অপুভাইয়া,
তোমার সাথে আমার প্রথম পরিচয়টাই ছিলো একটা বিয়ের দাওয়াত নিয়ে। মানে তুমি তোমার বিয়ের দাওয়াৎ দিয়েছিলে আমাদেরকে। মনে আছে? হা হা মনে না থেকে যায়ই না। আমরা সবাই মনে হয় তোমার ঐ স্টাইলের লেখার ফাঁদে পড়েছিলাম। ধোকাও খেয়েছিলাম। আসলে তোমার পোস্টটা ছিলো একটা গল্প। শিরোনামটা ছিলো আমার বিয়ে আগামী সপ্তাহে । সবাই কে দাওয়াত করলাম। কিন্তু আমরা তখন সবাই খুব আন্তরিক ছিলাম। আমাদের অনেক ব্যাক্তিগত গল্প বা ঘটনাও শেয়ার করে ফেলতাম ব্লগে। তাই ভাবলাম সত্যি সত্যিই তোমার বিয়ে। আমরা সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছিলাম, বিয়ের অনুষ্ঠান কোথায় হবে জানতে চাইছিলাম।হা হা সেই পোস্টের কথা ভুলবোনা আমি কোনোদিন। সেই শুরু। তোমার লেখার একটা বিশেষত্ব আছে। শিরোনাম সব সময় একটা কথোপকথন স্টাইলে হয়ে থাকে।
সে যাইহোক যদিও তুমি ২০১১ এর দিকে এসেছিলে আমাদের এই ব্লগভূবনে কিন্তু ২০১২ এর ১৭ই মার্চের ঐ পোস্ট থেকেই তোমাকে আমরা বেশি বেশি চিনতে জানতে শুরু করি। তুমি তখন বলতে গেলে শুধু টিয়াপাখিকে নিয়েই লিখতে। আসলে তোমার লেখার অনুপ্রেরনাই সেই টিয়াপাখি। টিয়াপাখি হয়ত তোমার জীবন থেকে উড়ে গেছে কিন্তু তোমাকে একটা বিশেষ উপহার দিয়ে গেছে। আজ তুমি যে অপু তানভীর। প্রেমের গল্প লিখে পরিচিতি পেয়েছো টিয়াপাখি না থাকলে সেই প্রতিভার উন্মেষই হয়ত হত না। তখন আমাদের ফেসবুক একটিভিটি খুব একটা ছিলো না ছিলো ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার। তোমার কাছে শুনেছিলাম টিয়াপাখির গল্প। সেই গল্পের পাউন্ড কেক আর তোমার সাইকেলে পাশে পাশে চলার কথাও ভুলিনি আমি। খোলা চিঠির কারণে সব কিছু লিখে ফেলাটাকে চেপে যেতে হলো। নয়ত আরও কিছু লিখতাম।
যাইহোক তোমাকে আমার কি মনে হয় জানো? তুমি খুব ইন্ট্রোভার্ট একজন মানুষ। যদিও ব্যাক্তিগত জীবনে তোামর বেশ ক'জন ভালো বন্ধু আছে যাদের ছবিও দেখেছি আমরা। ইন্ট্রোভার্ট হবার পরেও তোমার সাথে তোমার জীবন নিয়ে ফ্যামিলী নিয়ে অনেক কথা হয়েছে আমার। জানো তোমার গল্পগুলো শুনে আমি তোমাদের বাড়ির সবাইকেই চোখের সামনে দেখতে পাই । তোমার বাবা,মা বড় ভাই সব্বাইকেই। আর তোমার সবুজ রঙ্গের বাড়ির ফোটো তো আমরা সবাই দেখেছি। জানো ভাইয়া তুমি যখন বাড়ি যাও প্রতি ঈদে তখন আমি তোমাকে নিয়ে কত্ত কিছুই না ভাবি। আমি তোমাকে দেখতে পাই। তোমার বাড়ির সব মানুষকে, তাদের সাথে তুমি, তোমার বন্ধুর বাড়িতে ঈদের খানাপিনা আরও অনেক কিছুই। আমার ওমন একটা বাড়িতে বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করে। একদিন বলেওছিলাম মনে হয় তোমাকে। এই যে মানুষ বাড়ি যায় ঈদে আমার তো কোথাও যাওয়া হয় না। তোমার সবুজ রঙ্গের বাড়ির অনেক গল্পই আমার জানা তোমার থেকে এই কারনেই কল্পনাপ্রবন আমি হয়ত আরও কিছু রং মিলিয়ে নিজের মত ভেবে নেই।
যাইহোক বলছিলাম সেই পোস্টটার কথা। তারপর থেকে তোমার সব গল্প আমি পড়তাম। তুমি আমার বিশেষ প্রিয় হয়ে গেলে। তুমি খুব লিখতে। যে কোনো ঘটনা থেকে গল্প লিখে ফেলাটই তোমার বিশেষ বৈশিষ্ঠ ছিলো। এত এত লিখতে যে কেউ কেউ মনে হয় বিরক্ত হয়ে যেত বা নিজেরা পারেনা বলেই হয়ত রেগে যেত। হা হা যাইহোক আমি সবার থেকেই তোমাকে আগলে রাখতাম। কিন্তু কোনো এক কারণে আমি তোমার কিছু পোস্টে কমেন্ট দিতে পারিনি। অনেক বিজি ছিলাম তাই নিয়ে তোমার সে কি রাগ। তুমি একটা পোস্ট লিখলে।
পোস্টটা ছিলো তোমার বর্ষপূর্তি পোস্ট। জানো এই লেখাটা লিখতে গিয়ে পোস্টটা আবার পড়লাম। কি অপকটে লিখেছো তোমার মনের কথা। আজ তুমিও অনেক পুরোনো ব্লগার সকলের পরিচিত। এক যুগের ও বেশি সময়ে আমরা কতই না পরিবর্তিত হয়েছি। তবুও তুমি সেই প্রিয়ই আছো। এই যে সেই পোস্ট একলব্য আর মিররমনি পড়ুক। প্রিয় ব্লগার শায়মা আপু !!
কিন্তু পড়ে যেন তারা ফয়সাল ভাইয়ার মত রাগ না করে। কারণ ফয়সালভাইয়া তার এই এঞ্জেলিকা আপুর বাড়িতে অপুভাইয়াকে দাওয়াৎ করেছি তাকে ছেড়ে এটা জেনে খুবই রাগ করেছিলো। আমার বাড়িতে তোমার দাওয়াৎ পোস্টটা খুঁজতে গিয়ে আরেকটা পোস্ট চোখে পড়লো। ভাইয়া তুমি তখনও এত বিজি হয়ে যাওনি। সামুব্লগের চড়াই উৎরাই এত পেরোওনি তুমি তখনও। তুমি শুধু তোমার চারপাশে তোমার প্রিয় আপুকেই চিনতে। তোমাকে একটা কথা বলি আজ, তোমার গল্প নিয়ে আমি কমেন্ট দেই, আদিখ্যেতা করি এ ব্যপারটা নিয়ে আমাকে অনেকেই অনেক কিছু বলতো। রাগ করতো। হিংসা করতো তোমাকে। কিন্তু আমি তো অবিচল ছিলাম। আজও আছি, হয়ত আগের মত নেই, তবুও আছি। কারণ আমি তোমাকে যতখানি জেনেছি তা কি এরা কেউ জানে? যাইহোক এই সেই পোস্ট যেখানে তোমার মনের কথা একেবারেই খাঁটি ছিলো। খাঁটি ভালোবাসা চেনা কঠিন না। পরী আপুটার জন্মদিন আজ !তোমার টিয়াপাখির জন্মদিনও আমার জন্মের মাসেই।
২৫শে নভেম্বরে তুমি লিখলে রহস্যময়ী ব্লগার শায়মা আপুর সাথে আমার দেখা হবার গল্প !! মানুষ আমাকে রহস্যময়ী বলতো কারণ আমি আমার কোনো ছবি দিতাম না, পরিচয় দিতাম না, আমি কে এটাও বলতাম না। আসলে আমি কখনই বলতেই চাইনি এই আজ যতটুকু প্রকাশিত হয়েছি তা বাধ্য হয়ে। অনলাইন একটিভিটি বিশেষ করে লকডাউনের ধরা পড়ে গেলাম কারো কারো কাছে তাই আর লুকিয়ে কি হবে এই ভাবনা থেকেই একটু আধটু উঁকি ঝুকি দেই আর কি। যাইহোক আমার আরেকটা উপাধি ছিলো পরী আপু। কারণ আমার খানাপিনার ছবি দেখে সবাই যখন দাওয়াৎ চাইত আমি বলতাম আসো আসো আমার পরীর দেশে ডানা পাঠায় দিচ্ছি। মানে অজুহাত আর কি। না যেন আসতে পারে কেউ। হা হা। আর সেই থেকে আমি পরীই হয়ে গেলাম। তবে এক যুগেরও বেশি পার হয়েছে সেই পরী আপু ডাকা মানুষগুলোও হারিয়ে গেছে তাই পরী আপু এখন পরী থেকে ডাইনী হবার পথে। হা হা তবুও অপু ভাইয়ার কাছে আমি পরী আপুই আছি। যদিও পরী আপু নামটাই হারিয়ে যেতে বসেছে আজ।
যাইহোক এরপর তোমার আরেক পোস্ট এলো। এই পোস্টের পর তো আমার সাথে কত মানুষের কত রাগ। কারনটা ছিলো তারা আমাকে এত্ত ভালোবাসে তবুও শুধু অপু কেনো ??? হা হা সেই পোস্ট শায়মা আপুর পরীরাজ্যে আমার বিচরন !! লিঙ্কগুলো সব দিচ্ছি আমি শুভভাইয়ু মিররমনি আর চুয়াত্তর ভাইয়া আর ঢুকিচেপা ভাইয়ার জন্য। Click This Link ৩০০তম পোষ্টে আমার ভার্চুয়াল জগতের পছন্দের কিছু মানুষের কথা ! !! এই ভালোলাগার মানুষগুলোর মধ্যেও সবার আগে কিন্তু তুমি আমার নামই দিয়েছিলে। যেন এটাই ছিলো নিয়ম।
২০১৩ তে এসে তুমি বিড়ালের উপর আসক্ত হয়ে যাও। বিড়ালের পোস্ট আর ছবিতে সয়লাব হয়ে থাকতে। তখন ধীরেধীরে ব্লগ থেকে সরে যেতে থাকো। ফেসবুক তোমাকে আছন্ন করে। ব্লগ থেকে সবাই একটু করে সরে যেতে থাকে। তবে তোমার একটা পোস্টের কথা খুব মনে পড়ে। Click This Link ফানপোষ্টঃ বাসর ঘরে কোন ব্লগার কি করবেন ....আহা কি সব মজার দিনগুলি ছিলো সে সব। কাভা ভাইয়া তখনও বিয়েও করেনি। মডুও হয়নি মনে হয়। আরেকটা ছিলো ফানপোস্টঃ সামুর ব্লগারদের ড্রাফটে থাকা গোপন পোস্ট গুলো প্রকাশ করে দিলাম আজ হা হা সত্যিই স্মৃতি তুমি বেদনা। Click This Link অজানা মেলায় প্রকাশিত ব্লগারদের বেস্ট সেলার কয়েকটি বই !
অপু ভাইয়া আজ যারা তোমাকে চেনে এইখানে? কতটুকু চেনে বা জানে? আমাদের সেই শত শত রাত দিনের ইতিহাস আমাদের নানা ঘটনা অঘটনার মধ্য দিয়ে বয়ে চলা দিন, তিল তিল করে চিনে নেবার গল্প কি জানবে আজকের এই নতুন দিনের মানুষেরা? এই যে তোমাকে চিনেছি নানা রুপে।
এই যে তুমি ছিলে এক বিষন্ন বালক।
টিয়াপাখির স্মৃতি বুকে নিয়ে হেঁটে গেছো
একান্ত একাকী ব্লগের নিরালায়......
ভালোবাসার আবেশে বুদ হয়ে লিখে গেছো
অসংখ্য অধরা প্রেমের কাব্যকথা।
তোমার বিবাগী মন শান্ত হয়নি,পায়নি পরিতৃপ্তি
কোনো এক অপ্রাপ্তির বেড়াজালে।
চারিদিকে অশান্তির দাবানল শেষে
একটু আশ্রয়, একটু প্রশয়ের জন্য
স্বর্ণলতা হয়ে জড়িয়েছো মহীরুহ
তবু খুলে গেছে শিথিল বাঁধন...
চলে গেছে যে যার পথে যার যার মত......
এই বৃহৎ বিধুর বিশ্বযোগে.....
মানুষ তো এমনই হয়।
পথের মতন........
চলে যায় বহুদূরে.......
মানুষ তো এমনই হয়
নদীর মতন......
বয়ে যায় দূর থেকে দূরে
দৃষ্টির অগোচরে ......
শুধু হৃদয়ের তারে জেগে থাকে
সাইকেলের টুং টাং অতীতের সূর......
অনেকগুলো পথ হেঁটে এসে আজ তুমি অনেকটাই বদলে যাওয়া অপুভাইয়া। সেই পিচকি সহজ সারল্যতা এখন অনেকটাই পরিপক্ক। জানো তোমাকে আমি এতটাই সঠিক জানি যে মনে হয় তুমি জেনে বুঝে কোনো ভুল কখনও করতেই পারো না। অযথা কারো সাথে লেগে যাবার মতনও না তুমি। তোমাকে চিনি বহু বহু দিন। এতদিনের অভিজ্ঞতা অবজারভেশনের একটা মূল্য আছে না? সেই অপু যেমন বদলে গেছে, তার দিদি দূর্গাও অনেকটাই বদলেছে ঠিক তোমার আর আমার মত। তবুও চোখ বন্ধ করে বলতে পারি তুমি একজন আমার দেখা খাঁটি মানুষ। তোমাকে যে কেউ বিশ্বাস করতে পারে নির্দ্বিধায়।
অনেক ভালোবাসা তোমার জন্য। তোমার জীবনের সকল আশা পরিপূর্ণ হোক। জীবনে সফল হও তুমি.....সকলখানেই সকল কাজেই।
পরী আপু....
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৫৮