বেশ কয়েকদিন ধরেই মন মেজাজ ভালো না আমার।চুপ চাপ থাকি বেশিরভাগ সময়।বন্ধুরা কিছু বললে মুচকি একটা হাসি দিই শুধু।সবার সাথেই কথা বলা কমিয়ে দিয়েছি।বাসায় এসে নিজের রুমে ঢুকেই দড়জা লাগিয়ে দিই।যখন খাবার সময় হয় তখন দড়জা খুলি শুধু।বাসায় কেউ থাকে না এখন।একজন রুমমেট ছিলো সেও চলে গেছে ভার্সিটি ছুটি হওয়াতে।আমি ইচ্ছা করলেই চলে যেতে পারতাম।কিন্তু যাচ্ছি না একটা কারণেই।
"হামিংবার্ড"
শব্দটা পাখির নাম হলেও এটা একটা মানুষের ছদ্ম নাম।যাকে আমার খুন করতে হবে দেখতে পাওয়ার সাথেই।উপর মহল থেকে সেরকমই নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমাকে।নির্দেশটা শুনে কয়েক প্রস্থ গালি দিয়েছি মনে মনে নরম গদিতে বসে থাকা মাথা মোটা গুলোকে।"শালার মাথা মোটা বলদ গুলা!!!দেখলেই মেরে ফেলতে হবে।শালার মারার পর তো নিজের জান নিজেকেই বাচাতে হবে।মাথা মোটা বলদগুলোতো আর সেটা বুঝবে না।নির্দেশ দিয়েই খালাস।শালার......... ফাকার!!!"
"হামিং বার্ড" লোকটা খুবই সাধারণ বাইরে থেকে।লোকটার ছবি যখন আমাকে প্রথম দেখানো হয় তখন চমকে উঠেছিলাম খানিকটা।এতো সহজ-সরল একটা লোককে কেনো মারতে হবে সেটা মাথায় কিছুতেই ঢুকছিলো না।বস যখন বিস্তারিত বললো তখন অনেকটা চমকে গিয়েছিলাম।এরকম একটা সাধা-সিধে লোক মানুষ মারার গবেষণার কাজ করছে!!
লোকটা নাকি "ফাজানুকা" নামের কি একটা ভাইরাস বানিয়েছে।আর এই ভাইরাসটা নাকি সে বানিয়েছে ছোট ছোট বাচ্চাদের মারার জন্য।
ভাইরাসের ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করতেই শিউরে উঠলাম।"ফাজানুকা" ভাইরাস যেকোন একজনের নিঃশ্বাসের সংস্পর্শে আসলেই সে সাথে সাথেই পড়ে যাবে।শরীর কাপতে থাকবে।আশেপাশে যারা থাকবে তারা যখন আক্রান্তের কাছে আসবে তখন তারাও আক্রান্ত হবে।এবং পাচ মিনিটের মাঝে আক্রান্ত সবাই মারা যাবে।এতটুকু শুনে মাথায় কিছুতেই ঢুকছিলো না ব্যাপারটা।কোন কারণ ছাড়াই এরকম একটা ভাইরাস বানানোর মানে কি!!!বসকে জিজ্ঞেস করতেই বস থামিয়ে দিলেন।বললেন আগে কাজে নামতে।সময়মত জানানো হবে সব।বেকে বসি আমি।পরে বাধ্য হয়ে বিস্তারিত বলে।
"হামিং বার্ড" এই ভাইরাসটা বানিয়েছে প্রেসিডেন্টকে মারার জন্য।শুনে টাস্কি খাই আমি।বাচ্চাদের মারার সাথে প্রেসিডেন্টের মারার সম্পর্ক কোথায়??
"হামিং বার্ড"র একটা ছেলে ছিলো যে মাত্র ৫ বছর বয়সেই মারা যায় লিউকেমিয়ায়।ছেলের চিকিতসার জন্য তেমন কোন সাহাজ্য না পেয়ে প্রেসিডেন্টের শরণাপন্ন হয় সে।প্রেসিডেন্ট তাকে আশ্বাস দিলেও পরে কোন সাহাজ্যই করে নি।বার বার যাওয়ার পরও প্রেসিডেন্ট কোন সাহাজ্য করে নি।টাকার অভাবে চিকিতসা না হওয়াতে ছেলেটা মারা চায়।রোখ চেপে যায় "হামিং বার্ড"র।পেশায় সাইন্টিস্ট ছিলেন উনি।নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে প্ল্যান করে এসবের।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্কুলের বাচ্চারা মারা যেতে থাকলে প্রেসিডেন্ট অবশ্যই দেখতে যাবে।আর দেখতে গেলে ভাইরাস আক্রমন করবে প্রেসিডেন্টকে।ভাইরাসটা আক্রমণকারী মারা যাওয়ার পরও জীবিত থাকে।
এতোসব তথ্য ক্যথা থেকে পেলেন জিজ্ঞেস করলেও বলে নি আমাকে।আমিও আর কিছুই বলি নি।বসের অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় এসে প্ল্যান সাজাই।এরপরের দিন কাজে নেমে পড়ি।
এই বাসাটা ভাড়া নিয়েছি এক মাস হলো।নেয়ার কারণ একটাই।"হামিংবার্ড"।লোকটা এই এলাকাতেই থাকে।আমি যে বাসায় ভাড়া নিয়েছি তার ঠিক সামনেই লোকটার বাড়ি।বাইনুকুলার দিয়ে সারাক্ষণ গলায় ঝুলিয়েই রাখি।লোকটা বড়ই ধুরন্ধর।বাড়ির বাইরে এখন পর্যন্ত বের হতে দেখি নি।রাতের বেলা নাইট ভিশন গ্লাস দিয়েও নজর রাখি।কিন্তু,লোকটার ছায়ার দেখাও পাই নি এখনো।অধৈর্য হয়ে যাচ্ছি আস্তে আস্তে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১২ টা বাজে কেবল।ক্ষুধা লেগেছে বেশ।রান্না করাই আছে।খেয়ে নিবো লিনা ভাবছি।আর তখনই নজরে পড়লো এতোদিনের কাংখিত জিনিসের।
"হামিং বার্ড"।
হাতের কাছেই "Dragunov SVD" রাইফেলটা আছে।স্কোপে চোখ রেখেই নিশানা ঠিক করলাম।ট্রিগারে চাপ দিতেই নিঃশব্দে বুলেট বেরিয়ে গেলো।নিজের নিশানার ব্যাপারে আমি ভালোই জানি।বুলেটটা সোজা আঘাত হানবে "হামিং বার্ড"র মাথায়।অব্যর্থ নিশানা।হলোও তাই।
খুশি মনে রুমে এসে রাইফেলের পার্টস খুলে ব্যাগে ভরলাম।জামা কাপড় ব্যাগে ঢুকিয়ে বাথরুমে যেয়ে নিজের ছদ্মবেশ পাল্টালাম।নকল মেকআপ গুলো কমোডে ফেলে ফ্ল্যাস করে দিয়ে বের হয়ে আসলাম।
তালা লাগিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতেই বসকে বিস্তারিত জানালাম সব।ফোনটা কেটে মেইন গেইট দিয়ে বের হতেই পাচজন লোক ঘিরে ধরলো।কোন কিছু বুঝার আগেই মাথায় কি দিয়ে যেনো সজোড়ে আঘাত করলো কেউ।জ্ঞান হারানোর ঠিক আগ মূহুর্তে শুনতে পেলাম কে যেনো বলছে,
"XP we got him"
"XP" আমার বসে নাম।