somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনলিপিঃ কমলালেবুর বিচি

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কমলার সেই বিচি!

আমার একমাত্র নাতিটা ওর মা সহ কয়েকদিন বেড়িয়ে গেল আমাদের বাসায়। এ কয়দিন নীরব বাসাটা বেশ সরগরম ছিল। শুনেছি তিন বছরের আরহাম নাকি দিনে ঘুমাতে চায় না। কিন্তু শিশুদেরকে ঘুম পাড়ানোর কিছু টেকনিক আমার জানা আছে। খালি কোনরকমে ভুলিয়ে ভালিয়ে একবার বিছানায় তুলতে পারলেই হলো। যতই আপত্তি জানিয়ে হাত পা ছোঁড়াছুড়ি করুক না কেন, একসময় ঠিকই নিদ্রা দেবীর কোলে ঢ়লে পড়ে। ওর বড় বোন আনায়াকেও আমি এভাবেই বহুদিন ঘুম পাড়িয়েছিলাম। অবশ্য গতকাল সে খুব দ্রুতই ঘুমিয়েছিল, কারণ ওকে দুপুর বেলায় আমাদের এলাকার শিশুপার্কে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে সে খুবই ছোটাছুটি করে বেশ ক্লান্ত হয়েছিল। একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম যে সে খুব তাড়াতাড়ি অন্যান্য শিশুদের সাথে বন্ধু্ত্ব পাতাতে পারে এবং আলাপ জুড়ে দিতে পারে। শিশুদের মধ্যে মনে হয় কমন একটা lingua franca রয়েছে, যার ফলে পৃথক মাতৃভাষার কারণে ওদের একে অপরের সাথে কমিউনিকেট করতে অসুবিধে হয় না। নিমেষেই সে উপস্থিত কয়েকজন ভিন্নভাষী শিশুর সাথে খেলা জুড়ে দেয় এবং ওদের সাথে সাথে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। ওর এই দৌড়াদৌড়িজনিত ক্লান্তির দুটো ইতিবাচক ফল আমরা পেয়েছিঃ এক, ওকে দুপুরে খাওয়াতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। দুই, খাওয়ার পর ঘুম পাড়াতেও বেশি বেগ পেতে হয়নি।

ওকে বিছানায় নিয়ে শোয়ার পর পরই ও খেলনা (একটা বাস, একটা জিপ আর একটা কার) নিয়ে সক্রিয় থাকলেও ওর দিদি ঘুমে চোখ বুঁজেছিল। সেটা লক্ষ্য করে সে দিদির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠলো, Didi, wake up! এর আগের দিনও সে একই কাজ করছিল। কিন্তু সেদিন তার দিদি কেবল ঘুমের ভান করছিল। তাই সে ওয়েক আপ বলার সাথে সাথে দিদি চোখ খুলতো, আর তা দেখে সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তো। গতকাল যেহেতু তার দিদি সত্য সত্যই ঘুমিয়ে পড়েছিল, সেহেতু তার চোখ মেলতে একটু দেরি হয় এবং তাকে তার কমাণ্ডটা কয়েকবার রিপীট করতে হয়। কষ্টের সাথে তার দিদি যখন চোখ মেলে, তখন সে আবার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায়। আমাদের উভয়কে চুপ করে থাকতে দেখে সে একসময় একদৃষ্টিতে জানালার দিকে তাকিয়ে থেকে (জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে পাখির ওড়াউড়ি দেখা যায়) আস্তে করে ঘুমিয়ে পড়ে। হাতে ধরে থাকা গাড়িগুলো একসময় হাত থেকে পড়ে যায়। আমি জানি ও ঘুম শেষে চোখ মেলেই গাড়িগুলো খুঁজবে। তাই আমি সেগুলো তুলে নিয়ে সযত্নে ওর বালিশের পাশে রেখে দেই।

সন্ধ্যার পর ওর দিদি কমলালেবুর খোসা ছাড়িয়ে কোষগুলোকে আলাদা করে একটা প্লেটে তুলে দিয়ে ওকে বললো, যাও দাদার সাথে বসে খাও। আমি জানি, কমলা ওর খুব পছন্দের একটা ফল। প্লেটটা পেয়ে সে খুশি হলো এবং প্লেট হাতে নিয়ে এ ঘরে ও ঘরে হেঁটে বেড়িয়ে খেতে থাকলো। ওর মা অফিস থেকে আসার পর মাকে দেখে কিছুক্ষণ সে মায়ের পিছে পিছে ঘুরে বেড়ালো। রাতে খেয়ে দেয়ে ওরা দুজনেই ওদের বাসায় চলে গেল। আমাদের ঘরটা আবার নীরব হয়ে গেল!

