ভাগ-১ এ অশ্রীলতার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। আজকে শালীনতা বিষেয়ে উল্লেখ করতে চাচ্ছি। পহেলা বৈশাখ উৎযাপন করতে শালীনতাকে অনেকাংশে বিষর্জন দেওয়া হচ্ছে। মনে হয় সমাজে শালীনতাবোধ দিন দিন লোপ পাচ্ছে। যদি কোন মেয়ে মাথা খোলা রেখে রাস্তায় চলাচল করে, তা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হলেও ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। আবার বিভিন্ন সমাজ ভেদে শালীনতার মাপকাঠি বিভিন্ন রকম। কোন সমাজে জামায় শশুড় এক সঙ্গে মদ পান করে তা ঐ সমাজে শালীন, কিন্তু হিন্দু বা মসলিম সমাজে তা অশালীন। আবার যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শালীন বাংলাদেশে এখনও তা অশালীন। তাহলে শালীনতার মাপকাঠি নির্ধারিত নয়। শালীনতার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ইসলাম মানুষের কামনা-বাসনার উপর ছেড়ে দেয়নি, বরং তা একটি নীতির মাধ্যমে মাপকাঠি তৈরী করে দিয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা মহাগ্রহন্থ আল কোরআন এর ২৪ নম্বর সূরা আন-নূর এর ৩০ ও ৩১ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে পুরুষ ও নারীদের সমাজে চলাফেরার শালীনতা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। সেখানে প্রথমেই পুরুষদের বলা হচ্ছে, মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তারে যৌনাঙ্গের হেফাযত করে, এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে, নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। এর পর নারীদেরকে আল্লাহ বলছেন, ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে, তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, এমন বালক যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে, মুমিনগণ সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
আল্লাহ প্রদত্ব শালীনতার নীতি অনুসরণ করে সমাজে দরিদ্রদের আহার করানো, বস্ত্র প্রদান, অর্থ প্রদানের মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ উৎযান করে আমাদের পরোপকারের মহৎসংস্কৃতিকে ধারণ করে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি পহেলা বৈশাখ উৎযাপন আক্ষরিক অর্থে স্বার্থক করতে পারি। কেননা পহেলা বৈশাখের রীতিই হচ্ছে, প্রজাগণ চৈত্র মাসের শেষ তারিখ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করবে আর জমিদারগণ বৈশাখের পহেলা তারিখে প্রজাদের মিষ্টি খাওয়াবে বা আহার করাবে।
আরও একটি বিষয় আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে যে, নতুন বছর নতুন কল্যাণ বয়ে আনে, দূরীভূত হয় পুরোনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি। এধরণের কোন তত্ত্ব ইসলাম সমর্থন করে না। কেউ যদি এই ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হল। আর কেউ যদি মনে করে যে, নববর্ষের আগমনের এই ক্ষণটি নিজে থেকেই কোন কল্যাণের অধিকারী, তবে সে বড় শিরকে লিপ্ত হল, যা তাকে ইসলামের গন্ডীর বাহিরে নিয়ে গেল। এই ধারণার উপরে কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে চিরতরে হারাম করে দিবেন। সূরা মায়েদাহ এর ৭২ নম্বর আয়াতাংশে মহান আল্লাহ এভাবে বলছেন, নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। প্রত্যেক পদক্ষেপে অশ্রীলতা পরিহার এবং শালীনতা বজায় রাখার আহবান রেখে এখানেই শেষ করছি।
বাংলা নববর্ষঃ (ভাগ-১)