somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মালয়েশিয়া বো'লে ! .... ২

০২ রা আগস্ট, ২০১০ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link

কুয়ালা লামপুর থেকে কেএল

কুয়ালা লামপুরকে স্থানীয়রা সবসময় সংক্ষেপে বলেন কেএল। আকাশ ছোঁয়া ঘনসবুজ বনে ছাওয়া পাহাড়ের পাদদেশ আর কোল জুড়ে দ্রুত বেড়ে চলেছে কুয়ালা লামপুর শহর। বিশ্বের বিস্ময় মালয়েশিয়ার রাজধানী। শুরু থেকেই কুয়ালা লামপুর খুব দ্রুত বেড়েছে। বিশ্বমানের শহরকূলে কুয়ালা লামপুরই সবচেয়ে কমবয়সী বলে মনে হয়। এখানে লোক বসতির সূচনা ১৮৫৭ সালে। রাজা আবদুল্লাহ ক্লাঙ নদীর অববাহিকায় টিন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেন সে বছর। এ কাজে তাঁকে সহায়তা দেন লুকুতের (LUKUT) রাজা জুমাত আর ৮৭ জন চীনা শ্রমিক। দুর্গম ঘন বন পেরিয়ে তাঁরা টিনের সন্ধান পেলেন আমপাং, পাডু আর বাটু এলাকায়। পত্তন হয় কুয়ালা লামপুর টিন ''খনি গ্রামের'' ( MINING VILLAGE)।

টিন খনির বদৌলতে ১৮৬২ সালের মধ্যে কুয়ালা লামপুর একটি দ্রুতবর্ধিষ্ণু গ্রামে পরিণত হয়। এ সময় ''হাই সান'' আর ''গি হান'' নামের দু'টি চীনা গোষ্ঠী গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ যুদ্ধে প্রায় ধ্বংস হয়ে যায় কুয়ালা লামপুর গ্রাম। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জেতে ''হাই সান'' গোষ্ঠী। তাদের এক নেতা ইয়াপ আহ লয় কুয়ালা লামপুর গ্রাম পুনর্গঠনে অগ্রনী ভূমিকা নেন। তিনি আরো চীনা শ্রমিক নিয়ে আসেন। সাথে নিয়ে আসেন অনেকগুলো মালয়ী কৃষক পরিবারকে; যারা শ্রমিকদের খাদ্য যোগানের জন্য চাষাবাদ করবেন।

১৮৬৪ সালে ইয়াপ আহ লয় ''ঝি ইয়া মন্দির'' প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই কুয়ালা লামপুরের প্রাচীনতম ''তাও-মন্দির''। ১৮৬৮ সালে ইয়াপ আহ লয় কুয়ালা লামপুরের তৃতীয় ''চীনা ক্যাপ্টেন'' হিসাবে দায়িত্ব নেন। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে কুয়ালা লামপুরের আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক উন্নতি হয়। ১৮৮৫ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এ অবস্থা বজায় থাকে।

১৮৮০ সালে কুয়ালা লামপুর আধুনিক নগরী হিসাবে প্রথম পা রাখে যখন বৃটিশ প্রতিনিধি স্যার ফ্রাঙ্ক সুইটেনহাম প্রথম নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেন। সে মোতাবেক কুয়ালা লামপুরের ধনী খনীকর্মীরা বৃটিশ মডেলের বাড়ী তৈরী শুরু করেন। এ সময় টিনের দাম খুব বেড়ে যাওয়ায় নাটকীয়ভাবে কুয়ালা লামপুর শহরের পরিধি বাড়তে শুরু করে।

১৮৮৭ সালে ক্লাঙ বন্দর থেকে চালু হয় রেলপথ। আধুনিক এ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর সাথে সাথে কুয়ালা লামপুরকে ঘোষণা করা হয় সেলাঙ্গর রাজ্যের রাজধানী। শুরু হয় রাজধানী কুয়ালা লামপুরের অভিযাত্রা।

১৮৯৬ সালে ৪টি মালয়ী রাজ্যের সুলতান একত্রিত হয়ে গঠন করেন ''ফেডারেটেড মালয়ী স্টেটস''। তারও রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করা হয় ''কুয়ালা লামপুর'' শহরকে। তখন থেকেই কুয়ালা লামপুর বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের প্রধান কেন্দ্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আবাসিক প্রতিনিধি রূপে নিযুক্ত হন স্যার ফ্রাঙ্ক সুইটেনহাম।

১৯৪৬ সালে বৃটিশ রাজ মালয়ান ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব দিলে স্থানীয়রা তা মানতে অস্বীকার করে। এর প্রতিবাদে গঠিত হয় ''ইউনিয়ন মালয়ীজ ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন''। ১৯৪৮ সালে সূচনা হয় ''ফেডারেশন অব মালয়েশিয়া''র।

১৯৫৭ সালে ''ইউনিয়ন জ্যাক'' নামিয়ে উত্তোলিত হয় স্বাধীন মালয়েশিয়া ফেডারেশনের পতাকা। ৩১ আগস্ট স্বাধীন মালয়েশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী টুঙ্কু আবদুল রহমান পুত্রা আলহাজ্জ্ব স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। অবসান হয় ১৫১ বছরের বৃটিশ উপনিবেশের। কুয়ালা লামপুর নির্বাচিত হয় স্বাধীন মালয়েশিয়ার রাজধানী।

১৯৭০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কুয়ালা লামপুর মহানগরী (City status) ঘোষিত হয়। ১৯৭৪ সালে কুয়ালা লামপুরকে মূল রাজ্য সেলাঙ্গর থেকে আলাদা করে স্ব-শাসিত নগরী ( Federal Territory ) ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৯ সালে ফেডারেল সরকারের অফিস-আদালত সরিয়ে নেয়া হয় আরেকটি ফেডারেল টেরিটোরি ''পুত্রাজায়া''তে।

মালয়ীদের প্রিয় শহর ''কেএল'' আধুনিকতা আর প্রকৃতির মেলবন্ধনে এক অনন্য মহানগর। পৃথিবীর যে কোন মানুষ এমন একটি অসাধারন শহরের বাসিন্দা হলে গৌরববোধ করবেন।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১০:২২
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×