সকালে ফজর নামাযের পর হাঁটুর নীচে শক্ত কিছু একটা অনুভব করলাম। জায়নামায উল্টিয়ে দেখি, একটা কমলালেবুর বিচি! বুঝতে বাকি রইলো না, বিচিটা কোথা থেকে এসেছে। মনটা হু হু করে উঠলো। চোখের পর্দায় ভাসতে থাকলো গতকাল পার্কে ওর ছোটাছুটির দৃশ্যাবলী। ওকে সামলানোর আমার প্রাণান্ত চেষ্টা। গোসল ও খাবারের সময় পার হয়ে যাচ্ছিল বলে কিছুটা ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ঘরে ফিরিয়ে আনা। মন খারাপ করে ওর চেয়ারের পেছনে লুকিয়ে থাকা। সযত্নে রক্ষিত ওর গাড়িগুলোকে ওর কাছে হস্তান্তর করা, ওর মোজা খাঁজে দেয়া। যাবার সময় ওর স্বভাবসুলভ দুষ্টুমিতে লিফটের বাটন টেপাটিপি করা, উচ্ছ্বাসে হাত নেড়ে বাই বাই বলা, ইত্যাদি। কি যে গভীর মায়ায় আবদ্ধ করে ও চলে গেল! সব মায়া, সব দৃশ্য, সব স্মৃতি যেন ঘনিভূত হয়ে ঠাঁই নিল একটিমাত্র কমলালেবুর বিচির ভেতর! বিচিটাকে আঙুলে ধরে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম আর বাসার আনাচে কানাচে, আসবাবে শয্যায়, বাসায় রেখে যাওয়া পরিধেয় বস্ত্রে লেগে থাকা ওর স্পর্শ অনুভব করতে লাগলাম। আপাতঃ দৃষ্টিতে খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার, কিন্তু এটাই আমাকে আজ সকাল থেকে অনেকক্ষণ বাক-বিহ্বল করে রাখলো। এসব বেদনা অনির্বচনীয়। যুক্তি দিয়ে কাউকে বোঝানো যাবে না। তাই এ স্মৃতিটা আজকের দিনলিপি হিসেবেই এখানে রক্ষিত থাকুক!



ঢাকা
২৪ জানুয়ারী ২০২৩
শব্দসংখ্যাঃ ৫৯৫


খুশির হাসি


লাঞ্চের সময় পার হয়ে যাচ্ছিল বলে অনেকটা জোর করেই তাকে ঘরে ফিরিয়ে আনা হচ্ছিল। তাই মন খারাপের হাসি



সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০০
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৪৬



সময় তখন ১৯১৯ সাল।
ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃৃতসর (অমৃতসর শিখ সম্প্রদায়ের একটি পবিত্র শহর) শহরে ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেগিনাল্ড ডায়ারের (১৯২০ সালের মার্চে ডায়ারকে পদত্যাগ করতে বলা হলো। পরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিবে কিন্তু নাম প্রকাশ করবে না কেন?

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১:১০

আমেরিকা বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিবে কিন্তু নাম প্রকাশ করবে না।
কেন ভাই, লুকোচুরির কি আছে ?
ইতিপূর্বে RAB এর কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমেরিকা স্যাংশন দিয়েছে, বেনজির সহ ৭ জন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগের কবি ও কবিতা

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৯:৪৭

ব্লগে বেশি কেউ কবিতা পড়তে আসে না;
এটা কবিতা লিখিয়েরাও বেশ জানে।
উৎসুক তাদের মনটা জবাব খুঁজে পায় না,
কবিতা-পাঠক আজ নেই কেন কোনখানে।

তবু তারা মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাকার ফিস আশির্বাদ না অভিশাপ!!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ১০:২৮


অদ্ভুত উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ- কবি শামসুর রহমান মনে হয় এই লাইনে একটু ভুল করেছিলেন। মরুভুমি নাই; উট আসবে কোত্থেকে। তাঁর লেখা উচিৎ ছিল অদ্ভুত ছাগলের পিঠে চলেছে স্বদেশ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বান্দরের হাতে বন্দুকঃ কতোটা স্বস্তিদায়ক!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১২:১০



বান্দরের হাতে বন্দুক দিলে কি হয় বা হতে পারে, সেটা তো আমরা সবাই জানি। তেমনি কিছু চোর-বাটপার, আবাল, দেশপ্রেমহীন মানুষের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা গেলে কি হয়, সেটাও আমরা সবাই হাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×