যারা হলিউডের চলচ্চিত্র সম্পর্কে সামন্যতম খোঁজ-খবর রাখেন তাদের কাছে জর্জ লুকাসের ‘স্টার ওয়ারস’ চলচ্চিত্রটির নাম অজানা নয়। আশির দশকের জনপ্রিয় এ সায়েন্স ফিকশনের তিনটি পর্ব নির্মিত হয়। আর শূন্য দশকে এসে নির্মিত হয় চলচিচত্রটির প্রিক্যুয়েল। এবারও তিনটি পর্বে। এ প্রিক্যুয়েলের তিনটি পর্বে প্রিন্সেস অ্যামিডালা চরিত্রে অভিনয় করে যে মেয়েটি সবার হৃদয়ে জায়গা করে নেয় সে মেয়েটি আজ হলিউডের সত্যিকারের প্রিন্সেস। প্রিন্সেস নাটালি পোর্টম্যান। ড্যারেন অ্যারোনফস্কির ‘ব্ল্যাক সোয়ান’ চলচ্চিত্রে চোখধাঁধানো অভিনয় করে দর্শক, সমালোচক ও বিচারকদের কাছে যিনি অভিনয়ের রাজকুমারী হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন। সেরা অভিনেত্রীর অস্কারসহ জিতে নিয়েছেন এবারের গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা, স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ডের মত সম্মানজনক সব পুরস্কার।
ব্ল্যাক সোয়ানে নাটালির অভিনয়কে একঝাঁক পুরস্কার দিয়ে বোঝালেও কম বলা হবে। স্ক্রিন ইন্টারন্যাশনাল পত্রিকার একজন চলচ্চিত্র সমালোচকের মন্তব্য,
‘ব্ল্যাক সোয়ানে নাটালি পোর্টম্যান যে অভিনয় দেখিয়েছেন তার কোন তুলনা নেই। চলচ্চিত্রটির শেষ দৃশ্যে তার সংলাপের মতই সি ওয়াজ পারফেক্ট। হয়তো তারচেয়েও বেশি। নিনা চরিত্রে নাটালির অভিনয় চলচ্চিত্রে যে নতুন ধারার সৃষ্টি করতে যাচ্ছে তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।’
বাবা-মার একমাত্র সন্তান নাটালি পোর্টম্যান ১৯৮১ সালে ইসরাইলের জেরুজালেমে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম নাটালি হার্শলেগ। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রীপ্রাপ্ত নাটালি ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার প্রতি খুব মনোযোগী ছিলেন। হাই স্কুলের সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য স্টার ওয়ারস চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে পর্যন্ত যেতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিনি বলেছেন,
‘একজন চলচ্চিত্র শিল্পী হওয়ার চেয়ে কলেজে যাওয়া আমি অনেক বেশি জরুরী মনে করি। কলেজ আমার ফিল্ম ক্যারিয়ার ধ্বংস করলেও তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা।’ বুঝুন অবস্থা! চারটি ভাষায় (আরবী, ফ্রেঞ্চ, জাপানী, জার্মান) সমভাবে দক্ষ এ পড়–য়া মেয়েটিই কিনা আজ হলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রী!
নাটালির চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ১৯৯৪ সালে ফ্রেঞ্চ অ্যাকশন মুভি ‘লেওন’ এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। তবে তাকে পরিচিতি এনে দেয় স্টার ওয়ারস। ১৯৯৭ সালে রোমিও-জুলিয়েট চলচ্চিত্রে জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয়ের জন্য মনোনীত হলেও শুধুমাত্র কম বয়সের কারণে বাদ পড়েন। তবে নিজের জাত চেনাতে খুব বেশি দেরি করেননি নাটালি। সে বছরই ‘দি ডায়েরি অব অ্যানা ফ্রাঙ্ক’ ব্রডওয়েতে অ্যানা ফ্রাঙ্কের চরিত্রে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এরপর থেকেই নানা জায়গা থেকে অভিনয়ের ডাক পান। কিন্তু পড়াশুনা চালিয়ে নিতে ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই বেছে বেছে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় অনেক প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। ২০০৪ সালে মাইক নিকোলসের ‘ক্লোসার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুবাদে পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর অস্কার মনোনয়ন পান। অস্কারটা সেবার না জুটলেও একই বিভাগে গোল্ডেন গ্লোবটা ঠিকই জিতে নেন। বছর দুয়েক পর ‘ভি ফর ভ্যানডাটা’ তে ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করে আবারও সবার নজর কাড়েন। ফলস্বরুপ ২০০৮ সালে ৬১তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে সবচেয়ে কমবয়সী বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ব্ল্যাক সোয়ানের এ রাজহংসী। পরিচালকের খাতায়ও নাম লিখিয়েছেন নাটালি। নাটালি পরিচালিত প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ইভ’ এর প্রিমিয়ারের মধ্য দিয়ে ৬৫তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা উঠে।
সম্পূর্ন নিরামিষভোজী পশুপ্রেমী এ মানুষটি পশুর চামড়ায় তৈরি কোন কিছুই পরিধান করেননা। পশু হত্যার বিরুদ্ধে চালিয়ে যাচ্ছেন জোড় আন্দোলন। বিভিন্ন সামাজিক অন্দোলনে জড়িত নাটালি কাজ করছেন দারিদ্র ও ক্ষুধা পরিত্রাণে উগান্ডা, গুয়েতমালা, ইকুয়েডরে শান্তির দূত হিসেবে।
নাটালির বয়স এখন মাত্র ত্রিশ। হাতে যে পরিমাণ সময় ও কাজের প্রস্তাব রয়েছে তাতে হলিউডের এ রাজকুমারী ভবিষ্যতে যে মহারানী হয়ে উঠবেন তা বোধ করি আর না বললেও চলে।#
(১৭ মার্চ ২০১১ দৈনিক সমকালে প্রকাশিত)
***জয়তু দি কিংস স্পিচ, জয়তু কলিন ফার্থ ***
** আমার মুভিবিষয়ক যত পোস্ট **

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




