somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনলিপিঃ অবশেষে উইনিপেগ পৌঁছালাম (কানাডা জার্নাল-৬)

০৫ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাম পাশে হাইওয়ে, মাঝখানে সবুজ তৃণভূমি, তার ডানপাশে স্থানীয় পাকা রাস্তা। এই সবুজ অংশটাতে বাচ্চারা কিছুক্ষণ বিচরণ করে আনন্দ লাভ করছিল, কিন্তু আমরা খুবই উৎকণ্ঠিত ছিলাম।
অন রিজাইনা-উইনিপেগ হাইওয়ে
২০ মে ২০২৩, ১৬ঃ২৯


যাত্রা শুরু'র পর থেকে আমরা সবাই বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলাম। গান শুনতে শুনতে, গল্প করতে করতে, চারিদিকের সুন্দর সব দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে ধীরে ধীরে গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছিলাম। হঠাৎ করে এমন একটা বিপদের সম্মুখীন হওয়ায় প্রথমে খানিকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লেও, দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আবশ্যিকতা আমার মনে বারবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিল। সন্ধ্যা নামার আগেই গাড়ি সচল করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে প্রথমে চেষ্টা করা হলো ফাটা চাকাটা খুলে স্পেয়ার চাকা লাগানোর। মোট ৫টা নাটের মধ্যে তিনটা খোলা গেল, কিন্তু বাকি দুটো সম্মিলিত শক্তি প্রয়োগ করেও কিছুতেই খোলা যাচ্ছিল না। উপায়ান্তর না দেখে ৯১১ কল করা হলো। যথার্থ সাড়া দেয়ার ব্যাপারে ওদের দীর্ঘসূত্রিতা আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলছিল। আমার এ সিরিজের চতুর্থ পর্বটি একটা ফেসবুক গ্রুপে পাঠ করে একজন পাঠক আমাকে জানিয়েছিলেন যে তিনিও একদিন সপরিবারে বেড়ানোর সময় একই এলাকায় একই রকম বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং ৯১১ এর সাহায্য কামনা করে হতাশ হয়েছিলেন। আমরা যাচ্ছিলাম উইনিপেগ, আর তিনি সেখান থেকে রিজাইনা ফিরছিলেন। পরে তিনি RCMP (Royal Canadian Mounted Police) কে ফোন করলে তারা খুব দ্রুত সাড়া দিয়েছিল এবং সমস্যা থেকে তাদেরকে দ্রুত দক্ষতায় উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল। এ তথ্যটি সে সময়ে আমাদের জানা না থাকাতে ও পথ মাড়ানোর কোন সুযোগ ছিল না।

এটা আমাদের জানা ছিল যে রোডসাইড অ্যাসিস্ট্যান্স ইন্সুরেন্স করা থাকলে, যত রিমোট এরিয়ায় ঘটনা ঘটুক না কেন, ওরা এসে সমস্যাটি সমাধান করে দিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের সে ইন্সুরেন্সটি করা ছিল না। তবে তার পরেও, অন দ্য স্পট ইন্সুরেন্স করে এবং প্রিমিয়াম পরিশোধ করে কী করে ওদের সাহায্য নেয়া যায়, সবুজ সে চেষ্টাটাই সেলফোনে চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সেখানেও সেই একই দীর্ঘসূত্রিতা! এক নম্বর থেকে আরেক নম্বরে রেফার করে। এমন একটা ভয়াবহ এবং একই সাথে বিব্রতকর পরিস্থি্তির সম্মুখীন হয়ে বেচারা গলদঘর্ম হচ্ছিল, তদুপরি সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি আমাদের আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছিল। আমাদের সামনে তখন কয়েকটি পাহাড় সমান সমস্যাঃ
*নতুন একটা টায়ার কেনার দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। হাতে সময় একদমই নেই। ছয়টার পর সবকিছু বন্ধ হয়ে গিয়ে জনপদ বিরান মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যায়।
*ফাটা চাকাটার বাকি নাট দুটো খুলে স্পেয়ার চাকা লাগানো। গাড়ির সাথের টুলবক্সে থাকা সাধারণ যন্ত্রপাতি দিয়ে সেটা করা সম্ভব হচ্ছিল না।
*নতুন টায়ার কেনার পর স্পেয়ার টায়ার খুলে ফেলে সেটা লাগানোর ব্যবস্থা করা।
*উচ্চ গতিসম্পন্ন যানবাহন চলাচলের হাইওয়ের পাশে ৫-৯ বয়সের তিন তিনটে বাচ্চাকে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করা থেকে বিরত রাখা। ওরা তো আর পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পারছিল না, তাই ওরা লকড গাড়ি থেকে মুক্ত হয়ে হাইওয়ের পাশে সবুজ ঘাসের উপর ছোটাছুটি করার সুযোগ লাভ করে খুবই আনন্দ পাচ্ছিল।

