং সু-আচরণ দেখে আমার মনে হলো, নেহায়েৎ ভুলক্রমেই এ ভুলটা হতে যাচ্ছিল। তবুও নিজের ভুলের জন্য তাকে অনুতপ্ত মনে হওয়াতে আমিও এ ভুলটার কথা ভুলে যেতে মনস্থ করলাম।

ঢাকা
১১ ডিসেম্বর ২০২২
শব্দসংখ্যাঃ ৭০৭
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৭
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×