"স্বাদ রেস্টুরেন্ট"
ফার্মগেট এলাকার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ একটি রেস্টুরেন্ট। আর আমি এই হোটেলের মালিক।রেস্টুরেন্ট খোলার চিন্তাটা আসে বেশ হটাত করেই।সবচেয়ে সেফ এবং লাভবান ব্যাবসাও বলা যায় এটাকে।প্রথম দুই মাস তেমন একটা লাভ হয় নি।আস্তে আস্তে কদর বাড়তে থাকে আমার রেস্টুরেন্টের।এবং পুরো ঢাকা শহরে সবচেয়ে জনপ্রিয় রেস্তোরা এখন আমার "স্বাদ রেস্টুরেন্ট"।
খাবারের মানের দিকে আমার বরাবরই নজর বেশি।সেই সাথে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও খেয়াল রাখি।বিশেষ করে রান্না ঘর।আমার এখানে মোট ১৬ জন কাজ করে ওয়েটার সহ।সবাই বেশ বিশ্বস্তও বলা চলে।এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসে নি খাবারের মান নিয়ে।
সব রকমের খাবারের আইটেমই পাওয়া যায় এখানে।এখানে মানুষ যেমন পরিবার বা বন্ধু বান্ধব সহ খেতে আসে তেমনি ভাবে বিরামহীন চলে পার্সেলের অর্ডার।ক্যাশিয়ারে বসে বসে টাকা গনি আর মুচকি হাসি।ব্যাবসাটা লাভজনকই বটে।
এভাবে প্রায় বছর তিনেক কেটে যায়।আশেপাশের রেস্টুরেন্ট গুলো আমার সাফল্যে ততদিনে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে উঠেছে।নানান রকম চমকপ্রদ অফার করেও কাস্টোমার টানতে পারে নি।আমি হাসি তাদের কান্ড-কারখানা দেখে।
♦♣♦
-জায়েদ ভাই আপনার তারিফ করতে হয়।আন্ডারওয়ার্ল্ড জগতে তো আপনি একজন লিজেন্ড বলা চলে।
-আন্ডারওয়ার্ল্ডের লিজেন্ড!!বেশ বেমানান।
-সে যাই হোক।বস বলেছে সাপ্লাই বাড়াতে।
-আমার কোন সমস্যা নেই।সাপ্লাই যত বেশি হবে আমার লাভ তত বেশি।বসকে বলে দিও সাপ্লাই বাড়াতে।
-ওকে।
আগুন্তুক একটা কালো ব্রিফকেস এগিয়ে দিলো জায়েদের দিকে।
-এখানে ৫ আছে।আপনার দাবির চেয়ে ৫০ লাখ বেশি।বস খুশি হয়ে দিয়েছে।
-ওকে।যাই এখন।
-জায়েদ ভাই,একটা প্রশ্ন ছিলো।
-হুম বলো।
-আপনার ব্যাবসার রহস্যটা কি?ওপেনলি ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অথচ কেউ কিছু টের পাচ্ছে না?
-কেনো আপনি কি চান আমি ধরা খাই?
-না না আমি তা বলছি না।আমি আসলে আপনার ব্যাবসা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম।
মুচকি হাসলো জায়েদ আগুন্তুকের দিকে তাকিয়ে।মানিব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-এই ঠিকানায় চলে আসেন।সব বুঝতে পারবেন।
-আমি কালই যাচ্ছি।
-ওকে আমি তাহলে যাই এখন।আমার প্যাকেটগুলো কোথায়?
-গাড়িতে তুলে দেয়া হয়েছে।
-গুড।আপনার অপেক্ষায় রইলাম।
-শিউর।
আগুন্তুকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জায়েদ বেরিয়ে পড়লো।মুখের কোণে বাকা একটা হাসি ফুটে উঠলো আগুন্তুকের কথা ভেবে।
♦♣♦
পরদিন সকাল ১০ টায় কার্ডে দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী চলে গেলো আগুন্তুক।
"স্বাদ রেস্টুরেন্ট"
আগুন্তুক একটু অবাকই হলো।জায়েদ ভাই এখানে ডাকলো কেনো?হোটেলে ঢুকেই ক্যাশিয়ারে জায়েদকে দেখেই চমকে উঠলো আগুন্তুক।
-আপনি ক্যাশিয়ারে!
