Click This Link
বারিস্টার হবো
আমার জন্মের সময় পাকিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন ব্যারিস্টার এ.টি.এম. মোস্তফা কামাল সাহেব। তিনি ছিলেন টাঙ্গাইলের দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহার জামাতা। (তাঁর অপর জামাতা ছিলেন ব্যারিস্টার শওকত আলী) যে কোন কারনেই হোক আমার বাবা মা তাঁর ভক্ত ছিলেন। তাঁর নামানুসারে তাঁরা আমার নাম রাখলেন। অতিপিচ্চিকালে সেটা আমার কানে আসার পর আমি নিজ দায়িত্বেই বলা শুরু করলাম, আমি বারিস্টার হবো। বাস্তবে যদিও বারিস্টার হবার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবু উড়িয়েও দিতে পারছি না। কারণ ব্যারিস্টারী পড়ার অতিপ্রাথমিক ধাপ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করে ফেলেছি। অর্থাৎ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একখানা এলএলবি ডিগ্রী হাসিল করে রেখেছি। যদিও সেটা কোন কাজে আসছে না এখন।
স্টিমার ভ্রমন
সেই কালে লঞ্চের চেয়ে বড়ো ও কিঞ্চিত অভিযাত শ্রেণীর এক প্রকার জলযান চলাচল করতো। নাম ছিলো স্টিমার। জেমস ওয়াটের স্টিম ইঞ্জিনের নামানুসারেই হয়তো এই নামকরণ। হাতিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ছিলো সেই ভ্রমন। হাতিয়া থেকে চড়তে গিয়ে সে এক মহাঝক্কি। স্টিমার একদম কূলে না ভিড়ে একটু দূরে নোঙর করলো। ফলে স্টিমারে ওঠার জন্য নৌকায় উঠতে হলো। প্রচণ্ড ঢেউয়ের জন্য নৌকা ভয়ানক দুলছিলো। মোটা দড়ির সিঁড়ি। এটা বেয়ে ওঠা বিশেষত: মহিলাদের জন্য প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। এই দড়ি বেয়ে মালামাল তোলা সেও এক ভয়ানক কাজ। কোন রকমে পা ফসকালে দুরন্ত সাগরে সলিল সমাধির হাতছানিতো মজুদ ছিলোই। কীভাবে সেই পুলসিরাত পার হয়ে স্টিমারে উঠেছিলাম বিসাতারিত আজ আর মনে নেই। শুধু মনে আছে সবচেয়ে ওপরের তলায় আমাদের কেবিন ছিলো। সেখান থেকে সাগরের ঢেউগুলো খুব ছোট লাগছিলো, যেন আকাশ থেকে দেখছি।
খোলের ভেতরের মাথা
নীচের দিকে ঢেউ ছাড়া আমার নজর কেড়েছিলো স্টিমারের গায়ে বৃত্তাকার একটা খোল ওরফে জানালা। সেখান দিয়ে একজন প্রায়ই মাথা বের করে কি যেন দেখতো। আম্মাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, সে মনে হয় খালাসী। এই খালাসী কি প্রকার প্রাণী সেটাই আমাকে অস্থির করে রাখলো। সে যে স্বাভাবিক একজন মানুষ সেটাই আমার মনে আসেনি। খোল থেকে বাড়িয়ে রাখা খালাসীর মাথাটা সেই যাত্রা আমার প্রধান স্মৃতিতে পরিণত হলো।
টেক্সি ও গেণ্ডারিয়া রেলগেট
নারায়নগঞ্জ এসে নামলাম স্টিমার থেকে। হলুদ টেক্সি ভাড়া নেয়া হলো। ভোক্সওয়াগেন কার, কচ্ছপের মতো দেখতে। ওপরের টেক্সি কথাটা আবার আমার মাথায় গোল পাকিয়ে দিলো। যেটা স্কুটার নামে পরিচিত সেটার আরেকটা নাম তখন চালু ছিলো ''বেবি টেক্সি''। এই কচ্ছপিত গাড়ীও কেন টেক্সি হবে ? এই প্রশ্ন করে ধমক হজম করে চুপ করে গেলাম বটে, খটকাটা রয়েই গেলো। চলতে চলতে এক জায়গায় এসে সেই টেক্সি থেমে গেলো। লোহার পাইপ দিয়ে রাস্তা বন্ধ। আম্মার প্রশ্নের জবাবে ড্রাইভার জানালেন, এটা গেণ্ডারিয়া রেলক্রসিং। আবার আমাকে হণ্ট করলো ''গেণ্ডারিয়া'' শব্দটি। কেমন জানি অদ্ভুত ! ( বড়ো হয়ে জেনেছি এটা ছিলো সেকালের অভিজাতদের বসবাসের এলাকা, তাই নাম ছিলো ''গ্র্যাণ্ড এরিয়া'' সেখান থেকে নাম হয়ে গেছে গেণ্ডারিয়া)
আঁই !?
বড়ো চাচা তখন রেডিও পাকিস্তান ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর ইস্কাটনের বাসায় উঠলাম। নীচ তলায় থাকতেন। দোতলায় ওঠার সিঁড়িটি ছিলো গুহার মতো । শুরুতেই ঘোর অন্ধকার ! যাই হোক, খেয়ে দেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ একটা শব্দ হলে আমি ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম। আম্মা বললেন, কে ? জবাব এলো, চাচী , আঁই হারু। (আমার চাচার বড়ো ছেলে, বিএডিসিতে উচ্চপদে চাকরী করতেন। এখন আমেরিকা প্রবাসী)
আমি আম্মাকে বললাম, আঁই কি ? তখনো নোয়াখালীর ট্রেডমার্ক ভাষা শিক্ষা শুরু হয়নি বলে ''আঁই'' ( আমি) নিয়ে আমি এতো কৌতুহলী হয়েছিলাম। কিন্তু সেটা আমার ঢাকা কলেজ পড়ুয়া সেই ভাইয়ের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে ছিলো বহুদিন।
কেঁদে কেঁদে গান !
চাচা যেহেতু বেতারে ছিলেন সেহেতু ঢাকায় আমাদের বেতার ভ্রমন অপরিহার্য ছিলো। শাহবাগের এখানে দেখি রেকর্ডিং হচ্ছে। কাঁচে ঘেরা ঘরের ভেতর বসে রেকর্ডিং করছিলেন ফিরোজা বেগম ( তখন চাচার কাছে নামটি শুনেছি)। তাঁর মুখের ভঙ্গিটি অনেকটা কান্নার মতো ছিলো বলে আমি বললাম, তিনি কাঁদছেন কেন ? যথারীতি ধমক খেয়ে চুপ করতে হলো। (চলবে)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