আমরা যে সপ্তাহান্তে রওনা হয়েছিলাম, 'ভিক্টোরিয়া ডে' উপলক্ষে তার পরের দিনটিকে সপ্তাহান্তের সাথে যুক্ত করে সরকারী ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ফলে পরপর তিন দিনের ছুটির কারণে দোকান পাটও তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দেয়ার পাঁয়তারা চলছিল। অনলাইনে টায়ারের দোকানের খোঁজখবর নেয়ার পর দোকান পাটেরও টানা তিনদিন বন্ধ থাকার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল। এমতাবস্থায়, প্রথম করণীয় সাব্যস্ত হলো সঠিক মাপের একটি টায়ার দ্রুত ক্রয়ের ব্যবস্থা করা। যেখানে এই বিপর্যয় ঘটেছিল, সেখান থেকে ৪৫ কিমি সামনে একটা টায়ারের দোকানের সন্ধান পাওয়া গেল, কিন্তু সেখানে পৌঁছাতে যে সময় লাগবে, তাতে হয়তো টায়ার কেনা যাবে, তবে একটা রিস্ক থেকে যাবে কেননা সে দোকানটা ঠিক পাঁচটায় বন্ধ হয়ে যাবে। সময় একেবারেই টানটান। পক্ষান্তরে গাড়ি ঘুরিয়ে যদি পেছনে ফেলে আসা ব্রান্ডন শহরে পুনরায় যাওয়া যায়, সেটা ৭০ কিমি দূরে হলেও তাতে হাতে কিছুটা সময় পাওয়া যাবে, কারণ সে দোকানটা বন্ধ হবে বিকেল ছয়টায়। এ ছাড়া পেছনের ব্রান্ডন শহরটি সামনের Portage la Prairie (পোর্টাজ লা প্রেরী) শহরের চেয়ে অনেক বড়, তাই সেখানে বিকল্প অপশনের সম্ভাবনাও বেশি। অতএব, আর কালবিলম্ব না করে আমার ছেলের গাড়িতে বাচ্চা তিনটিকে উঠিয়ে আমার স্ত্রীর জিম্মায় দিলাম, ছেলে ওদেরকে নিয়ে ছুটলো ব্রান্ডন শহরের উদ্দেশ্যে, টায়ার কেনার জন্য। আমি রয়ে গেলাম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সবুজ ও তানিয়ার সাথে, তাদেরকে সাহস ও সঙ্গ দেয়ার জন্য।

পথে এমন আচমকা একটা বিপদ ঘটলেও, বিপদের স্থানটি কিন্তু খুব সুন্দর ছিল। সোজাসুজি পূর্ব-পশ্চিমে টানা দুটি আপ এ্যান্ড ডাউন সমান্তরাল হাইওয়ে। আমরা যে পাশে ছিলাম, তার পাশে এক ফালি সমান্তরাল তৃণভূমি, আর তার পাশে সমান্তরাল আরেকটি লোকাল পাকা রাস্তা, যেটা দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু সংযোগ পয়েন্টে এসে স্থানীয় লোকজন হাইওয়েতে ওঠে। আমাদের অবস্থান থেকে প্রায় তিনশত মিটার দূরে (পূর্বে) একটা লাল রঙের ঘর দেখা যাচ্ছিল। সাধারণতঃ রাস্তার পাশের এসব ঘরগুলো শুধু ঘরই হয়ে থাকে, বাড়ী নয়। লোকজন মাঝে মাঝে এখানে এসে থাকে, তাদের কৃষি জমি দেখাশুনা করার জন্য। কয়েকদিন থেকে চলে যায়। আমাদের স্থান আর সেই লাল রঙের ঘরের মাঝ বরাবর হাইওয়েতে ওঠার একটা সংযোগ পয়েন্ট ছিল। হাইওয়ে থেকে সেই সংযোগ পয়েন্ট দিয়ে নেমে আসা একটা গাড়িকে আমি ঐ বাড়িটার দিকে যেতে দেখেছিলাম। এতে মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল, আমরা হয়তো কারও সাহায্য পেলেও পেতে পারি। সেই সম্ভাবনাটুকু এক্সপ্লোর করার জন্য সবুজকে গাড়ির কাছে রেখে আমি আর তানিয়া সেই ঘরটার দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

