somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমময় ফ্রেম বনাম ফ্রেমময় প্রেম

২৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেমময় ফ্রেম বনাম ফ্রেমময় প্রেম

আমার “সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স” মনে প্রথম যেদিন তোমাকে “ফোকাস” করি সেদিন মনটা ছিল "নরমাল লেন্স"। অনেক চেষ্টা করেও সেদিন তোমার “ক্লোজআপ” পেলামনা। তাই দূর থেকে তোমাকে দেখে আমার মন ভরলোনা। বেশ কিছুদিন ধরে তুমি “আউট অফ ফোকাস” হয়েই রইলে। অতঃপর বুঝে নিলাম আমার এনালগ মনের একটা আপডেট একান্তই প্রয়োজন। তাই একদিন মনের নরমাল লেন্সটা পাল্টে একটা “জুমলেন্স” লাগালাম। এবার তোমাকে দূর থেকে ফোকাস করে ধীরে ধীরে কাছে নিয়ে এলাম। “থ্রু দ্যা লেন্স” তোমাকে ততটা স্পষ্ট দেখতে পেলামনা। আলোর স্বল্পতার কারণে প্রথম দেখার যে “সেনসিটিভিটি” বা “আইএসও” তার মাত্রা কিছুটা কম ছিল। ভাবলাম “ডেপথ্ অফ ফিল্ড” ভাল পেতে হলে চোখের “আ্যাপারচার” ও হৃদয়ের “শাটার স্পীড” দুটোই “প্রায়োরিটি", তাই তাদের যথাযথভাবে সমন্বয় হওয়া বাঞ্ছণীয়। একদিন দেখি তোমাকে নিজের ইচ্ছেমতো “ফেড ইন” করতে যেয়ে কাছের মানুষগুলো ধীরে ধীরে “ফেড আউট” করে ফেলেছি। এরপর থেকে দেখি "লং", "শর্ট", "ওয়াইড" সকল এঙ্গেলেই শুধু তুমি আর তুমি। আমার মনের “মিরর”-এ শুধুই তোমার “রিফ্লেক্স” আর “ফোকাল লেন্থ” এর সবটা জুড়ে শুধুই তোমার উপস্থিতি। আমি ইচ্ছেমতো "ক্লিক" করেই যাচ্ছি।

একদিন দিনবদলের ধকলে হুট করে আমার “সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স” মনটা "ডিজিটাল"-এ রূপান্তরিত হয়ে গেল। এরপর থেকে নিজের ইচ্ছার উপর আর তেমন নিয়ন্ত্রণ রইলোনা। যখনই তোমাকে দেখি তখনই “ক্লিক” করি। "অটো ফোকাস", সবকিছুই অটোম্যাটিক। আলোর স্বল্পতা বা আধিক্য নিয়ে কোন ভাবনা নেই। “আ্যাপারচার” বা “শাটার স্পীড” পরিবর্তন নিয়ে কোন ঝামেলা নেই। “ফিল্ম সেনসিটিভিটি” বা “আইএসও” নিয়েও কোন ভাবনা নেই। “ডেভেলপ” বা “প্রিন্ট” করার কোন ঝামেলা নেই। একটা ছোট্ট “মেমোরী কার্ড” তোমার অসংখ্য ছবি “ক্যাপচার” করতে পারে। ইচ্ছে হলে কম্পিউটার মনিটরে দেখতে পারি। ফটোশপে যেয়ে নানা কেরামতি করতে পারি। আমার নিজের বলতে গেলে তেমন কিছুই করার থাকলোনা। সবই ডিজিটালি কনট্রোলড্।

এরপর আমি রীতিমতো ডিজিটালে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। এরপর আমার মাথায় ভূত চাপলো। আমার কাজের বিষয়ে পরিবর্তন এলো। এখন মাথার মধ্যে শুধু “ম্যাক্রো”, “মাইক্রো” ইত্যাদি সব জটিল বিষয়। নরম্যাল লেন্সের জায়গায় এলো “ম্যাক্রো লেন্স”। সেই সাথে যোগ হলো “এক্সটেনশন বেলো”, "লেন্স এ্যটাচমেন্ট", “রিং ফ্লাশ" ইত্যাদি। যে তুমি একদিন আমার মন ক্যামেরায় “নরম্যাল লেন্স” থেকে “টেলিলেন্স”, “জুমলেন্স” থেকে “ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স”, “লং শট ” থেকে “মিড শট”, “ক্লোজ আপ শট” থেকে “এক্সট্রিম ক্লোজ আপ শট” এ আমাকে সমৃদ্ধ করেছো আজ সেই জায়গায় “ম্যাক্রো” এসে জুড়ে বসেছে। এবার তোমার অপরূপ রূপের বৈশিষ্ট আরো স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, বলতে পারো ম্লান হতে শুরু করেছে। তোমার গালের ও চিবুকের যে কালো তিল আমার একান্ত প্রিয় ছিল আজ সেই তিল ম্যাক্রো লেন্সের কারিশমায় তা “বীভৎস মৌচাক” হয়ে ধরা পড়ছে। যে ত্বকের সৌন্দর্য ও কমনীতায় তুমি মুগ্ধ ছিলে আমি আজ তাতে ক্ষুব্ধ। কারণ তোমার ত্বকজুড়ে আজ স্পষ্টতঃই অসংখ্য ইঁদুরের গর্ত আর সেই গর্তজুড়ে অতি রুক্ষ বটগাছের জটা। আমি আজ সেগুলো কিছুতেই লোমকূপ ভাবতে পারিনা। তোমার নেইলপালিশ মাখানো যত্নের নখগুলো নিড়ানির চাইতে বেশী কিছু নয়। তোমার সুন্দর হাসির মূলে যে ধবধবে সাদা দাঁত তা ঘরে ব্যবহৃত টাইলস্-এর চেয়ে বেশী কিছু মনে হয়না। যে নরম ঠোঁটদুটো এতোকাল গোলাপের পাঁপড়ি ভাবতাম আজ তা নিতান্তই ব্রয়লার মুরগীর মাংশ ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না।

তুমি আমাকে ক্ষমা করো প্রিয়। আমি আমার সেই এনালগ মনটা আজ ফিরে পেতে চাই। আমার প্রেমময় ফ্রেমে তোমার যে এনালগ রূপ আমি দেখেছি আজ এই ডিজিটাল ফ্রেমময় প্রেমে তাকে কলুষিত করতে চাইনা। এককালে কবি সাহিত্যিকরা নারীদের শাশ্বত রূপের যে বন্দনা করে গেছেন হাজারো গল্প-কবিতা-উপন্যাসে আমি আমার ডিজিটাল চোখ দিয়ে সেই রূপের অপব্যাখ্যা দিয়ে চাইনা। আমার এনালগ মনে তুমি চিরকাল প্রেমময় হয়ে থাকো- আমার মনের ফ্রেমে আমি সেই তোমাকেই চাই।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৮
২৭টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×