somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"স্বপ্ন" (গাঁজাখুরি আধভৌতিক গল্প)

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"রুপা,তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।দেরি হয়ে যাচ্ছে।ছেলেটা এসে বসে থাকবে।"

রুপা ড্রেসিং টেবিলের সামনে অনেক্ষণ ধরে বসে আছে।সাজতে ইচ্ছে করছে না একটুও ওর।আসল কথা হলো ওর যাওয়ার ইচ্ছে করছে না।যাচ্ছে শুধু মায়ের কথায়।না গেলে মা কষ্ট পাবে।মাকে কষ্ট দিলে ভালো লাগে না ওর।সেই ছোট বেলা থেকে মা ই আগলে রেখেছে ওকে।কখনো বাবার অভাব বুঝতে দেয় নি।

সপ্তাহ খানেক ধরেই মা একেকবার একেক ছেলের ছবি নিয়ে এসে রুপার সামনে রাখে।রুপাকে পছন্দ করতে বলে।রুপা অনিচ্ছা সত্বেও ছবিগুলো দেখে।কাউকেই পছন্দ হয় না ওর।

গতকালও মা একটা ছেলের ছবি নিয়ে এসেছিলো।রূপা অনিচ্চা সত্বেও ছবিটা দেখে।ছবিটার দিকে তাকিয়ে কেনো যেনো থমকে যায় ওর।এ কি করে সম্ভব!

রুপাকে চুপ করে থাকতে দেখে ওর মা ভাবে রুপার হয়তো ছেলেটাকে পছন্দ হয়েছে।

"ছেলেটা অনেক সুন্দর তাই না?তোর পছন্দ হয়েছে?"

মায়ের কথায় বাস্তবে ফিরে আসে রুপা।বাস্তবে ফিরলেও ওর চোখ ছবিটা থেকে সরলো না।আমাদের সমাজে একটা কথা প্রচলিত আছে।মেয়েদের নীরবতাকে সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।রুপার মা ও সেটাই ধরে নিলেন মেয়ের নিশ্চুপতা দেখে।

রুপা ঠিক করলো কোন ধরনের সাজগোজই করবে না।সাধারণ লুকেই যাবে।স্বপ্নের মত ছেলেটা যদি বাস্তবে হয় তবে ছেলেটা কখনোই সাজ-গোজ পছন্দ করবে না।স্বপ্নের কথা মনে হতেই কাজলের কথা মনে পড়লো।স্বপ্নের ছেলেটা চোখে কাজল দেয়া পছন্দ করে।দেরি না করে চোখে কাজল দিয়ে তৈরি হয়ে নিলো সে।

রুপাকে ওর মা ঠিকানা দিয়ে দিয়েছে।অর্থাৎ রুপাকে একাই যেতে হবে।এই প্রথম কোন ছেলের সাথে একা দেখা করতে যাচ্ছে ও।স্বাভাবিক ভাবেই একটু নার্ভাস ফিল করছে ও।

একটা রেস্টুরেন্টের ঠিকানা দেয়া হয়েছে ওকে।রেস্টুরেন্টের ভিতর ঢুকে খুজতে লাগলো ছেলেটাকে।একটু খুজতেই পেয়ে গেলো।একেবারে কোণার এক টেবিলে বসে আছে।চোখ বাইরের দিকে।

রুপা দুরুদুরু বুকে টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।বার কয়েক ঢোক গিলে ডাক দিলো।

"এক্সকিউজ মি।"

রুপার কথায় ছেলেটা মুখ ফিরে তাকালো।এবার আরো চমকে উঠলো ও।সেই চেহারা,সেই তাকানোর ভঙি,সেই চশমা!এতো মিল কিভাবে?স্বপ্ন কি কখনো বাস্তব হয়ে সামনে আসে?

"জি বলুন?"
"আপনি কি সাঈদ?"
"জি।"
"আপনার সাথে আমার দেখা হওয়ার কথা আজ।"
"আপনি রুপা তাই না?"

মুচকি হেসে ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো।ছেলেটার হাসি দেখে রুপা আবারো অবাক হলো।সেই হাসি!

"দাঁড়িয়ে কেনো আছেন?বসুন প্লিজ।

মন্ত্রমুগ্ধের মত বসে পড়লো রুপা।তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে।অবিশ্বাস্য লাগছে ওর সবকিছু।

"কি খাবেন বলুন।খেতে খেতে কথা বলা যাবে।"
"আপনিই অর্ডার করুন।"
"আপনি পুডিং খেতে অনেক পছন্দ করেন তাই না?"

রুপা আবারো অবাক হলো।তার যে পুডিং পছন্দের এই কথা তো শুধু সে স্বপ্নের ছেলেটাকেই বলেছে।তবে কি..

রুপা কাপা কাপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,

"আমার পুডিং পছন্দ এটা আপনি জানলেন কিভাবে?"
"সেটা না হয় খেতে খেতেই বলি।"

মুচকি হেসে ছেলেটা ওয়েটারকে ডাকলো।অর্ডার দিয়ে রুপার দিকে ফিরলো ছেলেটা।

"হ্যালো,মিস রুপা।"
"জি বলুন।"
"আপনার প্রশ্নের উত্তর জানতে চান।"
"হুম,বলুন।"
"আমার উত্তরটা আপনার বিশ্বাস নাও হতে পারে।"
"কেনো?"
"কারণ এই উত্তরের কোন ব্যাখ্যা নেই আমার কাছে।"

রুপা বুঝতে পারছে না ছেলেটা কি বলতে চাইছে।ওর মনে হচ্ছে ও এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।

"আপনি বলুন।"
"আমি প্রতি সপ্তাহের দুটো নির্দিষ্ট দিনে একটা স্বপ্ন দেখি।আমি একটা মেয়ের সাথে কথা বলি।মেয়েটাকে আমি বাস্তবে কোনদিন দেখি নি।সেই মেয়েটা হচ্ছেন আপনি।"

রুপা মনে করেছিলো ও একাই শুধু স্বপ্ন দেখে।ছেলেটার কথা শুনে অবাকই হলো।কাপা কাপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,

"আপনি কোন দুই দিন স্বপ্ন দেখেন?"
"রবিবার আর শুক্রবার।"

রুপা এবার আর নিজের বিস্ময় আটকাতে পারলো না।কারণ ওর সামনে বসা ছেলেটাকে ও এই দুই দিনই স্বপ্নে দেখে।

"আমিও একটা স্বপ্ন দেখি এই দুই দিন।আর যে ছেলেটাকে স্বপ্ন দেখি সেটা আপনি।"
"এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে?"

রুপা জানে না এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে।এখনো ওর কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে।

"এক্সকিউজ মি,আপনি কি রুপা?

পেছন থেকে গলার আওয়াজে চমকে উঠলো রুপা।পেছন ঘুরে তাকালো।সুদর্শন ফর্মাল ড্রেসে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে।

"জি,আমিই রুপা।আপনাকে তো চিনলাম না।"
"আজকে আমার সাথে আপনার দেখা হওয়ার কথা।আমাদের বিয়ের ব্যাপারে।"

রুপা খানিকটা অবাক হলো।মা কি কোন ভুল করেছে?

"আপনার নাম কি?"
"সাঈদ।"

চমকে উঠলো রুপা।একই নাম দুজনের কি করে হয়?

"কিন্তু আমি তো সাঈদের সাথেই দেখা করতে এসেছি।"

কথাটা বলেই সামনের দিকে ইশারা করলো রুপা।কিন্তু সামনে কেউ বসে নেই।চেয়ারটা খালি পড়ে আছে।

কি মনে হতে পার্স থেকে মায়ের দেয়া ছবিটা বের করলো।এবার ছবির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো ও।মাথা ঘুরাতে লাগলো ওর।ছবিটা টেবিলের ওপর রেখেই জ্ঞান হারালো ও।জ্ঞান হারানোর ঠিক আগ মূহুর্তে রুপা চোখ ছবিটার ওপর পড়লো।ছবিটাতে একটু আগে যে ছেলেটা ওকে ডাক দিয়েছে সেই ছেলেটার চেহারা ভাসছে।

তাহলে ও এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলো?

রুপার পরে যাওয়া দেখে ঘাবড়ে গেলো সাঈদ।

"এক্সকিউজ মি, আপনি ঠিক আছেন তো?হ্যালো,আপনি কথা বলছেন না যে?"

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:১৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×