somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইকে ভেসে আসা গানের স্মৃতি

০৮ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনলে ভালো শোনা যায় বলে জানি। তবুও আমি হেডফোন ব্যবহার করি না, শ্রবণশক্তি নষ্ট হবার ভয়ে। আগে আমার শ্রবণশক্তি খুবই প্রখর ছিল; কিন্তু ২০২১ সালে কভিডে আক্রান্ত হবার পরে সেটার অবনতি ঘটেছে বলে নিজেই টের পাই। আর আমি সাধারণতঃ সেলফোনে গান শুনি না। কিন্তু যখনই ল্যাপটপ খুলি, এক নাগাড়ে ইউটিউবে গান বাজতে থাকে। অন্য কিছুতে মনোনিবেশ করতে গান কখনও আমাকে বাধ সাধে না, বরং সহায়ক হয়। যাহোক, ঘরে তো আর শুধু আমি একা থাকি না, আরও অনেকেই থাকে। অনেক সময় আমার বাজানো গান তাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই ছেলেকে এবারে বললাম একটা ভালো হেডফোন সেট কিনে আনতে। আশা করছি, দেশে ফিরে গিয়ে ওটার সদ্ব্যবহার করবো, যেন গান শোনা নিয়ে কারও বিরক্তির কারণ না হই।

আমার শৈশবে গান শোনার একমাত্র উপকরণ ছিল একটা তিন ব্যান্ডের রেডিও। বাসার বড়দের পছন্দ ছিল রেডিওর নাটক; আমার ও আমার বড় বোনের ছিল অনুরোধের আসর। দুটো সাংঘর্ষিক হলে আমরা দু'জনাই অন্য পথ খুঁজতাম, বড়দের কথাই ধোপে টিকতো। আরেকটু বড় হয়ে টু-ইন-ওয়ান এবং ফিতের ক্যাসেটে গান শোনা শুরু করি। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বরে দেশে টেলিভিশন চালু হলেও আমাদের বাসায় টেলিভিশন প্রথম আসে ১৯৬৮-৬৯ সালে। তখন 'ত্রিরত্ন' নামে একটি হাসির নাটকের সিরিজ দেশে তুমুল আলোড়ন তুলেছিল।

আমরা তখন থাকতাম শেরে বাংলা নগরে একটি দোতলা বাসায়। বাসাটির দোতলায় সামনে ও পেছনে ব্যালকনি ছিল। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর কিছুক্ষণ সামনের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াতাম। দূর থেকে মাইকে ভেসে আসতো তখনকার দিনের কিছু জনপ্রিয় গানের সুর। বিশেষ করে শীতকালে যখন বিয়ের মওশুম, তখন অনেক রাত পর্যন্ত গান শোনা যেত। সে সময়ে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল বর্তমান সময়ের এক পঞ্চমাংশ, বাড়িঘরের সংখ্যাও ছিল একই অনুপাতে। তাই রাতের বেলা অনেক দূর দূরান্ত থেকেও মাইকে বাজানো গান শোনা যেত দীর্ঘ সময় ধরে তখন আবালবৃদ্ধ্বনিতার অসম্ভব জনপ্রিয় গান ছিল "হাওয়া মে উড়তা যায়ে" (পরবর্তীতে বাকের ভাই এর সেই বিখ্যাত গান), রূপবান ও রহিম বাদশা ছায়াছবির গান "দাইমা গো" এবং সাত ভাই চম্পা ছায়াছবির বৃন্দসঙ্গীত "শোনেন শোনেন জাঁহাপনা শোনেন রাণী ছয়জনা"। স্মৃতি হাতড়ে মনে করতে পারছি, নিম্নোক্ত গানের সুরগুলোও তখন মাইকে ভেসে এসে আমার মনটাকেও তাদের সাথে ভাসিয়ে নিয়ে যেত। একেকটা গানের সাথে একেক রকমের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এখনও এসব গান শুনলে সেসব স্মৃতির কথা মনে হয়ঃ

প্রেম একবার এসেছিল নীরবে
একটা গান লিখো ও আমার জন্য
ভুল সবই ভুল
সাত ভাই চম্পা জাগোরে জাগো
আষাঢ় শ্রাবন মানে না তো মন

মন যদি ভেঙে যায়, যাও কিছু বলবো না
অনেক সাধের ময়না আমার
অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেও না
গল্প যদি শুনতে চাও, তবে চুপটি করে বসো

সোনার ময়না পাখি
মাঝি বাইয়া যাও রে
আজি ভাহাহাল করিয়া বাজান রে দোতরা
পদ্মার ঢেউ রে
ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে

তু যাঁহা কাভি ভি যায়ে
একেলে না যানা
কো কো করোনা
যাব কয়ি পেয়ারসে বুলায়ে গা
কিয়া হ্যায় যো পিয়ার তো পাড়েগা নিভানা
হ্যায় আপনা দিল
রঙ্গিলা রে......

এসব গান ছাড়াও, শীতের মাসগুলোতে মাঝে মাঝে দূরের কোন ওয়াজ মাহফিল থেকে হামদ ও নাতের সুরও ভেসে আসতো। বিশেষ করে ইয়া নবী সালাম আলাইকা, এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি, ইত্যাদি। সেগুলোও ভালো লাগতো।

দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সাধারণতঃ পেছনের ব্যালকনিতে কিছুক্ষণ দাঁড়াতাম। সে সময়ে দুপুর আড়াইটার দিকে তেজগাঁ বিমান বন্দর থেকে একটা প্লেন বিকট শব্দ করে আকাশে উড়তো, যেত সম্ভবতঃ লাহোর কিংবা করাচী। আমাদের বাসার পেছনের ব্যালকনি থেকে বিমান বন্দরের রানওয়ে দেখা যেত, তাই সেখানে দাঁড়িয়ে আমি অনেক সময় প্লেনের ওঠানামা দেখতাম। একবার আমাদের এক প্রতিবেশী পরিবার ঐ প্লেন ধরে কোথায় যেন গিয়েছিলেন। তাই ঐ প্লেনটার ওড়া দেখলেই ওদের কথা মনে পড়তো।

মানুষের কথা, কান্না, গান ইত্যাদি নাকি অনন্তকাল ধরে ইথারে ভেসে বেড়ায়। মানুষের স্মৃতির ইতি কি তার মৃত্যুর সাথে সাথেই কিংবা তারও আগে ঘটে থাকে, নাকি সেগুলোও অনন্তকাল ধরে কোথাও ভেসে বেড়ায়; তার আত্মাকে পুনরায় জাগ্রত করা হলে সেগুলো আবার ফিরে এসে তার মনে ঠাঁই নেবে? কে জানে!



রিজাইনা, কানাডা
০৮ অগাস্ট ২০২৩
শব্দ সংখ্যাঃ ৬১১

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৩০
১৪টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×