গ্রামীণ এ ঘরটার পেছন দিকটা রাস্তার দিকে ছিল, তাই আমাদেরকে একটু ঘুরে ভেতরের দিকে যেতে হচ্ছিল। ঘরটার প্রবেশমুখে একটা সাইনবোর্ড দেখতে পেলাম, তাতে লেখা "Welcome to …… (একটা স্থানীয় নাম, নামটা ভুলে গেছি) Golf and Country Club"। কিন্তু একটা গলফ ক্লাবের যে রকম শান শওকত হবার কথা, সেরকম কোন কিছুই দেখতে পেলাম না। আরেকটু ভেতরে প্রবেশ করেই দেখতে পেলাম, ভেতর বারান্দায় কয়েকজন নরনারী বসে খোশ গল্পে মশগুল। পাশে একটা বারবিকিউ এর উনুন জ্বলছে। সুস্বাদু খাদ্যের সুঘ্রাণ বাতাসে ভেসে এসে আমাদের নাসারন্ধ্রেও প্রবেশ করলো। আমরা দূর থেকে একজন লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলাম এবং তাকে সম্ভাষণ জানালাম। তিনি উঠে আমাদের দিকে আসছিলেন। কিন্তু মুশকিল হলো, তার হাতে শেকলে ধরা ছিল কালো ভল্লুকের মত একটা বিরাট কুকুর, যে আমাদের প্রতি ততটা সদয় ছিল না। কাছে আসতেই সেটা ঘেউ ঘেউ করে এক লাফে আমাদের প্রায় কাঁধ বরাবর ওঠার চেষ্টা করলো। লোকটা আদর করতে করতে সেটাকে নিবৃত করলেও, ততক্ষণে ভয়ে তানিয়ার হার্ট এ্যাটাক হবার উপক্রম হয়েছিল।

সেখানে উপস্থিত প্রত্যেকেই উঠে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে সম্ভাষণ জানালেন এবং আমাদের সাথে করমর্দন করলেন। সাইনবোর্ড দেখার কথা উল্লেখ করে আমি জিজ্ঞাসা করলাম এটা কোন গলফ ক্লাব কিংবা ক্লাবের কোন অংশ কিনা। তদুত্তরে তারা জানালেন যে এটা এক সময় গলফ ক্লাব ছিল, এখন এটা "Resurrection Life Ministries" (খৃষ্টান কোন উপাসনালয়ের অংশ বিশেষ, এনজিও) এর ক্রয়কৃত সম্পত্তি। তারা আমাদেরকে সাদরে তাদের সাথে বারবিকিউ এ অংশ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানালে আমরা তাদেরকে আমাদের বিপদের কথা খুলে বললাম। সে কথা শুনে তারা আমাদেরকে তাদের সিনিয়র রে জনসন এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি ও তার স্ত্রী(?) লেসলী জনসন আমাদের অনুমতিক্রমে দল বেঁধে মাথা নীচু করে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে কিছু প্রার্থনা করলেন। তারপর সেই সিনিয়র কয়েকজন লোককে প্রয়োজনীয় টুলবক্স নিয়ে অকুস্থলে যাবার জন্য নির্দেশ দিলেন এবং নিজে তাঁর গাড়িতে আমাদের দুজনকে উঠিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেন। ছোট্ট পথটুকু চলতে চলতেই তার সাথে খানিক আলাপচারিতা হলো, কারণ তিনি বেশ আলাপী মানুষ ছিলেন। বয়সে আমার চেয়ে চার/পাঁচ বছরের বড় হবেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মিশনারী হয়ে কাজ করেছেন, আমাদের দেশটা সম্বন্ধেও বেশ ভালোই জানেন, কেননা সিডর ও আইলা দুর্যোগের সময় তার প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে ত্রাণ কাজে অংশ নিয়েছিল।

রে জনসন এর নির্দেশ মোতাবেক সবুজ রঙের একটা খোলা জীপে করে চারজন লোকের একটি দল এসে আমাদের গাড়ির স্পেয়ার চাকা খোলার কাজে লেগে গেল। তাদের মধ্যে একজন আমাদেরকে ইন্ডিয়ান ভেবে ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বাৎচিৎ শুরু করলো, কিন্তু আমরা তাকে জানালাম, আমরা ইন্ডিয়ান নই, বাংলাদেশী। সে মৃদু হেসে জানালো যে সে তার এক ইন্ডিয়ান সহকর্মীর কাছ থেকে কিছু কিছু হিন্দি শিখেছে, সেটাই আমাদের উপর চালাতে চাচ্ছিল। সবুজ আমাকে জানালো যে সে 'রোডসাইড অ্যাসিস্ট্যান্স' এর ইন্সুরেন্স ফী পরিশোধ করতে পেরেছে এবং একজন সাহায্যকারী ইতোমধ্যে রওনা দিয়েছে। ওরা যখন কাজ করছিল, আমি আর রে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে এটা সেটা নিয়ে আলাপ করছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, "You are very lucky"। আমি সহমত জানিয়ে তাদের সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। তিনি আরও বললেন, "Accidents like this do not happen by chance. They are pre-ordained by God"। আমি এ নিয়ে আর কথা না বাড়িয়ে ভিন্ন প্রসঙ্গে চলে গেলাম। ওনার লোকজন এসে ওনাকে জানালো যে দুটোর মধ্যে একটা নাট ওরা খুলতে পেরেছে, বাকিটার জন্য অন্য একটা স্প্যানার লাগবে। সেটা আনার জন্য ওরা গাড়ি নিয়ে পুনরায় ঐ লালঘরে ফিরে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে ওরা বাকি নাটটাও খুলে হৈ হৈ করে হাততালি দিয়ে সেলিব্রেট করলো। স্পেয়ার চাকাটা লাগিয়ে দিয়ে ওরা হাসিমুখে বিদায় নিল। আমরা ওদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে করমর্দন করলাম এবং ওদেরকে বিদায় সম্ভাষণ ও শুভকামনা জানিয়ে বিদায় দিলাম। রে থেকে গেল আমাদের সঙ্গে, শেষটুকু ভালোয় ভালোয় হয় কিনা তা দেখার জন্য।

একটু পরেই 'রোডসাইড অ্যাসিস্ট্যান্স' থেকে একজন লোক এসে পরীক্ষা করে দেখলো যে স্পেয়ার চাকাটা ঠিকমত লাগানো হয়েছে কিনা। তার যে কাজটা করার ছিল, সেটা ঐ চার্চের লোকজনই করে দিয়ে গেছে। সে যখন শুনলো যে কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্রয়কৃত নতুন চাকাটি এসে পৌঁছাবে, সে পরামর্শ দিল পেছনের চাকাটিও বদলে নিয়ে নতুন চাকাটি লাগাতে। কারণ সেটার অবস্থাও বেশি ভালো ছিল না। স্পেয়ার চাকাটি ভালো ছিল বলে সেটা দিয়ে উইনিপেগ পর্যন্ত যেতে কোন অসুবিধে হবে না বলে জানালো। তবে গাড়ির গতিবেগ কিছুতেই ৯০ অতিক্রম না করার জন্য সে সতর্ক করে দিল। লোকটি এসেছে দেখে রে জনসন বাকী পথটুকুর জন্য আমাদেরকে শুভকামনা জানিয়ে বিদায় নিতে চাইলো। আমরা তাকে প্রভূত ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় সম্ভাষণ জানালাম। এরই মধ্যে আমার ছেলে নতুন টায়ার নিয়ে উপস্থিত হলে লোকটি সেটা পেছনের বাম পাশে লাগিয়ে দিল। আমরা তাকে অনুরোধ করলাম গাড়িতে আর কোন অসুবিধে তার নজরে পড়ে কিনা তা একটু দেখে দিতে। প্রয়োজনীয় সব কিছু পরীক্ষা করে সে 'ওকে রিপোর্ট' দিল।

উচ্চ গতিবেগের এই রাস্তায় ১১৫ কিমি গতিতে ধাবমান গাড়িটির পেছনের চাকা না ফেটে যদি সামনের চাকা ফাটতো, তাহলে যে কী হতো তা কল্পনা করতেও গা শিউরে ওঠে। যাহোক, বিরাট একটা দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবার জন্য আমরা দয়াময় স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং বাকি পথের জন্য নিরাপত্তা কামনা করে বিকেল সোয়া সাতটায় উইনিপেগের উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রার দ্বিতীয়াংশ শুরু করলাম। যদিও 'রোডসাইড অ্যাসিস্ট্যান্স' এর সেই কারিগরটি গতিসীমা ৯০ এ সীমিত রেখে গাড়ি চালানো যাবে বলে অনুমতি দিয়েছিল, আমরা বাকি পথটাতে কখনোই আর ৭৫ এর ঊর্ধ্বে উঠি নাই। নানারকমের টেনশনে সবার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছিল। Portage la Prairie তে পৌঁছে সেখানকার 'পপ আইজ' এ বসে ডিনার সেরে নিলাম। তখন সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে আটটা, সূর্য ডুবুডুবু। সেখানেই মাগরিবের নামায পড়ে যাত্রার বিরতিহীন শেষ অধ্যায়টা শুরু করলাম। পথে অনেকগুলো রেলক্রসিং পড়লো, তবে যাত্রীবাহী ট্রেন একটাও চোখে পড়লো না। মালবাহী ট্রেনগুলো মাত্রাতিরিক্ত দীর্ঘ, আমাদের দেশের কন্টেইনারবাহী দশটা ট্রেনের সমান ওদের একটা। আমাদের ঘটনাবহুল এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথে (সময়ের হিসেবে, দূরত্ব হিসেবে ততটা নয়) ঐ মালগাড়িগুলোকে পাস দিতে দিতে আমাদের, বিশেষ করে বাচ্চাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটছিল। অবশেষে রাত বারটার একটু আগে আমরা আমাদের হোটেল 'সুপার এইট' এ পোঁছালাম। হোটেলের নিরিবিলি, ছিমছাম পরিবেশ আর ফ্রন্ট ডেস্ক এর কর্তব্যরত স্টাফের সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ পছন্দ হলো। রুমে গিয়ে ঝটপট একটা গরম শাওয়ার নিয়ে সবাই কথা বলতে বলতে একসময় একে একে নিশ্চুপ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।


উইনিপেগ, ম্যানিটোবা, কানাডা
২০ মে ২০২৩
শব্দ সংখ্যাঃ ১৬৭০


সকৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি "Resurrection Life Ministries" এর সম্মানিত প্রধান রে জনসন কে, যিনি সেদিন আমাদের সহায়তায় অকাতরে এগিয়ে এসেছিলেন এবং বিপদমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সাথে অবস্থান করেছিলেন।

রিজাইনা থেকে উইনিপেগ চলার পথে,
২০ মে ২০২৩, বিকেল ১৭ঃ৫৮


কাজ শেষ করে রে জনসন এর লোকজনের বিদায় নেয়ার ক্ষণে....
রিজাইনা-উইনিপেগ হাইওয়ের পাশে......
২০ মে ২০২৩, ১৭ঃ৫৪


@উইনিপেগ, ম্যানিটোবা, কানাডা
২১ মে ২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ১২:০৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিকার !

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:১২



একটা শিকার-
শিকার করবো বলে মনে মনে পুষলেও শেষ পর্যন্ত করিনি স্বীকার!
যে লোহার আকশি দিয়ে শিকার গাঁথবো ভেবেছিলাম
প্রান্তরে নেমে দেখি আকশিরও মুখ ভোতা!
সে নাকি নিজেই কবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি'র লাখ লাখ কর্মী অপেক্ষা করছে, সর্দারের ১ম নতুন ডাকাতীর খবরের জন্য।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩১



আওয়ামী লীগের সময়, যারা ১৭ বছর ডাকাতী করে যা জমায়েছিলো, বিএনপি'র কয়েক লাখ লোজজন তাদের থেকে একটা বড় অংশ ছিনিয়ে নিয়েছে; সেই প্রসেস এখনো চলছে। তবে, বস... ...বাকিটুকু পড়ুন

=জোর যার, ক্ষমতা তার=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৪



কনুইয়ের গুতাতে কার, জায়গাটা দখলে
কে সে, জানো তো সকলে!
ক্ষমতার লড়াইয়ে, বল চাই-
দেহে বাপু জোর চাই
জোর যার, ক্ষমতা তার,
রাজনীতির ছল চাই।

ক্ষমতাটা নিতে চাও, জোর চাই
দেহ মাঝে বল চাই,
ধাক্কায় নির্বল, ফেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি

লিখেছেন মুনতাসির, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি। এই কথাটার সূত্র ধরেই এগোনো যায়। ৫ আগস্টের পর আমাদের কোন কোন পরিবর্তন এসেছে, সেটাই আগে দেখা দরকার। হিসাব করে দেখলাম, বলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×