রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের তারিখ জানতে গেলে তাঁর জন্মের সময়ের ক্যালেন্ডার বা বর্ষপুঞ্জিকার ব্যাবহার বিষয়ে ধারণার প্রয়োজন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় ও তার পূর্বে আরবদের মধ্যে কোন নির্ধারিত বর্ষ গণনা পদ্ধতি ছিল না। আরবদের মধ্যে হিজরী সাল গণনা শুরু হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের ৬ বৎসর পরে ১৬ বা ১৭ হিজরী সাল থেকে। হিজরী সাল গণনার পূর্বে তারা বিভিন্ন ঘটনার উপর নিভর করে পূর্বের সময় বলতো। যেমন, অমুক ঘটনার অত বৎসর পরে বা পূর্বে.....।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মবৎসর বা জন্মের সাল সম্পর্কে ইমাম তিরমিজী (র
হাতীর বছর অর্থাৎ যে বৎসর আবরাহা হাতী নিয়ে কাবা ঘর ধ্বংসের জন্য মক্কা আক্রমণ করেছিল। ঐতিহাসিকদের মতে এ বছর ৫৭০ বা ৫৭১ খ্রীষ্টাব্দ ছিল।
উপরোল্লিখিত আলোচনা থেকে আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মবৎসর বা জন্মের সাল জানতে পারলাম।
এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন।
বর্তমান আধুনিক যুগে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় বিগত পনের বা বিশ বছর পূর্বে আমাদের পরিচিতজন কে, কখন, কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন তা আমরা কতটুকু মনে রেখেছি? যেসময়ে আরবদের মধ্যে কোন নির্ধারিত বর্ষ গণনা পদ্ধতিই ছিল না, সেইসময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের তারিখের হিসাব রাখা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা বাস্তবতার নিরিখে প্রশ্নের অবতারনা করে। বিধায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে সম্পর্কে হাদীসে নববী থেকে কিছুই জানা যায় না। সাহাবীগণের মাঝেও এ বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট মত প্রচলিত ছিল না। একারণে পরবর্তী যুগের আলিম ও ঐতিহাসিকগণ তাঁর জন্মতারিখ সম্পর্কে অনেক মতভেদ করেছেন। ইবনু হিশাম, ইবনু সা’দ, ইবনু কাসীর, কাসতালানী ও অন্যান্য ঐতিহাসিক ও সীরাত লিখকগণ এ বিষয়ে ১২টিরও বেশী মতামত উল্লেখ করেছেন। জন্ম মাসের বিষয়ে কয়েকটি মত পাওয়া যায়। কেউ বলেছেন মহর্রাম, কেউ বলেছেন সফর, কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল, কেউ বলেছেন রবিউস সানী, কেউ বলেছেন রজন এবং কেউ বলেছেন রামাদান মাসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। যারা রবিউল আউয়াল মাসকে তাঁর জন্মমাস বলেছেন তারাও তারিখ নিয়ে অনক মতভেদ করেছেন। কেউ বলেছেন তিনি রবিউল আউয়াল মাসের ২ তারিখে, কেউ বলেছেন ৮ তারিখে, কেউ বলেছেন ১০ তারিখে, কেউ বলেছেন ১২ তারিখে, কেউ বলেছেন ১৭ তারিখে এবং কেউ বলেছেন ২২ তারিখে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন। প্রত্যেক মতের পক্ষেই কোনো কোনো সাহাবী বা তাবিয়ী থেকে মতামত বণনা করা হয়েছে।
সম্মানীত পাঠকগণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম নিঃসন্দেহে উম্মতের জন্য মহা আনন্দের বিষয়। তবে এ আনন্দ প্রকাশ যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত অনুসারে হয় তাহলে তাতে সাওয়াব হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম সংক্রান্ত যে হাদীসটি আমার দৃষ্টি আকষণ করেছে তা সহীহ মুসলিম শরীফ এর কিতাবুস সিয়াম অধ্যাইয়ে আবু কাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেন: ‘‘এই দিনে (সোমবারে) আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমি নবুয়ত পেয়েছি।”
সামগ্রীক পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতীর বছর সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেন। উপরের হাদিস থেকে জন্মদিন পালনের একটি আমল আমরা দেখতে পেলাম, তা হলো জন্মবারে রোজা রাখা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মবারে রোজা রেখে নিজের জন্মদিন পালন করেছেন। আর আমরা অনেকে অনেকভাবে তাঁর জন্মদিনের নামে জন্মবার্ষিকী উৎযাপন করছি যা অন্য ধর্মের রীতি। আমরা জন্মবার্ষিকী পালন না করে সুবিধামত সময়ে সোমবার দিনগুলোতে রোজা রাখার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন পালন করতে পারি।
ভাগ-১ এ উল্লেখ করেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের সংবাদে অত্যন্ত খুশি হয়ে আবু লাহাব তার মহার্ঘ্য দাসীকে চিরদিনের জন্যে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। সেই আবু লাহাবের কাছে যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর আয়াত তেলাওয়াত করলেন তখন সে বেঁকে বসল। আমরা যেন এরূপ না হই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিনের নামে জন্মবার্ষিকী উৎযাপন করছি আর চলার পথে যখন আমাদের সামনে তাঁর আদর্শ আসে তখন আমরা গ্রহণ না করে মুখ ফিরে নিচ্ছি।
সম্মানীত পাঠকগণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ঈমান এনে, তাঁর শরীয়ত মোতাবেক জীবন গঠন করে, তাঁর সুন্নাতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করে, সদা সর্বদা তাঁর উপর দরুদ সালাম পাঠ করে, সাধ্যমত বেশি বেশি তার জীবনী ও হাদীস পাঠ করে ও শ্রবণ করে নিজেদেরকে একজন ভাল মুসলিম হিসাবে তৈরী করি।
তথ্যগত আলোচনায় ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (ভাগ-১)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


