আজও বইয়ের ভিতর একটা চিঠি পেয়েছে দিশা।এক সপ্তাহ যাবত্ তার বইয়ের ভেতর কে যেনো একটা করে চিঠি রেখে যায়।কলেজ পড়ুয়া একটা মেয়ে কেমন চিঠি পেতে পারে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।দিশা অনেক চেষ্টা করেছে কে চিঠি দেয় সেটা বের করতে।কিন্তু পারে নি।যে চিঠি দিচ্ছে সে অনেক কৌশলী বলা যায়।হাতে না লিখে টাইপ করা চিঠি দিচ্ছে।যাতে করে বের না করা যায় চিঠি প্রেরক মালিককে।
দিশা এককথায় বলতে গেলে বিরক্ত হচ্ছে এভাবে চিঠি পেতে পেতে।যেই চিঠি পাঠাক না কেনো সে সামনে এসে বললেই তো হয়।সে তোর আর বাঘ ভাল্লুক না যে কাঁচা খেয়ে ফেলবে।
টানা দুই সপ্তাহ চিঠি পাওয়ার পর আর কোন চিঠি পেলো না দিশা।একটু অবাকই হলো সে।হটাত্ করে চিঠি দেয়া অফ হয়ে গেলো কেনো!একবার দিশা ভাবলো আচ্ছা তার কোন বান্ধবী তার সাথে মজা করছে না তো!আবার ভাবলো ধ্যাত্,এটা যে একটা ছেলের কাজ সেটা বোঝাই যাচ্ছে।যে করেই হোক ছেলেটাকে খুঁজে বের করতে হবে।
সুব্রত চিঠি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে ইচ্ছে করেই।চিঠি না পেলে দিশার রিএকশনটা দেখার জন্যই চিঠি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে সে।কষ্টও লাগছে তার।সামনা সামনি গিয়ে বলার সাহস পাচ্ছে না।ভয় হয়।দিশা যদি তাকে ফিরিয়ে দেয়!
সময় গড়িয়ে যায়।দিশার বইয়ের মাঝে চিঠির আর দেখা মেলে না।প্রতিটা দিন দিশা বাসায় এসেই বই চেক করে কোন চিঠি আছে কিনা!কিন্তু তাকে হতাশ হতে হয়।কেমন যেনো একটা অস্থিরতা কাজ করে তার মনে।কে দিতে পারে চিঠিগুলো!দিশা নিজেই অবাক হচ্ছে নিজের আচরণে।অচেনা একজনের চিঠির জন্য সে প্রতিদিন আশায় থাকে কেনো!তবে কি দিশা অচেনা ছেলেটাকে ভালোবেসে ফেলেছে।"ধ্যাত্,কি সব আবোল তাবোল ভাবছি।চিঠি যে দিয়েছে দিক।তাতে আমার কি!"যতই মনকে এই কথা বলুক না কেনো ,দিশা তারপরও প্রতিদিন চিঠির অপেক্ষায় থাকে।এই বুঝি বই খুললে চিঠির দেখা মিলবে!
দেখতে দেখতে কলেজের বিদায় অনুষ্টান এসে পড়ে।সুব্রত ঠিক করে সর্বশেষ চিঠিটা দিশাকে দিয়ে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে।লাস্ট চিঠিটা হাতেই লিখবে বলে ঠিক কর সুব্রত।
"দিশা, তোমার নামের পূর্ব কিছু একটা সম্বোধন সূচক শব্দ বসানোর ইচ্ছা ছিলো খুব।কিন্তু বামুন হয়ে চাঁদের দিকে যে হাত বাড়ানো ঠিক না সেটা কে না জানে!এটাই আমার শেষ চিঠি হবে তোমার কাছে।আর কোনদিন কেউ তোমাকে চিঠি লিখবে না সুব্রত নামে।চিনতে পেরেছো নিশ্চয়ই?হ্যাঁ,চিনারই কথা।ক্লাসের সবচেয়ে চুপচাপ ছেলেটিকে কে না চিনে!নিজেকে বামুনের সাথে তুলনা করেছি কেনো জানো!আমি আসলে কথা বলতে পারি না।বাক প্রতিবন্ধী আমি।জানি তুমি হাসবে।"বাক প্রতিবন্ধী হয়ে এসেছে আমাকে ভালোবাসতে।"ভালোবাসাটা তো অন্যায় কিছু না।কতজনই তো ভালোবাসে।কেউ পায় কেউ পায় না।একতরফা ভালোবাসা নিয়ে নীরবে দিন কাটানো মানুষদের মধ্যে আমিও একজন।অনেক স্বপ্ন ছিলো।আমি একজনকে ভালোবাসবো।কাঁপা কাঁপা গলায় তার সামনে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার কথা বলবো।স্বপ্ন দেখা যায়।বাস্তবে রুপান্তরিত সবার ভাগ্যে হয় না।
তোমার হাসির কোন তুলনা হয় না।এই হাসিটা ধরে রেখো সবসময়।আর আজকে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে নীল শাড়িতে।
ভালো থেকো দিশা।"
বান্ধবীর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো দিশা।ছোট্ট একটা ছেলে দিশার কাছে এসে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলে,
-"আফনের লাইগা পাঠাইছে।" -"কে পাঠিয়েছে?" -"তা তো কইবার পারি না।আপনেরে দেহাইয়া খালি কইছে এইটা দিতে।" -"আচ্ছা,তুই যা।"
দিশার বান্ধবীরা ইতোমধ্যে খোঁচাখুচি শুরু করে দিয়েছে চিঠিটা পড়ার জন্য।খাম ছিড়ে চিঠি খুলে দিশা একটু অবাকই হলো হাতে লেখা চিঠি দেখে।পুরো চিঠি পড়ে দিশা একেবারে চুপ হয়ে গেলো।বান্ধবীদের বসতে বলে হল রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।
পুরো ক্যাম্পাসের কোথাও সুব্রতকে পাওয়া গেলো না।দিশার কেনো যেনো খুব কান্না পাচ্ছে।ডান হাতে চিঠি রেখে কলেজের এক মাথা থেকে অপর মাথা ছুটে বেড়াতে লাগলো।কিন্তু কোথাও সুব্রতকে দেখতে পেলো না।দিশা এবার সত্যিই কেঁদে দিলো।নীরবে অশ্রুগুলো ঝড়তে লাগলো চোখ থেকে।
এ কান্না কিসের তা কারোরই জানা নেই।
"ভালোবাসা এসে উঁকি দিয়ে যায়, কারো চোখে ধরা পড়ে কারো পড়ে না। তবুও খুঁজে যায় ভালোবাসা ভেসে আশার ভেলায়।"
(সমাপ্ত)