মুচকি হাসলাম ওর দিকে তাকিয়ে।অবাক হওয়াটা অস্বাভিক কিছু না।
-হুম।চলুন ভিতরে রুমে গিয়ে বসি।খেতে খেতে কথা বলা যাবে।কি খাবেন বলুন।
-আপনি যেটা বলেন।
-ওকে।তাহলে রুটি আর মাংস আর ডিম দিয়ে রান্না করা সবজির কথা বলি।
-ওকে।
ঈশারায় আমার পেছন পেছন আসতে বললাম।রান্না ঘর দিয়ে ঢুকে পেছনে চলে এলাম।আমার পার্সোনাল রুম আছে একটা। রুমে ঢুকে ছোট্ট টেবিলটায় বসতে বললাম।খাবার আসুক আগে।তারপর দড়জা লাগানো যাবে।
পাচ মিনিটের মধ্যেই খাবার চলে আসলো। ওয়েটার যাওয়ার পর দড়জা লাগিয়ে খেতে বসলাম।
-আপনাকে কি নামে ডাকবো?বসে দেয়া 'MD' নামে নাকি..
-আমাকে দিদার নামেই ডাকুন।
-বেশ।নিন খাওয়া শুরু করুন।
রুটির এক টুকরো ছিড়ে ভাজির সাথে মাখিয়ে মুখে পুরে নিল দিদার।
-স্বাদটা দারুণ।এই দারুণ খাবারের রহস্যটা কি জায়েদ ভাই।
-খেতে থাকুন।নিজেই বুঝে যাবেন।
দিদার বেশ ধীরে সুস্থেই খাচ্ছে।একটু পর পরই খাবারের প্রশংসায় মেতে উঠছে।হটাত খাওয়া থামিয়ে রুটির একটা টুকরো নাকের কাছে নিয়ে শুকতে লাগলো।অবাক চোখ জোড়া নিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে।
-আপনি খাবারের সাথে...
মুচকি হেসে বললাম,
-হুম,ঠিকই ধরেছেন। আমি পাউডারটা আই মিন কোকেনটা খাবের সাথেই মিশাই।
দিদারের চোখ জোড়া বলে দিচ্ছে সে এরকম কোন কিছু আশা করে নি।
-একটু বুঝিয়ে বলুন।
-বলছি।খাবারের সাথে কোকেন মেশানোর পর খাবারের স্বাদে কোন পরিবর্তন আসে না।যখন কেউ কোকেন মেশানো খাবারটা খাবে তখন তার ঐ মূহুর্তে খাবারেরর প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণ তৈরি হবে।কিন্তু সেটা যেদিন খাবে সেদিনের জন্যই। নেশাটা কাজ করবে যখন সে নিয়মিত এই কোকেন দেয়া খাবারটা খাবে।আর সে খাবারটা নিয়মিত তখনই খাবে যখন স্বাদটা অন্য সব কিছুর থেকে আলাদ হবে।মাস্টার শেফদের রেখেছি স্বাদের ভিন্নতা আনার জন্য।আর কোকেন মেশানোর কাজ আমার লোকরাই করে।এভাবে আস্তে আস্তে তার কোকেনের নেশা পেয়ে বসবে।এক সময় সে শুধুই কোকেন সেবন করবে।অর্থ্যাৎ সে পুরোপুরি কোকেনে আকৃষ্ট হবে।
-ভাবাই যায় না।ধরা খাওয়ার কোন ভয় নেই।
-হুম।
দিদারের খাওয়া শেষ হয়ে গেছে ততক্ষণে। হাত ধোয়ার জন্য বেসিনের দিকে এগিয়ে গেলো।
আমিও বসা থেকে উঠে দাড়ালাম।হাতে থাকা কাটা চামচটা পূর্ণ জোড় দিয়ে বসিয়ে দিলাম দিদারের গলায়।দিদারের চোখ জোড়া বিস্ফোরিত হয়ে গেছে।আরো কয়েক ঘা বসিয়ে দিলাম।মুখটা আগেই চেপে ধরেছিলাম যাতে চিৎকার করতে না পারে।আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে এলো শরীরটা।
কাপড় তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে চিন্তা করতে লাগলাম লাশটাকে কোথায় ফেলা যায়।হটাত মাথায় একটা চিন্তা আসতেই মুচকি হাসলাম।
কালকে একটা স্পেশাল রেসিপি হিসেবে লাশটাকে ব্যবহার করলে কেমন হয়?
(সমাপ্ত)
[বিঃদ্রঃ -কোকেনের থিওরিটা বাস্তবিক আছে কিনা জানা নেই।নিজের মত করে লিখেছি। ]
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪৭