-তোমাকে না বলেছি আমাকে ফোন দিবে না।তারপরো ফোন দাও কেনো??
-তোমার কন্ঠস্বর শোনার জন্য।
-কিন্তু,তোমাকে মনে রাখতে হবে তুমি বিবাহিত।বিয়ের পর আরেক ছেলের সাথে কথা বলাটা মানায় না।তুমি তোমার স্বামীকে ঠকাচ্ছো।তোমার শশুড় বাড়ির লোকজন জানতে পারলে সমস্যা হবে তোমার। আমার সাথে কথা বলতে গিয়ে তোমার কোন সমস্যা হোক তা আমি চাই না।
-আর কত স্যাক্রিফাইস করবে আমার জন্য?কিভাবে পারো তুমি??
-কেনো স্যাক্রিফাইস করি তা তুমি বেশ ভালো করেই জানো।তুমি ফোন রাখলে অনেক খুশি হবো আমি।
-সারাজীবন একসাথে থাকার স্বপ্ন হটাতই ভেঙ্গে গেছে।তোমার সাথে কথা না বললে আমার ঘুম আসে না এখনো।
-তিশা,এসব কথা এখন মানায় না।তুমি এখন অন্যের ঘরণী।
-অনেক তো স্যাক্রিফাইস করেছো আমার জন্য।একটা শেষ অনুরোধ রাখবে?
-যদি রাখার মত হয়।
-আমি সেসব শুনতে চাই না।তুমি আমাকে সুখী দেখতে চাও।আমার সুখের কথা চিন্তা করে এই শেষ অনুরোধটা রাখো প্লিজজ।
-আচ্ছা বলো।
-আমি তোমাকে সপ্তাহে একবার ফোন দিবো।পাচ মিনিটের জন্য।না করো না প্লিজ।
কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলাম কিছুক্ষণ।তিশা যেমন আমার কন্ঠস্বর শোনার জন্য উতলা থাকে সেরকম অবস্থা আমারো।কিন্তু,তিশার হটাত বিয়ে হয়ে যাওয়ায় নিজেকে সরিয়ে আনি।কিন্তু তিশা পারে নি।
-কি হলো চুপ করে আছো কেনো??
-ঠিকাছে।আমি রাজী।
-থ্যাংকিউ।
-ওয়েলকাম।এখন ফোন রাখো।
-আরেকটু কথা বলি?
-না।তুমি আমার সাথে কথা বলছো এটা ভালো দেখাচ্ছে না।ঠিকাছে,আমিই ফোন রাখছি।
তিশার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করলাম না।লাইন কেটে দিলাম।বুক চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো।
♦
তিশার সাথে আমার রিলেশনের তখন ৩ বছর ৬ মাস চলছে।অনেক ভালো সময় কাটাচ্ছিলাম আমরা।হুট করেই তিশা জানালো ওর বিয়ে নিয়ে বাসায় আলোচনা হচ্ছে।কথাটা শুনেই চমকে উঠি আমি।আমি তখন সবে মাত্র ৪র্থ ইয়ারে পড়ি।ইন্টার্নি সহ আরো দুই বছর লাগবে।এমন অবস্থায় কি করবো আমি?বাসায় জানাতে পারবো না এখন।যদি ইন্টার্ন করতাম তাহলে একটা কথা ছিলো।কিন্তু এখন কিভাবে....
শেষ পর্যন্ত ওর বিয়ে হয়েই যায়।সেদিন কেমন লাগছিলো তা আমার পক্ষে বোঝানো অসম্ভব।মনে হচ্ছিলো কি যেনো একটা টান দিয়ে বের করে নিচ্ছে আমার শরীর থেকে।
তিশাকে বউ সাজে দেখার আমার খুব ইচ্ছে ছিলো।কথা বলার মাঝে আমরা অনেক সময়ই বিয়ের সাজ-পোশাক নিয়ে আলোচনা করতাম।কত রঙ্গিন একটা স্বপ্ন ছিলো।সেই স্বপ্নে আমি সাদাকালো হয়ে গেছি।
তিশার বিয়েতে গিয়েছিলাম আমি ওকে এক নজর দেখার জন্য।ওর সামনে যাই নি।আমাকে দেখে ও বিচলিত হয়ে পড়ুক বা কেঁদে দিক তা চাই নি।লুকিয়ে একনজর দেখেই চলে এসেছি।
বিয়ের কয়েক দিন পরেই তিশা ফোন করতে থাকে।আমি ফোন ধরতে চাইতাম না।কিন্তু তিশা রিং দিয়েই যেতো যতক্ষণ না ধরতাম।প্রায় বিশ বার রিং হওয়ার পর ধরতাম।কেনো ফোন দিয়েছে জিজ্ঞেস করলে প্রতিবার একই কথা বলতো,"তোমার কন্ঠস্বর শোনার জন্য"।
কাছের বন্ধু একটাই আমার।ওকে সব বলার পর ও বলেছিলো নাম্বার ব্লক করে দিতে।কিন্তু,নাম্বার ব্লক করলে হিতে বিপরীত হয়ে যেতো।ও তখন আমার সাথে দেখা করার জন্য চলে আসতো।তাই আর নাম্বার চেঞ্জ করি নি।তাছাড়া নাম্বারটা অনেকের কাছেই আছে।বিপদে-আপদে কেউ ফোন দিয়ে না পেলে ব্যাপারটা আরো খারাপ দেখাবে।তাই বাধ্য হয়েই তিশার শর্তে রাজি হই।
♦_♦_♦_♦
তিশার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।এক মাস হয়ে গেলো সাঈদের সাথে কথা বলতে পারছে না।ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।যত নাম্বার ছিলো সাঈদের সব নাম্বারেই ট্রাই করেছে।কিন্তু কোন লাভ হয় নি।সাঈদের বন্ধু মহলের পরিচিত যারা আছে তারাও কেউ কিছু বলতে পারে নি।
চোখ প্রাচীর ভেঙ্গে নোনা জল বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে।অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করে রেখেছে নিজেকে। হটাত কলিং বেলের আওয়াজে সচকিত হয়ে ওঠে সে।
চোখের পানি মুছে দড়জা খুলে কুরিয়ার বয়কে দেখতে পায় তিশা।তার নামে পার্সেল পাঠিয়েছে কে আবার?প্যাকেটের ওপর কোন ঠিকানাও লেখা নেই।কুরিয়ার বয় প্যাকেটটা দিয়েই চকে গেছে।সাইনও নেয় নি।
দড়জা বন্ধ করে রুমে এসে প্যাকেট খুলে একটা চিঠি দেখতে পায় তিশা।লেখার দিকে তাকিয়েই চমকে ওঠে সে।এই লেখা তো সাঈদের লেখা।চিঠিটা পড়তে শুরু করে সে।
"তিশা,
আগে যখন তোমাকে চিঠি লিখতাম তখন তোমার নামের আগে বিভিন্ন বিশেষণ মূলক শব্দ বসাতাম।আজ আর বসালাম না।অবশ্য বসালে ভালো দেখাতো না।তোমার স্বামী যখন বসাবে তখন ভালো লাগবে।
তুমি নিশ্চই ভাবছো হটাত চিঠি পাঠানোর কি কারণ হতে পারে।তোমার সব কৌতুহল মিটিয়ে দিচ্ছি।
গত মাসে একটা এক্সিডেন্ট হয় আমার।প্রাণে বেচে গেলেও কিছু ক্ষতি হয়।তার মধ্যে একটা হলো তোমার প্রিয় জিনিসটা।বুঝতে পারছো নিশ্চই? তারপরো বলছি।এক্সিডেন্টে আমার ভোকাল কর্ড নষ্ট হয়ে যায় পুরোপুরি।এর মানে হচ্ছে আমি আর কথা বলতে পারবো না।
কষ্ট পাওয়াটা এখন আর শোভা পাবে না তোমার।শুধু শুধু কেদো না।শুধু শুধু বলছি এঈ জন্য যে,তুমি কাদলে কি আমার ভোকাল আবার ফেরত আসবে??
তুমি বলতে আমি তোমার জন্য সবসময় স্যাক্রিফাইস করেছি।আজ আমার জন্য একটা স্যাক্রিফাইস করো।আমার কথা তুমি ভুলে যাবে।তোমার একটা সুখের সংসার আছে।সেই সংসারে নতুন অতিথি আসবে।সেই অতিথিই হবে তোমার বাকী জীবনের স্বপ্ন।এই স্বপ্ন নিয়েই বাচতে হবে তোমাকে।
তোমাকে আমি মন থেকে সুখী দেখতে চাই।তীমার ধ্যান-জ্ঞান শুধুই তোমার সংসার নিয়ে হবে। জোড় করে নয়,মন থেকে ভালোবাসো তোমার বর্তমানকে।আমি জানি তুমি পারবেই।
আমাকে খোজার আর চেষ্টা করো না।তাহলে অযথাই কষ্ট পাবে।
ভালো থেকো।"
চিঠিটা নোনা জলে প্রায় ভিজে গেছে।লেখাগুলোও মুছে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।তিশার চোখের নোনা জল চিঠিটাকে ছিড়ে ফেলছে বেশ ধীরে ধীরে.....
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪৬